বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার ২৬ লাখ বিএনপির নেতাকর্মীদের আসামি করেছে। ৫ শতাধিক মানুষকে গুম করে দিয়েছে। হাজারের বেশি মানুষকে তারা পঙ্গু করে দিয়েছে। সবশেষে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে গত ২৯ ডিসেম্বর রাতে ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে। আজকে সমগ্র দেশে যে নির্যাতন-নিপীড়ন, তা অনেক সময় মনে হয় ১৯৭১ সালের পাকিস্তানি নির্যাতনকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে।
মঙ্গলবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘তরিকুল ইসলাম: জীবন ও সংগ্রাম’ শীর্ষক সভার আয়োজন করে তরিকুল ইসলাম স্মৃতি সংসদ।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার সচেতনভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করছে। তার একটি মাত্রই উদ্দেশ্য, এই দেশটিকে তারা অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়।
সিপিডির গবেষণা প্রতিবেদন উল্লেখ করে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে সিপিডি বলেছে- বাংলাদেশের যে প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে সেটা সঠিক নয়। তারা বলছে, বাংলাদেশের প্রতিটি অর্থনীতির স্তম্ভ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক লুট, শেয়ারবাজার লুট, ১ লাখ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে ব্যাংকের মাধ্যমে, যা দিয়ে পাঁচটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, একদিকে বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস, প্রশাসন ধ্বংস, অন্যদিকে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। মানুষের সমস্ত অধিকারকে হরণ করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়া সংগ্রাম করছিলেন বলে তাকে কারাগারে যেতে হয়েছে।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জনসাধারণকে আত্মত্যাগের আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের মানুষের আস্থা রয়েছে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ওপরে, তাই তাকে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা যদি তরিকুল ইসলাম ও সাদেক হোসেন খোকার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চাই তাহলে অবশ্যই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আমাদের মুক্ত করতে হবে। তাই বেগম জিয়াকে মুক্তি, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের লক্ষ্য। আসুন সে লক্ষ্যে আমরা সবাই আত্মত্যাগ করি।
তিনি বলেন, খেটে খাওয়া মানুষের নেতা ছিলেন মরহুম তরিকুল ইসলাম। সোমবার একই দিনে আমরা আরেকজন জনদরদি নেতা ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে হারিয়েছি। তাদের চলে যাওয়া যদি সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশে হতো তাহলে আমরা কিছু মনে করতাম না। কিন্তু তাদের মৃত্যু কষ্টের। তাদেরকে মামলা দিয়ে এক কারাগার থেকে আরেক কারাগারে পাঠানো হয়েছে, নির্যাতন করেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, মরহুম তরিকুল ইসলাম ছিলেন ত্যাগী ও পরীক্ষিত রাজনীতিবিদ। তার সঙ্গে কারাগারে এক সঙ্গে জেল খেটেছি। কখনো দুশ্চিন্তা না করে উৎসাহ প্রদান করতেন, সাহস যোগাতেন। ছাত্রজীবন থেকেই শেষ পর্যন্ত তরিকুল ইসলাম একজন সাচ্চা জাতীয়তাবাদের সৈনিক। আজকে দেশ বাঁচাতে হলে তার মতো রাজনীতিবিদদের আদর্শ সামনে রেখে এগোতে হবে।
বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমের সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান, ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বরকতউল্লাহ বুলু, মো. শাজাহান, নিতাই রায় চৌধুরী, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিবউন-নবী খান সোহেল, প্রয়াত তরিকুল ইসলামের সহধর্মিনী যশোর জেলার আহ্বায়ক অধ্যাপিকা নার্গিস ইসলাম, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুইয়া জুয়েল প্রমুখ।
এছাড়াও প্রয়াত তরিকুল ইসলামের দুই ছেলে শান্তুনু ইসলাম সুমিত ও দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্র্য ইসলাম অমিতসহ বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।