রাজবাড়ী সদরের আলীপুর ইউনিয়নে একই সময় দুই স্বামীর সঙ্গে সংসার করা নিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসের ঘটনা এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। প্রথম স্বামী ইউটিউবার সাগর শেখের সঙ্গে গোপনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন জান্নাতুল। পরে পরিবারের চাপে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। প্রায় দুই বছর বিষয়টি গোপন রাখলেও সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসায় তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা।
জান্নাতুল দুই স্বামীর মন জয় করেই চলছিলেন। স্বামীর অধিকার থেকে বঞ্চিত করেননি দুজনের কাউকেই।
চার বছর প্রেম করে ২০২২ সালে ওই ইউনিয়নের ইন্দ্রনারায়ণপুর গ্রামের আবু হানিফ শেখের ছেলে ইউটিউবার সাগর শেখকে গোপনে বিয়ে করেন জান্নাতুল। পরিবারের সবাই বিদেশে থাকায় বাড়িতে একাই বসবাস করতেন তিনি। জান্নাতুলের বাড়ি নিয়মিত যাতায়াত করতেন সাগর। সংসার জীবন ভালোই চলছিল এ দম্পতির। হঠাৎ জান্নাতুলের বাবা প্রবাস থেকে দেশে ফেরায় শ্বশুরবাড়ি যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায় সাগরের। এরই মধ্যে প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখে পরিবারের সিদ্ধান্তে অন্য এক যুবককে দ্বিতীয় বিয়ে করেন জান্নাতুল। স্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের বাড়িতে তুলে না নেওয়ায় শ্বশুরবাড়ি গিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত সময় কাটান জান্নাতুলের দ্বিতীয় স্বামী। তবে প্রথম স্বামী সাগরের সঙ্গেও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ঠিক রেখে চলছিলেন জান্নাতুল। স্ত্রীর পরিবার তাকে মেনে না নেওয়ায় সাগর তার বোনের বাসাসহ বিভিন্ন স্থানে একান্তে সময় কাটাতেন স্বামী-স্ত্রী। চলতি মাসের ২ নভেম্বর তারা একসঙ্গে নিজেদের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী পালন করেন তারা। তবে দুই সপ্তাহ আগে স্ত্রীর দ্বিতীয় স্বামী ও ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে জানতে পারেন সাগর। এ বিষয়ে সাগর জানতে চাইলে তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন জান্নাতুল। এখন দ্বিতীয় স্বামী নিয়েই সংসার করতে আগ্রহী তিনি। বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে ফিরে পেতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দায়েরের পাশাপাশি আদালতে মামলা করেছেন সাগর।
সাগর শেখ জানান, তার ও জান্নাতুলের বিয়ের বিষয়টি জান্নাতুলের মা ও বোন জানত। বিয়ের পর তাদের সংসার জীবন ভালোই কাটছিল। তবে হঠাৎ করে জান্নাতুলের বাবা বিদেশ থেকে দেশে ফেরায় তাদের বাড়িতে সাগরের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। তাদের বিয়ের চার মাসের মাথায় সাগর ভিডিও কন্টেন্ট তৈরির কাজে কয়েকদিনের জন্য রাজবাড়ীর বাইরে যান। কাজ থেকে এসে সাগর জানতে পারেন তার স্ত্রী জান্নাতুল অন্য এক ছেলেকে বিয়ে করেছেন। সাগর তার স্ত্রীকে প্রশ্ন করলে সে বলে, ‘পরিবারের চাপে বিয়ে করেছি। ওই ছেলের সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক হয়নি। আমি তোমার স্ত্রী আছি, তোমারই থাকব। আমার আম্মু দেশে আসলে আমি তোমার কাছে চলে আসব।’
তিনি জানান, এখন বাধ্য হয়ে তিনি তার স্ত্রীকে ফিরে পেতে আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে গত ১১ নভেম্বর লিখিত অভিযোগ করেছেন। এছাড়া ১৭ নভেম্বর রাজবাড়ীর বিজ্ঞ ১ নম্বর আমলি আদালতে মামলা করেছেন।
এদিকে জান্নাতুলের দ্বিতীয় স্বামী বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তার দাবি, জান্নাতুলের সঙ্গে সাগরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে তিনি জানতেন। সাগরের সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি তিনি জানতেন না।
জান্নতুলের মা হাছিনা বেগম বলেন, ‘সাগরের সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছিল৷ তবে বিয়ের দুই মাসের মাথায় তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। আমার মেয়ে তো ছোট, বুঝে নাই। যে কারণে সে সময় ওরা ডিভোর্সের কাগজ ছিঁড়ে ফেলেছে। এর ৪/৫ মাস পরে আমার মেয়ের আবার বিয়ে হয়েছে। সাগর আমার মেয়েকে চাপে ফেলে এতোদিন তার সঙ্গে সময় কাটাতে বাধ্য করেছে।’
এ বিষয়ে আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু বক্কার ছিদ্দিক জানান, সাগর ও জান্নাতুলের বিবাহ বিচ্ছেদ হলে তার নোটিশের একটি কপি ইউনিয়ন পরিষদে আসার কথা। এরকম কোন কপি কখনো পাননি তারা।
তিনি বলেন, ‘সাগর আমার ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করেছে। আমিও খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি সাগর জান্নাতুলের প্রথম স্বামী। সে সাগরকে তালাক না দিয়েই বিয়ের চার মাসের মাথায় অন্য এক ছেলেকে বিয়ে করে। প্রায় দুই বছর সে চালাকি করে দুই স্বামীর সঙ্গেই সংসার করেছে। সাগরের কাছ থেকে জান্নাতুল অনেক টাকা-পয়সা খেয়েছে বলেও আমি জানতে পেরেছি।’