নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। করোনার কারণে জাঁকজমক আয়োজন না থাকলেও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, ভার্চুয়াল আলোচনা সভা, আনন্দ র্যালি, বৃক্ষরোপণ, চারা বিতরণ, দোয়া-মিলাদসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো।
এসব কর্মসূচিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তির মূলোৎপাটন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করা হয়েছে।
বুধবার ভোরে দলটির কেন্দ্রীয় এবং বিভিন্ন ইউনিটের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি শুরু হয়। পরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেণ দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। সকাল ৯টায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
এছাড়া যুবলীগ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ছাত্রলীগ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগ, তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগ, ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগ, প্রজন্ম লীগ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ।
দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। এ সময় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। দিনটি উপলক্ষ্যে সকাল থেকেই ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। নেতাকর্মীদের ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ‘শুভ শুভ শুভ দিন আওয়ামী লীগের জন্মদিন’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা ও সমাবেশ : মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। সংগঠনের চেয়ারম্যান আবদুল হাই ও মহাসচিব সফিকুল বাহার মজুমদার টিপুর নেতৃত্বে প্রায় পাঁচ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রদ্ধা জানান। এখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন সাবেক সচিব কেএম মোজাম্মেল, শরীফ উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন পাহাড়ি বীরপ্রতীক, কমান্ডার মোশাররফ হোসেন প্রমুখ।
মৎস্যজীবী লীগের গাছের চারা রোপণ : মৎস্যজীবী লীগ গাছের চারা রোপণ ও বিতরণের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে। ধানমন্ডি লেকের পাড়ে বনজ, ফলজ, ভেষজ চারা রোপণের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
এ সময় সংগঠনের সভাপতি সায়ীদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শেখ আজগর নস্কর, কার্যকরী সভাপতি সাইফুল আলম মানিক, সহসভাপতি আবুল বাশার, মুহাম্মদ আলম, গিয়াস খান, ইউনুস, নাসির উদ্দিন মানিক, ড. মমতাজ খানম, সাজ্জাদুল হক লিকু সিকদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ফিরোজ আহমেদ তালুকদার, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কাজী শফিউল আলম শফিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের আলোচান সভা : বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট বঙ্গবন্ধু ভবনে আলোচনা সভার আয়োজন করে। সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারিন জাহানের সঞ্চালনায় আলোচনায় সহসভাপতি চিত্রনায়িকা রোজিনা, চিত্রনায়ক শাকিল খান, সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা, অভিনেত্রী তানভিন সুইটি, চিত্রনায়িকা শাহনুুর প্রমুখ বক্তব্য দেন। এছাড়া সংগঠনটির পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।
টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা : প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বেলা ১১টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধি দল শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে।
প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী, ইকবাল হোসেন অপু, আনিসুর রহমান, সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া গোপালগঞ্জ জেলা, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনও সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানায়।
এছাড়া আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসাবে ই-পোস্টার প্রকাশ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি।
===============================================================================
দেশেই টিকা তৈরির ব্যবস্থা করছি: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে তারা আবার ভূলুণ্ঠিত হবে। বুধবার (২৩ জুন) আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আয়োজিত আলোচনা সভায় গণভবনে থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ আমাদের সমাপ্ত করতে হবে। এবং তার জন্য আওয়ামী লীগকে সব সময় সচেতন থাকতে হবে, জনগণের পাশে থাকতে হবে, সুখে, দুঃখে সাথী হতে হবে। এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে।’
দলের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নেতা-কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ৭২ বছর আওয়ামী লীগের বয়স হলো। এই সাব কন্টিনেন্টের সব থেকে প্রবীণ পার্টি। এই দলই পারবে এদেশে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে।
‘এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর যেন কখনো কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেজন্য অতন্দ্র প্রহরীর মতো বাংলাদেশের মানুষের পাশে থাকবে আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটা নেতা-কর্মী, সেটাই আমি চাই। এদেশের মানুষের ভাগ্য যেন আমরা পরিবর্তন করে দিয়ে যেতে পারি, সেইভাবেই সবাই কাজ করবেন।’
করোনার টিকা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ টিকার অপর্যাপ্ততা নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন, ‘তাদের বলব একটু ধৈর্য ধরেন। তারপর দেখেন আমরা কতটুকু কী করতে পারি। তারপর সমালোচনা করেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, অনেক দেশ যেখানে এখনও টিকা দেওয়া শুরু করতে পারেনি, সেখানে তার সরকার আগে পদক্ষেপ নিয়েছিল বলে তা শুরু করা গেছে পাঁচ মাস আগে। ভারতে যখন মহামারী ব্যাপকভাবে শুরু হল, তারা ভ্যাকসিন রপ্তানি করা বন্ধ করে দেওয়াতে আমরা কিছুটা সমস্যায় পড়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা এখন আবার ভ্যাকসিন কিনতে শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে দেশের সবাইকে টিকা দেওয়া হবে।’
সমালোচকদের নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার খুব দুঃখ লাগে, যাদেরকে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগেভাগে ভ্যাকসিন দিয়েছি, দুই ডোজ দেওয়ার পর তারা এখন সমালোচনা করে। অথচ তারাই কিন্তু সবার আগে নিয়েছে। তারাই আবার বড় বড় সমালোচনার কথা …. একে গালি ওকে গালি…. অনেক কিছু দেন, আমরা শুনি।
তারা যখন টিকা নিয়েছিলেন, তখন তো এই কথা বলেননি। এখন আবার সমালোচনা কেন?”
বাংলাদেশে যেন ভবিষ্যতে করোনাভাইরাসের টিকা তৈরি করা যায়, সেই ব্যবস্থাও সরকার করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। আমরা যেন নিজেরা ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারি, তার জন্য আমাদের ফার্মসিউটিক্যাল তৈরি করা দরকার।’
আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, শাজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, হাছান মাহমুদ।
————————————————————————————————————————————–
রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে সহায়তা করুন