রাজনীতির রহস্যপুরুষ সিরাজুল আলম খানের ‘ইতিহাস বিকৃতি’র জবাব দেবে আওয়ামী লীগ। দলের পক্ষ থেকে উপদেষ্টা পরিষদের দুই সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ এই দায়িত্ব পালন করবেন। এই দুই নেতা গণমাধ্যমে প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করবেন।
গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সাবেক দুই মন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ এ বৈঠকে ‘আমি সিরাজুল আলম খান :একটি রাজনৈতিক জীবনালেখ্য’ গ্রন্থ নিয়ে আলোচনা করার সময় ইতিহাস বিকৃতির বিষয়টি তুলে ধরেন।
তারা বলেছেন, সিরাজুল আলম খানের বইটি মিথ্যা তথ্যে ভরা। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বইটিতে সম্পূর্ণ অসত্য তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আমিত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই নেতার বক্তব্যের সঙ্গে একমত হন। পরে ইতিহাসের সত্য ঘটনা গণমাধ্যমে তুলে ধরার জন্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়।
শাজাহান খানের ওপর নাখোশ প্রধানমন্ত্রী :বৈঠকে আগামী ১৮ জুন অনুষ্ঠেয় ১২ উপজেলার নির্বাচনে বেশ কয়েকটি উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থীদের অবস্থান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই সঙ্গে কোনো কোনো উপজেলায় দলের এমপিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থন দেওয়া এবং এ নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার বিষয়টি উঠে আসে।
বৈঠকে বলা হয়েছে, মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে সদর উপজেলা নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেলেও এই সিদ্ধান্ত মানছেন না সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। এমপি হওয়ার পরেও দলীয় সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে তিনি তার সহোদর অ্যাডভোকেট ওবায়দুর রহমান খান কালুকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। প্রকাশ্যেই স্থানীয় প্রশাসনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিস্ময় প্রকাশ করে জানতে চেয়েছেন, শাজাহান খান কেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন? তিনি কেন দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন? প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় প্রশাসনের ওপর হস্তক্ষেপের ঘটনায় বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অ.) ফারুক খান, কার্যনির্বাহী সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য রাশিদুল আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ূয়া।
বৈঠকে অংশ নেওয়া কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচনে কিছুতেই বিদ্রোহ থামছে না। বিশেষ করে অনেক এমপিই দলের সিদ্ধান্ত মানছেন না। তাদের কেউ কেউ প্রকাশ্যেই বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন করছেন। এ নিয়ে দলের ভেতরে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছেন। বৈঠকে বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে।