বিএনপি মহাসচিব বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশনের কোনো অধিকারই নেই, সম্ভব না, তার এখতিয়ারই নেই যে, তারা সরকারের নির্দেশ, সেটা ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশনের কোনো অধিকারই নেই, সম্ভব না, তার এখতিয়ারই নেই যে, তারা সরকারের নির্দেশ, সেটা ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ‘আজ্ঞাবাহী হওয়া ছাড়া’ নির্বাচন কমিশনের ‘কিছু করার নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ‘ডিগবাজী নয়’ জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “এই নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমি আর কথা বলতে চাই না।”
মঙ্গলবার বিকালে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিইসির বক্তব্য নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, “আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, এখানে বর্তমান সরকার যদি ক্ষমতায় থাকে এবং যেটা আমরা আগেই বলেছিলাম যে, দলীয় সরকারের অধীনে কখনোই অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।
“কারণ আওয়ামী লীগ যেটা করেছে গত তিনটা টার্মে – এটাকে একটা নির্বাচনী গণতন্ত্র বলে তারা নাম দেওয়ার চেষ্টা করেছে এবং গণতন্ত্রের একটা মু্খোশ পড়ে রাখে, আরেক দিকে নির্বাচন মুখোশ দেখিয়ে ক্ষমতাটাকে ধরে রাখে।”
এমন শাসন ব্যবস্থাকে অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ‘হাইব্রিড রেজিম’ বলেছেন দাবি করে তিনি বলেন, “এই হাইব্রিড রেজিমের ফলে জনগণ তার ভোটাধিকার থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হচ্ছে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন- নির্বাচন কমিশনের কোনো অধিকারই নেই, সম্ভব না, তার এ্খতিয়ারই নেই যে, এখানে তারা সরকারের যে নির্দেশ সেটা ছাড়া তারা নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে।”
মঙ্গলবার সকালে নির্বাচন কমিশনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সঙ্গে সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আ্উয়াল জানান, নিরপেক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত নির্বাচন করতে চায় কমিশন।
সিইসি বলেন, “২০১৮ সালেল মতো নয়, আইন অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সংসদ নির্বাচন হবে সময়মতো। বর্তমান কমিশন প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে এসেছে, ডিগবাজী নয়।”
সোমবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির সভা হয়। সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
‘উৎপাদন না করেও অর্থ গুনছে রেন্টাল কেন্দ্রগুলো’
মির্জা ফখরুল বলেন, “সরকারের বিশেষ আইনে স্থাপিত রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল ১৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ২/৩ বছরে বন্ধ হবার কথা থাকলেও প্রয়োজন ব্যতিরেকে তা এখনো চলমান আছে।
“বেশ কিছু সংখ্যক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বিপুল অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ ছাড়াই তিন বছর সরকারকে ৫৪ হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে।”
বিদ্যুতের চাহিদা নির্ধারণ না করেই চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি পাওয়ার প্ল্যান্টের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবসায়ীদের লুট করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।”
এসবের হিসাব আছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সরকারের নিজস্ব ব্যবসায়ীদের পকেটে গেছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। গত এক যুগে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ গচ্চা প্রায় ৮ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার।”
এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে ২ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় দেনা হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন তিনি।
“বিদেশি ঋণের পরিমান ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। ২০২৪ সাল থেকে আগামী ৩০ বছরে সুদসহ এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে, যা জনগণের পকেট কেটে করা হবে।”
“সরকার লোডশেডিং শূন্য কোঠায় নিয়ে আসায় উৎসব করেছে আতশবাজি পুড়িয়ে। এখন শহরে ২/৩ ঘন্টা আর গ্রামাঞ্চলে ৫/৬ ঘন্টা লোডশেডিংয়ে জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।”
এমন পরিস্থিতির জন্য ব্যর্থতার দায় নিয়ে সরকারের পদত্যাগ দাবি করে মির্জা ফখরুল জানান, বিদ্যুতের লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে সারাদেশে তিনদিন বিক্ষোভ কর্মসূচি করবে বিএনপি।
তিনি জানান, দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও অন্যান্য মহানগর আগামী ২৯ ও ৩০ জুলাই এবং সকল জেলা পর্যায়ে আগামী ৩১ জুলাই প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এছাড়া লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাজধানীতে আগামী ২৯ জুলাই মহানগর উত্তর এবং ৩০ জুলাই দক্ষিণ মহানগর বিক্ষোভ করবে।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই সরকারের নীতি একটাই- তা হচ্ছে জনগণের সম্পদ লুট করে নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করা এবং বিদেশে সেই সম্পদ পাচার করা।
“যারা এই ধরনের নীতি অনুসরণ করে দেশের সম্পদ লুট করেছে সেই রকম দেশের নজির আছে। অতি সম্প্রতি শ্রীলঙ্কাতে সেইরকম ঘটনা ঘটেছে।
“জনগণ রাস্তায় বেরিয়ে এসে তাদের উত্থানের মধ্য দিয়ে যারা দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন সেই প্রেসিডেন্ট ও প্রাইম মিনিস্টারকে তারা সরিয়ে দিতে বাধ্য করেছে। একইভাবে নাইজেরিয়া ও ভেনেজুয়েলাতে একই অবস্থা আমরা দেখেছি।”
‘বিএসএফের ডিজির বক্তব্যেরে প্রতিবাদ’
দলের স্থায়ী কমিটির সভায় সম্প্রতি ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) মহাপরিচালকের (ডিজি) বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানো হয় বলে জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশের সবাই অপরাধী- এই মন্তব্যে বাংলাদেশ বর্ডার গাড (বিজিবি) মহাপরিচালক নীরব থাকায় তীব্র সমালোচনা করা হয়।
“বিএনপি মনে করে, সীমান্তে গুলি করে হত্যা মানবাধিকার লঙ্ঘন। কেউ অপরাধী হলেও তার বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এই বিষয়ে সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য আমরা দাবি করছি।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা সম্পৃক্ত দাবি করে তিনি বলেন, “ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের এই ধরনের ন্যাক্কারজনক, অসামাজিক কার্য্কলাপকে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে মদদ দেওয়া হয় বলে এই ধরনের ঘটনাগুলো ঘটছে।
“শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ও অসামাজিক কার্য্কলাপের অভ্যয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। আমরা অবিলম্বে অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।”
বিএনপি মহাসচিব জানান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং দারিদ্র্যের হার বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছে স্থায়ী কমিটি।
এছাড়া মিয়ানমারের সামরিক জান্তা চারজন গণতন্ত্র কর্মীর মৃত্যুদণ্ড কার্য্কর করায় সভায় নিন্দা জানানো হয়েছে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।