আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আজ থেকে সংলাপে বসছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে আওয়ামী লীগ ও তার শরিক দলগুলো অংশ নেবে। তবে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
যদিও নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, সব দলের অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনেরও আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। এদিকে সংলাপে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট কোনো এজেন্ডা বা আলোচ্যসূচি রাখা হচ্ছে না। উন্মুক্ত আলোচ্যসূচিতে এ সংলাপ শুরু করছে কমিশন।
তবে নির্বাচন কমিশনের আস্থা অর্জন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) পক্ষে-বিপক্ষে মত, নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচনব্যবস্থাসহ কয়েকটি বিষয় আলোচনায় গুরুত্ব পাবে। নির্বাচন কমিশন সূত্র এবং ১০টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংলাপের প্রথম দিন আজ জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, বাংলাদেশ কংগ্রেস ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল-এর সঙ্গে বসছে ইসি। এর মধ্যে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল সংলাপে অংশ নেবে না বলে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে। বাকি তিনটি দল এ সংলাপে অংশ নেবে বলে জানতে পেরেছে ইসি।
অপরদিকে জাতীয় পার্টি-জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বিদেশ থাকায় ২৪ জুলাই নির্ধারিত দিনে সংলাপে আসবে না বলে জানিয়েছে। অপরদিকে ২১ জুলাই কর্নেল তাহের দিবস থাকায় ওইদিন ইসির সংলাপে আসবে না জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ।
তবে আওয়ামী লীগ, সমমনা ও শরিক দলগুলো অংশ নেবে। এছাড়া সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও সংলাপে অংশ নেবে। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, রাজনৈতিক দল হিসাবে সংলাপে আওয়ামী লীগ অংশ নেবে। তবে সেখানে কী কী প্রস্তাব দেওয়া হবে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। সংলাপে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কী ধরনের প্রস্তাব দেওয়া হবে, তা দলীয়ভাবে নির্ধারণ করা হবে।
উন্মুক্ত এজেন্ডা রাখায় নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, ইসির সংলাপে আলোচনার কোনো বিষয়বস্তু বা আলোচ্যসূচি রাখা হয়নি। যদি আলোচ্যসূচি থাকত, তাহলে সেই বিষয়গুলোর ওপর আমাদের অবস্থান তুলে ধরতাম। তিনি বলেন, যেহেতু আলোচ্যসূচি নেই, সুতরাং সার্বিকভাবে নির্বাচন নিয়ে আমাদের প্রস্তাব দেওয়ার সুযোগ থাকবে। ২৩ জুলাই প্রেসিডিয়াম সদস্যদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে আমাদের প্রস্তাব কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা করব।
ইসি সূত্র জানায়, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করে। ১৩ মার্চ শুরু হওয়া সংলাপে এ পর্যন্ত শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ও নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ করেছে। সর্বশেষ ১৯, ২১ ও ২৮ জুন-তিন দিনে ১৩টি করে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইভিএম যাচাই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ইসি। ওই সময়ে ২৮টি রাজনৈতিক দল সংলাপে অংশ নিয়েছিল। বিএনপিসহ ১১টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। এবারও বিএনপি এ সংলাপে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না, এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত। কোন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন আয়োজন করল, তা আমাদের দেখার বিষয় না। নির্বাচনি কোনো প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমরা যুক্ত হব না। এই সিদ্ধান্তেই আমরা আছি।
এদিকে নিবন্ধিত কয়েকটি দলের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে তারা দলীয় প্রস্তাব দেবেন। ইভিএম-এর পক্ষে-বিপক্ষেও মতামত তুলে ধরবেন। নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা ও আস্থা অর্জনের বিষয়ও গুরুত্ব পাবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ-এর প্রেসিডেন্ট এসএম আবুল কালাম আজাদ বলেন, সংলাপে আমরা নির্বাচন কমিশনকে তার সাংবিধানিক অধিকার যাতে প্রয়োগ করতে পারে, সেই প্রস্তাব দেব। এই নির্বাচন কমিশন যেন আগের কমিশনগুলোর মতো না চলে, সেই পরামর্শও দেব। তিনি বলেন, ইসি নির্বাচনের আয়োজন করে থাকে। তাই ইসির কাছে জানতে চাইব নির্বাচনের সময়ে সরকারের আচরণ কেমন হবে? তারা কি গতানুগতিক আচরণ করবে নাকি নির্বাচনের সময়ে নিরপেক্ষ কার্যক্রম চালাবে, সেটি পরিষ্কার হওয়া দরকার। ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইভিএম ও কাগজের ব্যালট-দুই পদ্ধতির ভোট নিয়েই আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। ইভিএম-এর কারিগরি দিক নিয়ে আমি এখনো পরিষ্কার নই। এ বিষয়ে পরে আমাদের অবস্থান জানাব। তিন ক্যাটাগরিতে প্রস্তাব দেবেন বলে জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম-এর চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। তিনি বলেন, একটি ভালো নির্বাচন কীভাবে করা যায়, সে বিষয়ে আমাদের বক্তব্য থাকবে। তিনি বলেন, তিন ক্যাটাগরিতে আমাদের প্রস্তাবনা দেওয়া হবে। প্রথমত, গণতন্ত্র বিকাশে ইসির ভূমিকা; দ্বিতীয়ত, নির্বাচন পদ্ধতিতে ইসির করণীয় এবং ভোটের দিন কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়-এই প্রস্তাবগুলো দেব।
সংলাপের সময়সূচি : সাত দিন চারটি, তিন দিন তিনটি ও এক দিন দুটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। সময়সূচি অনুযায়ী, আজ ১৭ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বেলা ১২টা থেকে ১টা বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, দুপুর আড়াইটা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা বাংলাদেশ কংগ্রেস এবং বিকাল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল-এর সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ১০ জন করে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইসি।
পরের দিন ১৮ জুলাই সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বেলা ১২টায় বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, দুপুর আড়াইটায় খেলাফত মজলিস ও বিকাল ৪টায় বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে সংলাপ। ১৯ জুলাই মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বেলা ১২টায় ইসলামিক ঐক্যজোট, দুপুর আড়াইটায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এবং বিকাল ৪টায় বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের (এমএল) সঙ্গে সংলাপ। ২০ জুলাই বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় গণতন্ত্রী পার্টি, বেলা ১২টায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি এবং বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সঙ্গে বসবে ইসি।
২১ জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বেলা ১২টায় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, দুপুর আড়াইটায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এবং বিকাল ৪টায় গণফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদ দিয়ে ২৪ জুলাই রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বেলা ১২টায় জাতীয় পার্টি-জেপি, দুপুর আড়াইটায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি ও বিকাল ৪টায় ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। ২৫ জুলাই সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বেলা ১২টায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, দুপুর আড়াইটায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এবং বিকাল ৪টায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির সঙ্গে সংলাপ।
২৬ জুলাই মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বেলা ১২টায় বিকল্পধারা বাংলাদেশ, দুপুর আড়াইটায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং বিকাল ৪টায় ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির সঙ্গে সংলাপ হবে। ২৭ জুলাই বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, বেলা ১২টায় জাকের পার্টি ও আড়াইটায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং ২৮ জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় গণফোরাম, বেলা ১২টায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ ও আড়াইটায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সংলাপ হবে। শেষ দিন ৩১ জুলাই রোববার জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং বিকাল ৩টায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি।
আগে ১১টি দল সংলাপে অংশ নেয়নি : ইভিএম যাচাইয়ে ১৯, ২১ ও ২৮ জুন তিন দিন সংলাপ করেছিল ইসি। ওই সংলাপে বিএনপিসহ ১১টি দল অংশ নেয়নি। দলগুলো হচ্ছে-বিএনপি, এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ।