রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ‘অবহেলায়’ পদার্থবিজ্ঞানী ইমেরিটাস অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাকের জমি ১৮ বছর ধরে দখল করে রেখেছেন একটি ওয়াকফ্ এস্টেটের মোতোয়ালি।
সাগরপাড়া ওয়াকফ্ এস্টেটের মোতোয়ালি ইয়াহিয়া ফেরদৌসের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া তিনি মামলা করে এই অধ্যাপককে হয়রানি করেছেন, যা মামলার ফলাফলে দৃশ্যমান।
অরুণ কুমার বসাক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক।
অরুণ বলেন, ফেরদৌস তার প্রতিবেশী। গত মে মাসে ফেরদৌস আইনি লড়াইয়ে হেরে দখলকৃত জমিতে নির্মিত একটি অবকাঠামো অপসারণে বাধ্য হন। তবে এখনও জমির দখল ছাড়েননি ফেরদৌস। গ্রিল দিয়ে জমিটি ঘিরে রেখেছেন।
৮২ বছর বয়সী এই শিক্ষাবিদকে ১৮ বছর ধরে হয়রানি করছেন ফেরদৌস।
অধ্যাপক অরুণ বলেন, তিনি পড়াশোনা আর গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। সম্পত্তি দেখাশোনা করতে পারেননি।
“সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন আমার প্রতিবেশী ফেরদৌস। এখন আমি নিজের বাড়িতেই অনিরাপদ বোধ করি। এর সমাধান খুঁজতে আমি দুয়ারে দুয়ারে গিয়েছি। কিন্তু লাভ হয়নি। কেউই আমাকে সাহায্য করেননি।”
বসতবাড়ির এই জমিটি তার স্ত্রী দেবিকা বসাকের নামে ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২০ সালের নভেম্বর দেবিকার মৃত্যুর পর নিঃসন্তান অধ্যাপক অরুণ জমিটির মালিকানা পান।
“২০০৩ সালে ফেরদৌস তার নিজের জমিতে দ্বিতল ভবন নির্মাণের সময় আমার জমির সীমানা প্রাচীর ভেঙে দুই ফুট ভেতরে এসে ভবনের অংশবিশেষ নির্মাণ করেন।”
অরুণ বলেন, “নির্মাণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন দেবিকা। ফেরদৌসের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে আরডিএ সময় নেয় সাত মাস। তত দিনে জমির একটি অংশ দখল করে ফেরদৌস ভবন নির্মাণ সম্পন্ন করেন।
“অবৈধ স্থাপনা অপসারণের জন্য ফেরদৌসকে চূড়ান্ত নোটিশ দিতে আরডিএ আরও সময় নেয়। ২০০৮ সালের মে মাসে সেই নোটিশ দেয়। ফেরদৌস সেই সিদ্ধান্তকে রাজশাহীর আদালতে চ্যালেঞ্জ করেন। একই সঙ্গে দেবিকার বিরুদ্ধে ওয়াকফ্ এস্টেটের জমি দখলের অভিযোগ আনেন ফেরদৌস। আদালত এই অভিযোগ খারিজ করে দেয়। ২০১৪ সালে ফেরদৌস আপিল করলে জেলা আদালত বাদিকেই ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করে।”
এরপর ২০১৭ সালে ফেরদৌস মামলাটি উচ্চ আদালতে নিয়ে যান।
অরুণ বলেন, “২০২০ সালের জানুয়ারি উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখে এবং রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকে বৈধতা দেয়। একই রায়ে উচ্চ আদালত ফেরদৌসকে দেবিকার কাছে ক্ষমা চাইতে এবং অধ্যাপক অরুণ ও তার পরিবারকে হয়রানি না করার প্রতিশ্রুতি দিতে বলে।”
উচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী ২০২০ সালের অক্টোবর ফেরদৌস তার অবৈধ অবকাঠামো সরিয়ে নিলেও এখনও জমির ওই অংশের দখল ছাড়েননি। তিনি জায়গাটির চারপাশে ধাতব গ্রিল ও গাছ লাগিয়ে রেখেছেন। এটা নিয়ে অধ্যাপক অরুণ রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানালেও কোনো প্রতিকার পাননি।
তবে ফেরদৌস সাংসাদিকদের বলেন, “আদালত আমাকে বলেছে অধ্যাপক অরুণকে সন্তুষ্ট রাখতে। আমি গাছগুলো কেটে ফেলব।”
ফেরদৌস দাবি করেন, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের পরামর্শমতই তিনি মামলাটি করেছিলেন।
রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল তারিকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।