ঈদের আগের দিন তোরণ নির্মাণকে কেন্দ্র করে পটুয়াখালীতে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষে এক যুবলীগ কর্মী নিহত হয়েছেন।
রোববার রাত ৮টার দিকে বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি বলে জানায় পুলিশ।
নিহত যুবলীগ কর্মী তাপস দাস (৩৪) উপজেলার কালাইয়া এলাকার বদু দাসের ছেলে।
রোববার দুপুরে বাউফল উপজেলায় থানার সামনের সড়কে দফায় দফায় দুই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। পরে পুলিশের লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আহত নেতা-কর্মীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে তাপস দাসকে বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নেওয়া হয়।
পটুয়াখালী বাউফল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন বলেন, তোরণ নির্মাণকে কেন্দ্র করে রোববার দুপুরের দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাপস দাস নামের একজন মারা গেছেন।
আহত দু’জনকে বরিশালে পাঠানো হয়েছিল। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলেন তিনি।
তিনি জানান, প্রথমে সংঘর্ষের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পৌর মেয়র ও চেয়ারম্যান ইব্রাহিম ফারুককে নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে যেখানে ঝামেলা হয় তার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে দু’পক্ষ তোরণ নির্মাণ করবে। এরইমধ্যে ফের সংঘর্ষে বাধলে লাঠিচার্জ করে দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে বাউফল থানার সামনের সড়কে ডাকবাংলো সংলগ্ন স্থানে স্থানীয় এমপি আ স ম ফিরোজের পক্ষের তোরণ ভেঙে যায়। সেখানে বাউফল পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক জুয়েলের পক্ষের তোরণ নির্মাণ করতে গেলে এ দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় বলে এ দলের একাধিক নেতাকর্মী বলছেন।
পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নাজিরপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ইব্রাহিম ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, থানা ডাকবাংলোর সামনে সেতুর মুখে তারাই (আ স ম ফিরোজ) তোরণ নির্মাণ করে আসছেন। আর পৌর মেয়রের তোরণ থানার পশ্চিম পাশে করে আসছে।
“তাহলে হঠাৎ করে কেন তারা কোন কারণে আমাদের স্থানে তোরণ নির্মাণ করতে এলো তা জিজ্ঞাসা করতেই মেয়র সমর্থিত নেতাকর্মীরা তার সাথের কর্মীদের ওপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করে।”
এ বিষয়ে পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক জুয়েল সাংবাদিকদের বলেন, করোনাভাইরাসের উপর সচেতনতামূলক একটি তোরণ করতে গেলে চেয়ারম্যান ইব্রাহিম ফারুক ও তার লোকজন তাকে বাধা দেয়।
“এ বিষয় নিয়ে দুইজনের মধ্যে কথা চলছিল। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন এসে আমাকে ও চেয়ারম্যান ইব্রাহিম ফারুককে নিয়ে থানায় আলোচনার জন্য বসেন।”
পরে বাইরে এসে দেখেন চেয়ারম্যান সমর্থিত লোকজন তার দলীয় নেতাকর্মীদের উপর হামলা করে আহত করেছে বলে তার ভাষ্য।
দলের স্থানীয় একাধিক নেতা জানান, থানার সামনে বাউফল পৌরসভার মেয়র জিয়াউল হক জুয়েলের সমর্থক কর্মীরা তোরণ নির্মাণ শুরু করে। খবর পেয়ে আ স ম ফিারোজ সমর্থক পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফারুক নেতা-কর্মী নিয়ে উপস্থিত হয়ে বাধা দেয়।
কিছুক্ষণ পর মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এ সময় ইব্রাহিম ফারুকের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন মেয়র জুয়েল। হঠাৎ উভয় গ্রুপের কর্মীরা একে অপরের উপর সংষর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় কয়েকজন আহত হন’ বলে জানান তারা।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কালাইয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম ফয়সাল আহম্মেদ মনির হোসেন মোল্লা কর্মীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে আবারও সংঘর্ষ বাধে। এ সময় তাপস দাস (৩৪) ও ইমাম হোসেন (২৩) ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর জখম হন বলে জানাচ্ছেন এ দলের একাধিক নেতাকর্মীর ভাষ্য।