গাজা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টারের ওপর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি)। আইসিসির এমন রায়ের পর নেতানিয়াহুকে গ্রেফতার করার ব্যাপারে নিজেদের সম্মতি জানিয়েছে ইতালি, নেদারল্যান্ড ও কানাডা।
গাজা যুদ্ধের দায়ে আইসিসির কাছে থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া নেতানিয়াহুকে গ্রেফতার করবে কি-না ইতালি; এ বিষয়ে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী গুইডো ক্রসেটো বলেন, নেতানিয়াহু সফর করলে তার দেশ তাকে গ্রেফতার করতে বাধ্য থাকবে।
রাজনৈতিকভাবে আইসিসির এই সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলেও আদালত ওয়ারেন্ট জারি করায় ইতালি সেটি মানতে বাধ্য সেটাই একরকম জানালেন ক্রসেটো। তার মতে, নেতানিয়াহু এবং গ্যালান্টকে হামাসের মতো একই স্তরে রাখা আইসিসি ‘ভুল সিদ্ধান্ত’ ছিল। তবে যেহেতু গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে কাজেই নেতানিয়াহু বা গ্যালান্টার যদি ইতালিতে আসেন তবে তাদের গ্রেফতার করা হবে।
গাজায় গত ১৩ মাসে ৪৪ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। যার বেশিরভাগ মহিলা এবং শিশু। যার প্রেক্ষিতে আইসিসির এই রায়ের পর নেতানিয়াহুকে গ্রেফতার করতে সম্মত হয়েছে নেদারল্যান্ডস।
ডাচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাসপার ভেল্ডক্যাম্প জানিয়েছেন, নেদারল্যান্ডস নেতানিয়াহুকে গ্রেফতার করবে যদি তিনি ডাচ মাটিতে পা রাখেন। বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে এক প্রশ্নের জবাবে ভেল্ডক্যাম্প বলেন, ‘সরকারের তরফ থেকে লাইন পরিষ্কার। আমরা আইসিসিকে সহযোগিতা করতে বাধ্য… আমরা রোম সংবিধি শতভাগ মেনে চলি।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈদেশিক নীতির প্রধান জোসেপ বোরেল আইসিসির এই রায় নিয়ে জানিয়েছেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা একটি আইনি বিষয়। রাজনৈতিক বিষয় নয়। ইইউয়ের ২৭টি সদস্য দেশ এবং অন্যান্য স্বাক্ষরকারী দেশগুলি যা মানতে বাধ্য।
এদিকে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তার দেশের সমর্থন ও আইসিসির ওয়ারেন্ট মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ যে প্রত্যেকেরই আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা উচিত। সংঘাতের শুরু থেকেই আমরা এটার প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছি। আমরা আন্তর্জাতিক আইনের পক্ষে। আমরা আন্তর্জাতিক আদালতের সমস্ত বিধিবিধান ও রায় মেনে চলব।’
ইসরাইল আইসিসির এখতিয়ার স্বীকার না করলেও এবং নেতানিয়াহু ও গ্যালান্ট আত্মসমর্পণ করবেন না বলে জানালেও তাদের চলাচলের সুযোগ সংকুচিত হয়ে গেছে।
আইসিসির প্রতিষ্ঠাতা চুক্তি রোম সংবিধির আওতায় ১২৪টি দেশ রয়েছে। আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করতে এসব দেশ বাধ্য।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী জোনাথন কুটাব বলেছেন, আইন তৈরি হয় এ ধারণার ওপর ভিত্তি করে যে মানুষ তা মেনে চলবে। যারা আইন অমান্য করে, তারা নিজেরাই অপরাধ করছে।
কুটাব আরও বলেন, ইসরাইলের মিত্র দেশগুলোর মধ্যে অনেকেই, বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরা, পরোয়ানা কার্যকরে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
নেতানিয়াহু এই অভিযোগগুলোকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে অভিহিত করেছেন।
আইসিসির পরোয়ানা জারির পর নেতানিয়াহু এবং গ্যালান্ট যেসব দেশে গ্রেফতার হতে পারেন সেগুলো হলো:
আফগানিস্তান
আলবেনিয়া
অ্যান্ডোরা
অ্যান্টিগুয়া এন্ড বারবুডা
আর্জেন্টিনা
আর্মেনিয়া
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রিয়া
বাংলাদেশ
বার্বাডোজ
বেলজিয়াম
বেলিজ
বেনিন
বলিভিয়া
বসনিয়া এন্ড হার্জেগোবিনা
বতসোয়ানা
ব্রাজিল
বুলগেরিয়া
বুরকিনা ফাসো
ক্যাপভার্দে
কম্বোডিয়া
কানাডা
সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক
চাদ
চিলি
কলম্বিয়া
কমোরোস
কঙ্গো
কুক আইল্যান্ড
কোস্টারিকা
আইভরিকোস্ট
ক্রোয়েশিয়া
সাইপ্রাস
চেক রিপাবলিক
ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো
ডেনমার্ক
জিবুতি
ডমিনিকা
ডমিনিকান রিপাবলিক
ইকুয়েডর
এল সালভেদর
এস্তোনিয়া
ফিজি
ফিনল্যান্ড
ফ্রান্স
গ্যাবন
গাম্বিয়া
জর্জিয়া
জার্মানি
ঘানা
গ্রিস
গ্রেনাডা
গুয়েতেমালা
গিনি
গায়ানা
হন্ডুরাস
হাঙ্গেরি
আইসল্যান্ড
আয়ারল্যান্ড
ইতালি
জাপান
জর্ডান
কেনিয়া
কিরিবাতি
লাটভিয়া
লেসোথো
লাইব্রেরিয়া
লিচেনস্টাইন
লিথুনিয়া
লুক্সেমবার্গ
মাদাগাস্কার
মালাবি
মালদ্বীপ
মালি
মাল্টা
মার্শাল আইল্যান্ড
মরিশাস
মেক্সিকো
মঙ্গোলিয়া
মন্টিনিগ্রো
নামিবিয়া
নাউরু
নেদারল্যান্ড
নিউজিল্যান্ড
নাইজার
নাইজেরিয়া
নর্থ মেসিডোনিয়া
নরওয়ে
পানামা
প্যারাগুয়ে
পেরু
পোল্যান্ড
পর্তুগাল
দক্ষিণ কোরিয়া
রিপাবলিক অব মালদ্বীপ
রোমানিয়া
সেইন্ট কিটস এন্ড নেভিস
সেইন্ট লুসিয়া
সেইন্ট ভিনসেন্ট এন্ড দ্য গ্রেনাডাইন্স
সামোয়া
সান মেরিনো
সেনেগাল
সার্বিয়া
সিচিলিস
সিয়েরালিওন
স্লোভাকিয়া
স্লোভেনিয়া
সাউথ আফ্রিকা
স্পেন
ফিলিস্তিন
সুরিনাম
সুইডেন
সুইজারল্যান্ড
তাঞ্জানিয়া
তাজিকিস্তান
তিমুর লিস্ত
ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগো
তিউনিশিয়া
উগান্ডা
যুক্তরাজ্য
উরুগুয়ে
ভানুয়াতু
ভেনেজুয়েলা
জাম্বিয়া