পুরানো ইয়াবা ব্যবসায়ীরাই রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে নতুন মাদক আইস নিয়ে আসছে দেশে। এ মাদকে যুক্ত হচ্ছে বিত্তশালীরা। ধনাঢ্য পরিবারের বিদেশ থেকে এমবিএ ও বিবিএ করে আসা সন্তানরাও রাজধানীর অভিজাত এলাকায় করছেন মাদকের কারবার। তারা সেবনের পাশাপাশি ভয়ানক মাদক আইস কারবারের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন।
গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশান, বনানী, রমনা ও ভাটারা এলাকায় কয়েক দফা চালিয়ে ধারাবাহিক অভিযানে ওই ৫ আইস ব্যবসায়ী ও সেবনকারীকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারা হলেন-জাকারিয়া আহমেদ অমন, তারেক আহম্মেদ, সাদ্দাম হোসেন, শহীদুল ইসলাম খান ও জসিম উদ্দীন। তাদের কাছ থেকে ৫৬০ ক্রিস্টাল মেথ (আইস), ১ হাজার ২০০ পিস ইয়াবা ও ২টি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত আইস ও ইয়াবার বাজারমূল্য কোটি টাকার বেশি বলে জানানো হয়েছে।
শুক্রবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ডিএনসির ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের (উত্তর) অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
ডিএনসির অতিরিক্ত পরিচালক বলেন, গত ২১ আগস্ট প্রায় আধা কেজি আইসসহ বনানী-উত্তরা থেকে ১০ সদস্যের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন গোয়েন্দা কৌশল ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে গুলশান, ভাটারা, কুড়িল, রমনা এলাকায় আইসের আরও একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক শনাক্ত করা হয়। রমনা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জাকারিয়া আহমেদ অমনকে পাঁচ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ গ্রেফতার করা হয়। জাকারিয়ার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গুলশান বারিধারা দূতাবাস এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তারেক আহম্মেদকে পাঁচ গ্রাম আইস ও একশ পিস ইয়াবা ও একটি প্রাইভেটকারসহ গ্রেফতার করা হয়। জাকারিয়া ও তারেকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সাদ্দাম হোসেনকে ৯০ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইচ ও চারশ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়।
পরবর্তীতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে শহীদুল ইসলাম খানকে একই এলাকা থেকে দুইশ গ্রাম আইস ও ৫০০ পিস ইয়াবা, একটি প্রাইভেটকারসহ গ্রেফতার করা হয়। তাকে তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ভাটারার জোয়ার সাহারা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জসিম উদ্দিনকে ২৬০ গ্রাম আইস ও দুইশ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করা হয়।
মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকায় গডফাদার কতজন? সবাইকে গ্রেফতার করা হচ্ছেনা কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তালিকাটি তৈরি করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে গডফাদার কতজন সেটি বলাটা কঠিন। তবে, গডফাদাররা মাদকের পেছনে টাকা বিনিয়োগ করলেও তাদের কাছে কোনো মাদক থাকেনা। ফলে আইন অনুযায়ী তাদেরকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়না। তালিকাভুক্তদের গ্রেফতার দ্রুতই অভিযান শুরু করা হবে বলে জানান ডিএনসি কর্মকর্তা।
লাভ বেশি হওয়ায় পুরোনো সব ইয়াবা ব্যবসায়ী আইস ব্যবসার দিকে ঝুঁকছে জানিয়ে ফজলুর রহমান বলেন, মিয়ানমার থেকেই আইসের চালান প্রবেশ করছে। যে রুট দিয়ে ইয়াবা আসে, একই রুট দিয়ে আনা হচ্ছে আইস। আইস আনতে ব্যবহার করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। ইয়াবার চেয়ে আইসের দাম বেশি হওয়ায়, রোহিঙ্গাদের আইসের চালান আনতে বেশি টাকা দেওয়া হচ্ছে। এতে উৎসাহী হয়ে রাতের আধারে আইসের চালান দেশে আনছে রোহিঙ্গারা। এছাড়াও নাফ নদী দিয়েও আসছে চালান। গভীর সমুদ্রে হাতবদল করে এসব চালান দেশে প্রবেশ করছে। পরে হাত বদল হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানীসহ সারাদেশে। রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় আইসের সিন্ডিকেট গড়ে উঠলেও ইয়াবার মতো বিস্তার ঘটেনি বলে দাবি করেছেন ফজলুর রহমান।
ডিএনসি কর্মকর্তারা বলেন, গ্রেফতার ৫ জনই ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। এদের মধ্যে জাকারিয়া রহমান অমন অষ্ট্রেলিয়া থেকে বিবিএ করে দেশে ফেরেন। তার দুই বোন বর্তমানে বিদেশে বিবিএ পড়ালেখা করছেন। তারেক ইংল্যান্ড থেকে বিবিএ শেষ করেছেন। তার বাবা সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন। বারিধারায় তাদের নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। সাদ্দাম নিজে সিএনএফ ব্যবসায়ী। তার বাবাও দীর্ঘদিন ধরে সিএনএফ ব্যবসা করে আসছেন।
শহীদুলের বাবা ভালো মানের একজন ব্যবসায়ী। আর জসিমের নিজের দুইটি ৬ তলা বাড়ি ও একটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। পরিচিত এক লোকের মাধ্যমে আইস কারবারে জড়িয়ে পড়েন জসিম। নিজের বাড়ি ও রেস্টুরেন্ট থাকলেও জসিম ভেবেছিলেন আইসের একটি বড় চালান সাপ্লাই দিতে পারলে তিনি একটি গাড়ি কিনতে পারবেন। শুধু জসিমই নয়, গ্রেফতার কারো আর্থিক সঙ্কট না থাকলেও সবাই লোভে পড়ে আইস ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। আগেও আইস সিন্ডিকেটের যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারাও ধনাঢ্য পরিবারের বলে জানিয়েছিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।