দেশ থেকে ইতালি গিয়ে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর কিছু প্রবাসী বাংলাদেশি সে দেশের সরকারি ব্যবস্থাপনার আইসোলেশন থেকে বের হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, ইতালির সরকার বাংলাদেশ থেকে গিয়ে করোনাভাইরাস শনাক্ত প্রায় ১০০ বাংলাদেশির সহায়তায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
“তাদের অধিকাংশকে ইতালির সরকারের খরচে হোটেলে আইসোলেশনে রাখাসহ প্রয়োজন অনুসারে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশিদের কয়েকজন ইতালি সরকারের সিদ্ধান্ত এবং কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন নির্দেশনা অমান্য করেন।”
এভাবে সরকারি বিধি-নিষেধ অমান্য করে তারা সে দেশে বসবাসরতদের করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ‘ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছেন’ বলে উল্লেখ করা হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ‘ভুলভাবে’ প্রকাশিত হয়েছে দাবি করে তার ব্যাখ্যা দিতে এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়, “গত মার্চ মাসে ইতালি থেকে দেশে ফিরে কিছু্ ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশি একই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করেন এবং বাংলাদেশে কোয়ারেন্টিন নির্দেশনা অমান্য করেন, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “ইতালির সংবাদপত্রে ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশিদের করোনা বিষয়ক অবাধ্য আচরণ স্থান পেয়েছে। ফলে ইতালির নাগরিকদের সেদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের প্রতি অবিশ্বাস ও অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে। সে দেশের একটি পত্রিকায় ‘বাংলাদেশি ভাইরাস বোমা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।”
আটকেপড়া লাখো প্রবাসী শ্রমিক চরম অনিশ্চয়তায়
সেখানে বাংলাদেশের সংবাদপত্রে এই বক্তব্যকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তের বক্তব্য বলে চালিয়েছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “ইতালির প্রধানমন্ত্রী স্পেনের টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি ‘ভাইরাস বোমা’ শব্দটি ব্যবহার করেননি।
“দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের ওপর প্রভাব পড়ে সে রকম কোনো ধরনের সংবাদ পরিবেশন না করার জন্য বাংলদেশি গণমাধ্যমকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। এ ধরনের সংবাদ পরিবেশনে সংবাদের সঠিকতা যাচাই করা উচিত।”
ইতালির প্রধানমন্ত্রী স্পেনের একটি টেলিভিশনকে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটির কিছু অংশও উল্লেখ করা হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে।
“সম্প্রতি স্পেন সফরকালে স্পেনের টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইতালির প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ থেকে একটি বিমান ইতালির রোম বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর টেস্টে ২০ শতাংশ যাত্রীর করোনাভাইরাস পজিটিভ আসে।”
কোভিড-১৯: বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের ফ্লাইট বন্ধ করল ইতালি
তাকে উদ্ধৃত করে আরও বলা হয়, “ইতালিতে করোনাভাইরাস যেন আবার কঠিন ভয়াবহ অবস্থায় না পৌঁছায় সেজন্য বাংলাদেশের বিমান বন্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর ১২টি দেশের বিমান সেদেশে প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে।”
গত ফেব্রুয়ারিতে যখন ইতালিতে ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে সে সময় বাংলাদেশে এই রোগ পৌঁছায়নি। তখন ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে দলে দলে প্রবাসীরা ফিরতে শুরু করে।
এক ভোরে ইতালি থেকে ফেরা কয়েকশ’ প্রবাসীকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য বিমানবন্দর সংলগ্ন আশকোনা হজক্যাম্পে নেওয়ার পরও তাদের বিক্ষোভের মুখে ছেড়ে দেয় সরকার। ওই প্রবাসীদের বাসায় ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়।
এর কিছু দিন পরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দিতে শুরু করে। পরে ইতালি অতি সংক্রামক এই রোগের বিস্তারে লাগাম পরাতে পারলেও ধুঁকছে বাংলাদেশ।
বৈশ্বিক করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকার পর গত মাসের মাঝামাঝিতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হওয়ার পর ইতালিতে ফিরতে শুরু করেন প্রবাসীরা। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে হাজারখানেক বাংলাদেশি ইতালিতে পৌঁছেছেন, তাদের মধ্যে একটি বড় অংশের করোনাভাইরাস ধরা পড়ায় গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের ফ্লাইট বন্ধ করে ইতালি।
এরপর গত বুধবার দেড় শতাধিক বাংলাদেশি কাতার এয়ারওয়েজের দুটি ফ্লাইটে ইতালিতে পৌঁছালে তাদের উড়োজাহাজ থেকে নামতে দেওয়া হয়নি। ওই দুই বিমানে করেই তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।