একজন ভালো বাকি সবাই খারাপ, এটা গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক: তারেক রহমান

Untitled-1-Recovered-6936da4a9882a

‘একজন ভালো আর সবাই খারাপ’-আওয়ামী লীগ আমলের এই প্রচার এখনো চলছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, এটা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। এটার পরিবর্তন হতে হবে। কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘আমি ভালো আর সব খারাপ। এ রকম একটি বিষয় আমরা দেখেছি ১৬ বছর ধরে। দুঃখজনকভাবে হলেও ৫ তারিখের পরে কেন জানি মনে হচ্ছে সেটির বোধহয় পরিবর্তন হয়নি। এটির পরিবর্তন হওয়া বাঞ্ছনীয়। এটির পরিবর্তন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।’ সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তারেক রহমান এ কথা বলেন। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তিনি। বিজয়ের মাস উপলক্ষ্যে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের সারা দেশের ৭৫টি ইউনিটের বিভিন্ন পর্যায়ের এক হাজারের বেশি নেতা অংশ নেন।

বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রে মানুষ বিভিন্ন মতামত দেবে। মতামত দেওয়ার অধিকার তার আছে। বক্তব্য রাখার অধিকার তার আছে। কিন্তু অবশ্যই একজন ভালো আর বাকি সবাই খারাপ, এটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এই ধারণার পরিবর্তন হতে হবে। একজন বিশেষ কেউ ভালো, বাকি সবাই খারাপ-এটি গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ডেঞ্জারাস (বিপজ্জনক) একটা ব্যাপার।

সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী নয়, ধানের শীষ মুখ্য বলে দলের নেতাকর্মীদের স্মরণ করিয়ে দেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, আজকে আমাদের বসে থাকার সময় নেই। বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। হয়তো এমনও হতে পারে দলের পক্ষ থেকে এলাকায় যে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে তোমার পছন্দের প্রার্থী হয়তো পাওনি। যে পেয়েছে তার সঙ্গে হয়তো তোমার সম্পর্ক একটু কম আছে। তুমি তো প্রার্থীর জন্য কাজ করছ না, তোমার ধানের শীষের জন্য কাজ করছ। এখানে প্রার্থী মুখ্য নয়, মুখ্য হচ্ছে তোমার দল বিএনপি, ধানের শীষ। এখানে মুখ্য হচ্ছে দেশ। মানুষ ধানের শীষের পক্ষে রায় দিলে দেশ গড়ার প্রত্যেকটা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারব এবং করব।

তারেক রহমান বলেন, দেশ গড়ার পরিকল্পনাগুলো পরিকল্পনার মধ্যে রাখব না। এগুলোকে আমরা যে কোনো মূল্যে বাস্তবায়ন করব, জনগণকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে। আজকে প্রতিজ্ঞা, কর্মপন্থা হলো আমাদের এই পরিকল্পনাগুলোর সঙ্গেই বাংলাদেশের জনগণকে সম্পৃক্ত করব। এটাই হচ্ছে আমাদের পরবর্তী দুই মাসের কাজ। এর বাইরে আর কোনো কাজ নেই।

ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের দেশ গড়ার পরিকল্পনাগুলো নিয়ে নিজ নিজ এলাকার মানুষকে সম্পৃক্ত করা, সমর্থন নেওয়া ও সমর্থন জোগাড় করার আহ্বান জানান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। খাল খনন, বায়ুদূষণ রোধ, পরিবেশের উন্নয়ন, বর্জ্য অপসারণ, সারা দেশে ক্রীড়ার উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বেকারত্ব দূর, ফ্যামিলি কার্ড, ফার্মার্স কার্ড, স্বাস্থ্য কার্ডসহ বিএনপির পরিকল্পনাগুলো বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে নেতাকর্মীদের তা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেন তারেক রহমান।

তিনি বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন, তখন তিনি খাল খনন প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন। এ নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছিল। কিন্তু এর পেছনে অনেক কারণ ছিল। খাল খননের মাধ্যমে তিনি একদিকে যেমন বন্যা নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন, আরেকদিকে ফসলের সেচব্যবস্থার উন্নতি ঘটিছিলেন। এর ফলে যে জমিতে একটি ফসল হতো, সেখানে দুটি ফসল হওয়া শুরু করল। এজন্য তার আমলের আগে বাংলাদেশে যেখানে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, জিয়াউর রহমানের আমলে সেখানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছিল। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ বিএনপিকে আবার দেশ পরিচালনার সুযোগ দিলে খাল খননের কাজ আবার শুরু করা হবে।

প্রবাসীদের নিয়ে তারেক রহমান বলেন, এই যে জনশক্তি রপ্তানি, এর উপায় প্রথম বের করেছিলেন জিয়াউর রহমান, যখন তিনি দেশ পরিচালনা করছিলেন। আমরাও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি, এই মানুষগুলোকে যদি সঠিকভাবে ট্রেনিং দেওয়া যায় তা অনেক কাজে লাগবে। যদি তাদের একটি ভাষার কোর্স করানো হয় বা ট্রেনিং দেওয়া হয়, তাহলে যেখানে তারা ১০০ ডলার বেতন পান, সেটা বেড়ে ৩০০ ডলার হয়ে যাবে। আর এতে দেশের রেমিট্যান্সের পরিমাণও বেড়ে যাবে।

কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, ফ্রিল্যান্সিং ও ডিজিটাল আয় নিয়ে বলেন, পেপালের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা অলরেডি একটা টিমের সঙ্গে কথা বলেছি। অনেক তরুণ আছে যারা বিভিন্ন কন্টেন্ট তেরি করে, কিন্তু সঠিক প্ল্যাটফর্মে তা দিতে পারছে না। এর ফলে তাদের আয় অনেক কম হচ্ছে। আমরা যদি তাদের জন্য রাষ্ট্রীয় পলিসি করি, পেপাল, গুগল, মেটাসহ ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলোর অফিস এখানে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে এই কন্টেন্ট ক্রিয়েটর যারা আছে, তাদের ইনকাম অনেক বেড়ে যাবে।

এ সময় ঢাকা শহরসহ সারা দেশের বাযুদূষণ রোধে বৃক্ষরোপণের কথা বলেন তিনি। দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপনার কথাও বলেন। প্রাইমারি শিক্ষকদের যথাযথ ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে আরও দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

তরুণ সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, তোমরা যদি এগিয়ে আসো, ঐক্যবদ্ধ হও, তাহলে এ দেশের সামনে একটি ভবিষ্যৎ আছে। যদি যে যার অবস্থান থেকে কাজ করি দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আজকে আর বসে থাকার সময় নেই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, একটি দল শুধু ধর্মের নামে ট্যাবলেট বিক্রি করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণার পরিকল্পনা করছে। তাদের (ওই দল) জনগণ এরই মধ্যে চিনেছে। তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। কোনো নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘ধর্ম ব্যবসায়ীদের দল একটি মার্কায় ভোট দিলে জান্নাতে যাওয়ার কথা বলছে। তারা কেবলই বলছে, এখানে একটা মার্কায় ভোট দিলে তরতরাইয়া জান্নাতে যাওয়া যাবে। তার আগে ইহকালে কীভাবে চলবে-এটা নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই।’

বিএনপি জনগণের ভোট চায় জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপি জনগণকে কী দিতে চায়, সেই পদক্ষেপ নিয়েছে। বিএনপি ধর্মের ট্যাবলেট বিক্রি করতে পারে না। বিএনপিকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় চালানো অপপ্রচারের পালটা জবাব দিতে ছাত্রদলের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান এই নেতা।

কর্মসূচির বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ।

Pin It