আগামী এক মাসের মধ্যে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
বুধবার সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিভিন্ন গণমাধ্যমের শিক্ষাবিষয়ক সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা জানান।
শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাসের মাথায় শিক্ষাবিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রথমবারের মত বুধবার মতবিনিময় করেন শিক্ষামন্ত্রী। এ সময় শিক্ষা প্রশাসনের দুর্নীতি, নিয়োগ ও বদলি, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা, স্কুল পর্যায়ে ঝরে পড়ার উদ্বেগজনক হার, পাঠ্যবই ও কারিকুলামসহ শিক্ষার নানা বিষয় আলোচনায় উঠে আসে।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আবেদন করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যারা যোগ্য, তাদের এমপিওভুক্ত করা হবে। যারা যোগ্য হতে পারেননি, তারাও যেন যোগ্যতা অর্জন করতে পারে, সেজন্য তাদের উৎসাহিত করা হবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রতি মাসে বেতন-ভাতা বাবদ সরকারি অংশ (মূল বেতন ও কিছু ভাতা) পেয়ে থাকেন। এমপিও নয়– এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। সর্বশেষ ২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। এরপর আর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়নি।
নতুন করে কতগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে জানতে চাইলে ডা. দীপু মনি বলেন, এমপিওভুক্তির জন্য চারটি সূচকের ভিত্তিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে আবেদন চাওয়া হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানগুলোর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে যোগ্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। এই সংখ্যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে। সেখান থেকে মন্ত্রণালয় এখন যোগ্য প্রতিষ্ঠান ঠিক করছে।
তিনি বলেন, চারটি প্রধান শর্তের ভিত্তিতে স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে তারা যোগ্য প্রতিষ্ঠান বাছাই করে রেখেছেন। সংখ্যাটি প্রায় আড়াই হাজারের কাছাকাছি।
এদিকে মেডিকেল কলেজের মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা জরুরি বলে বলে অভিমত দিয়েছেন ডা. দীপু মনি।
তিনি বলেন, ‘এটি (সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা) করা খুবই জরুরি। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়, বড় বিশ্ববিদ্যালয়, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় নানা কারণে তারা এটির বিরোধিতা করেন। কিন্তু সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষাটি শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের জন্যে খুবই জরুরি। এতে অনেক হয়রানি, অর্থ অপচয়, কষ্ট কমে যায়। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে সম্ভব না সারাদেশে এখানে ওখানে সেখানে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়া। অনেক সময় আমি শুনি, ছেলেরা মসজিদে রাতে ঘুমিয়ে পরীক্ষা দেয়। মেয়েরা কোথায় গিয়ে থাকবে? তাদের বাবা-মা এবং সব বাব-মার পক্ষে কি সম্ভব? এটা তো সম্ভবও নয়।’
গত কয়েক বছর যাবৎ মেডিকেল কলেজগুলো এক দিনে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে মেধাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছে। তবে পৃথক ফরম বিক্রি ও পরীক্ষা সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক অর্থ উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় বড় বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিরোধিতা করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যদি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা সমন্বিত করতে পারি, তাহলে আমরা কেন অন্য ভর্তি পরীক্ষা সমন্বিত করতে পারবো না? আমার বিশ্বাস যে, আমাদের যদি সবার একটু সদিচ্ছা থাকে তাহলে নিশ্চয়ই আমরা পারবো। এক্ষেত্রে আমি আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সহযোগিতা দেবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে দীপু মনি জানান, প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন একজন পরামর্শকের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অন্য আইনের সঙ্গে অসঙ্গতি আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, যাচাই শেষে মন্ত্রণালয় থেকে এ বছরের শেষ নাগাদ পরবর্তী পর্যায়ে পাঠানো সম্ভব হবে। শিক্ষানীতি বাস্তবায়নেরও কাজ চলছে।
গোপালগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা সম্পর্কে অবহিত আছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তারা বিষয়টি দেখছেন। আশা করছেন এসব সমস্যা দূর করা যাবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) আঞ্চলিক অফিসগুলোর এমপিওভুক্তিতে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, একটি ট্রানজেকশন পিরিয়ড চলছে। সবকিছু সেটেল হলে হয়তো এসব সমস্যা আর থাকবে না। তবে বিষয়গুলো তিনি দেখবেন বলে জানান।
দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষক দ্বারা ছাত্রী নিগৃহীতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দীপু মনি বলেন, সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে না পারলে এ ধরনের ঘটনা রোধ করা কঠিন হবে।