সব মানুষ ক্ষণজন্মা হয় না। ‘কর্ম’ মানুষকে ক্ষণজন্মা করে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা ইতিহাস-ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন আজ। বহুমাত্রিক কর্মযজ্ঞের প্রাণশক্তি শেখ হাসিনার জন্মদিনের শুভক্ষণে তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।
১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুকে চোখে দেখেছি, ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস ময়দানের জনসভায়। সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এইচএম কামরুজ্জামান সবাইকে চোখে দেখেছি। কিন্তু কারও ছোঁয়া বা স্পর্শ পাইনি। ২০০১ সালে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচন কমিশনের সবাইকে নিয়ে একদিন জাতীয় সংসদের তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাই। সেদিন নেত্রীকে কাছে পেয়ে অনেক কথা বলেছিলাম। তিনি মন দিয়ে আমার সব কথা শুনছিলেন। পরে চলে আসার সময় সালাম করে বিদায় চাইলে তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন। সেই মুহূর্তে আমার অনুভূতি ছিল, তার ছোঁয়া যেন আমার দেহে-মনে বাংলাদেশের ইতিহাস মেখে দিচ্ছিল। মাথা তুলে তাকিয়ে তার চোখে যে ‘জ্যোতি’ দেখেছিলাম তা আমার অন্তরাত্মাকে আলোকিত করেছিল। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘তোমারে করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা/এ সমুদ্রে আর কভু হবো নাকো পথহারা।’ মুহূর্তের জন্যও দিশেহারা হননি। মাঝেমধ্যে আমার নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়। বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি, কিন্তু তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার আশীর্বাদ পেয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেকগুলো কারণে চিরস্মরণীয়-বরণীয় হয়ে থাকবেন। ব্যক্তি হিসেবে তিনি অত্যন্ত স্বচ্ছ, সংবেদনশীল, মানবিক। নেতা হিসেবে দৃঢ়চেতা, দূরদর্শী। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। তার কূটনৈতিক দূরদর্শিতা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। আর সে কারণেই চীন বিনামূল্যে লাখ লাখ ভ্যাকসিন দেয়, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিনা দাওয়াতে বারবার বাংলাদেশে বেড়াতে আসেন। ভারতীয় কূটনীতিকরা দ্রুততম সময়ে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর করার পরামর্শ দিচ্ছেন। আমেরিকা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার জন্য এক পায়ে খাড়া বলে নিজে থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে জানায়। করোনা মহামারীর এই সময়ে পৃথিবীর বৃহৎ শক্তিগুলো যেখানে অর্থনৈতিকভাবে বিধ্বস্ত, সেখানে বাংলাদেশ শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। এডিবি তাদের সর্বশেষ রিপোর্টে বলেছে, বাংলাদেশ দ্রুত সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এই ছোট্ট দেশটি আজ তার বিপুল জনসম্পদ নিয়ে সম্ভাবনার এক জনপদ।
১৯৯৬ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ক্রমাগত উন্নতি ও সমৃদ্ধি ঘটতে শুরু করে। সেই হিসেবে সমৃদ্ধির এই যাত্রা খুব বেশিদিনের নয়। এই সময়ে বাংলাদেশের সাফল্য সারা বিশ্বে নজিরবিহীন। গেল বছর জাতিসংঘের ৭৪তম অধিবেশনে যোগদানের সুযোগ হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে আমেরিকা গিয়েছিলাম। জাতিসংঘের ওই অধিবেশনে সারা বিশ্বের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা যোগ দিয়েছেন। সেখানে এক সময়ের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের বাংলাদেশের সরকারপ্রধান এবং তার সফরসঙ্গীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হওয়ার কথা যেনতেন কোথাও। কিন্তু বাস্তব চিত্র ছিল ভিন্ন। নিউইয়র্কের ঐতিহ্যবাহী গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে বাংলাদেশিদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। মার্কিন প্রশাসন অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় বাংলাদেশিদের।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর থাকার স্থান ছিল অভিজাত হোটেল লোটে নিউইয়র্ক প্যালেসে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে ওই হোটেলেই অবস্থান করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ওই সম্মেলনে আসা রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সম্মানে জাতিসংঘ সদর দফতরে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন সংস্থার মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজ। নর্থ ডেলিগেটস লাউঞ্জের মধ্যাহ্নভোজে জাতিসংঘ মহাসচিব নিজ টেবিলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের নিয়ে বসেছিলেন। ওই টেবিলে ডোনাল্ড ট্রাম্প, অ্যাঙ্গেলা মের্কেলের পাশে বসেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনো সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের জায়গা হয়নি ওই টেবিলে। এমনকি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদের মতো গুরুত্বপূর্ণ নেতাও ওই টেবিলে আমন্ত্রিত হননি। আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সম্মানে নৈশভোজ দিলেন, সেখানেও গুরুত্ব পেয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাছাড়া শেখ হাসিনার সঙ্গে তার হোটেলে সাক্ষাৎ করতে যান বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি বিল গেটস।
রাষ্ট্র পরিচালনায় শেখ হাসিনার অসামান্য অবদান ও কৃতিত্বের কারণে জাতিসংঘ অধিবেশনে তার হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল দুটি পুরস্কার। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ সম্মাননায় ভূষিত করে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন্স অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন। এই পুরস্কার তার হাতে তুলে দেন বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাতিমান এনগোজি ওকোনজো-আইয়েলা। তিনি শেখ হাসিনাকে যেসব বিশেষণে প্রশংসা করেছিলেন তা সত্যিই অবিস্মরণীয়। ভ্যাকসিন হিরো ছাড়াও তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ’ সম্মাননায় ভূষিত করে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ।
এ দুটি পুরস্কার একসঙ্গে পাওয়া বিরল ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে প্রবাসী বাংলাদেশিদের যে মর্যাদা বেড়েছে তার প্রমাণ মেলে বহুমাত্রিকভাবে। আমেরিকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত বাংলাদেশি একাধিক লোককে দেখেছি সচ্ছন্দে মার্কিনিদের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে। তাদের আচার-আচরণে বাংলাদেশি সহকর্মীদের প্রতি সম্মান ও মর্যাদার বিষয়টিও প্রত্যক্ষ করেছি। অধিবেশনে যোগ দেয়া রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বিশ্ব নেতৃবৃন্দ যে আগ্রহ দেখিয়েছেন, গুরুত্ব দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেছেন, খানিকটা দূর থেকে নিজের চোখে সবকিছু দেখেছিলাম। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপচারিতায় শেখ হাসিনার বডি ল্যাংগুয়েজ দেখে আমার কাছে নরেন্দ্র মোদি বা ইমরান খানের চেয়েও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বেশি আত্মপ্রত্যয়ী মনে হয়েছিল। অধিবেশন চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরতিহীন প্রোগ্রাম করেছেন। সফরসঙ্গী সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছুটতে ছুটতে টায়ার্ড হয়ে গেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একের পর এক কাজ করে গেছেন। তার এই বিরতিহীন ছুটে চলায় বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত।
দেশের অর্থনীতি এখন মোটামুটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। প্রবৃদ্ধি ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে। এর মূল কারণ হচ্ছে দূরদর্শী নেতৃত্ব ও সুদক্ষ ব্যবস্থাপনা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। করোনাকালীন ধনী দেশগুলো যেখানে তাদের অর্থনীতিকে সচল রাখতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অবিশ্বাস্যভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী বছর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোগত উন্নয়নে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
কিন্তু এতকিছুর পরও কিছু সমস্যা আছে যা বিতর্কের জন্ম দেয়। বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, দেশপ্রেমিক আমলাতন্ত্র ও দেশপ্রেমিক পুঁজির সংকট। বাংলাদেশে সব আছে, শুধু এ দুটির সংকট রয়েছে। একটি দেশ ও জাতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশপ্রেমিক আমলাতন্ত্র ও দেশপ্রেমিক পুঁজি খুবই জরুরি। এ দুটি থাকলে রাষ্ট্র ও সমাজজীবনে অনাচার কম হয়। দেশপ্রেমিক আমলাতন্ত্র দুর্নীতি ও অনাচার রোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আর দেশপ্রেমিক পুঁজি সাধারণ মানুষের জীবনযাপন স্বাভাবিক রাখায় বাজার নিয়ন্ত্রণসহ শ্রমের ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে পারে। তাতে মানুষের মানবাধিক নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না। যদিও পৃথিবীর দেশে দেশে মানুষে মানুষে ধর্মে গোত্রে সমাজে মানবাধিকারে ভিন্নতা আছে। সে কারণেই একেক দেশে মানবাধিকার ও বস্তুনিষ্ঠতার একেক রূপ দেখা যায়। ইউরোপীয় সমাজে যা বস্তুনিষ্ঠ, আমাদের সমাজে তা অনাচার-অনধিকার। সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠতার মানদণ্ডকে সামনে রেখে কাজ করে, কথা বলে। কিন্তু এই বস্তুনিষ্ঠতার আড়ালে অনাচার-অনধিকার প্রশ্রয় পায় কিনা তা হয়তো অনেক সময় লক্ষ করে না। কিন্তু আজকের দিনের বাস্তবতায় সাংবাদিকদের সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। না রাখলে দেশ ও জাতির সঙ্গে গাদ্দারি করা হবে। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভে লোক হিসেবে রাষ্ট্রের দেয়া মর্যাদার অবমাননা করা হবে। সুতরাং সে বিবেচনা থেকে আজ ও আগামীর বাংলাদেশের জন্য সাংবাদিকদের চারটি বিষয় মাথায় রেখে বস্তুনিষ্ঠ দায়িত্ব পালন করতে হবে-
সর্বপ্রথম, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে কোনো আপস নেই। কারণ, বাংলাদেশটা আকাশ থেকে পড়েনি। এটি সৃষ্টি হয়েছে। এই সৃষ্টির পেছনে দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। একজন মানুষ সারাজীবন এদেশের স্বাধীনতার জন্য জীবনপণ সংগ্রাম করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন। সুতরাং এ নিয়ে কোনো ভিন্ন যুক্তি থাকতে পারে না। এখানে একনিষ্ঠতাই বস্তুনিষ্ঠতা।
দ্বিতীয় হচ্ছে ‘মুক্তিযুদ্ধ’। ভারত-পাকিস্তানের মতো আলোচনার টেবিলে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ লড়াই করে দেশটা স্বাধীন করেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন, ২ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন। বুদ্ধিজীবীরা জীবন দিয়েছেন। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, গৌরব গাথা ও চেতনার প্রশ্নে আপস করার কোনো সুযোগ নেই। এখানেও একনিষ্ঠতাই বস্তুনিষ্ঠতা, মানবাধিকার।
তৃতীয় হচ্ছে ‘অসাম্প্রদায়িক সমাজ-রাষ্ট্র’। হাজার বছর ধরে গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ অঞ্চলের এই ভূখণ্ডে সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রেখে বাঙালির জীবন-সংগ্রামের ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব বাঙালি মিলে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। সুতরাং বাঙালির জাতিগত এই ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে কোনো আপস বা ভিন্ন কোনো যুক্তি নেই। এ প্রশ্নে বস্তুনিষ্ঠতা হচ্ছে একনিষ্ঠতা।
সর্বশেষ হচ্ছে ‘উন্নয়ন’। মাত্র ৪৯ বছরের বাংলাদেশ প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকাসহ অনেক দেশকে পেছনে ফেলে অর্থনৈতিক সূচকসহ বিভিন্ন সূচকে বহুদূর এগিয়ে গেছে। এক সময়ের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে খ্যাত বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের একটি সক্ষম রাষ্ট্র। উন্নত দেশের মহাসড়কের যাত্রী। আমাদের বর্তমান সন্তান-সন্ততিদের ভবিষ্যৎ সুখী-সমৃদ্ধ জীবনের জন্য উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। সুতরাং মানবাধিকারের অজুহাতে এর বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক যুক্তি, সামাজিক ন্যায়বিচারের বাহানা গ্রহণযোগ্য নয়। এখানেও বস্তুনিষ্ঠতা হচ্ছে উন্নয়নের পক্ষে একনিষ্ঠতা।
এই চারটি আদর্শে যারা বিশ্বাস করে না তারা রাষ্ট্রদ্রোহী। রাষ্ট্রদ্রোহীর কোনো মানবাধিকার নেই, থাকতে পারে না। এই চার বিষয়কে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রেখে যত খুশি বস্তুনিষ্ঠ হয়ে সাংবাদিকতা করুন, কোনো অসুবিধা নেই। কারণ, এই চারটি বিষয় ঐতিহাসিকভাবে মীমাংসিত। বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই। আশপাশে অসংখ্য নজির আছে। গান্ধীজিকে ভারত সরকার জাতির পিতার মর্যাদা দেয়। গান্ধীজি অসাম্প্রদায়িক, অহিংস রাজনীতির পুরোধা। কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা। কিন্তু আজকের ভারত শাসন করছে কট্টর হিন্দু মৌলবাদী রাজনৈতিক দল বিজেপি। কিন্তু তারা গান্ধীজিকে ফেলে দেয়নি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সময় পেলেই রাজঘাটে গিয়ে প্রার্থনা করেন। অপরদিকে পাকিস্তানের মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ইসলামিক রিপাবলিক পাকিস্তানের জাতির পিতা। তার দল মুসলিম লীগ। পাকিস্তানের রাজনীতিতে এখন আলেমুল গায়েব হয়ে গেছে। জিন্নাহর চিন্তা-চেতনাবিরোধী জুলফিকার আলী ভুট্টোর পিপলস পার্টি বহুদিন পাকিস্তান শাসন করেছে। জিন্নাহর মুসলিম লীগ ভেঙে টুকরো টুকরো। পাকিস্তানে এখন অনেক নতুন দলের জন্ম হয়েছে। কিন্তু তারাও জিন্নাহকে ফেলে দেয়নি, অমর্যাদা করে না। পৃথিবীতে এ রকম অসংখ্য নজির রয়েছে। সুতরাং কিছু লোকের প্রতিহিংসার কারণে জাতির গৌরবের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ম্লান হতে দেয়া যাবে না। জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ঊর্ধ্বে রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সুদূরের যাত্রী। ছোট্ট এ দেশের পাশে এখন পৃথিবীর বড় শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো থাকতে চায়। সবার আগ্রহের কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দূরদর্শী নেতৃত্ব ও দেশাত্মবোধ বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের প্রাণশক্তি। তাই আজ তার জন্মদিনের শুভক্ষণে আগামীর বাংলাদেশের জন্য ইতিহাস ও ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার ক্ষণজন্মা শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনায় নিরন্তর প্রার্থনা।
মোল্লা জালাল : সিনিয়র সাংবাদিক; সভাপতি, বিএফইউজে