সাতক্ষীরার শ্যামনগরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে বাড়ি-ঘর ভাংচুরের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির মামলা গ্রহণ না করায় সংশ্নিষ্ট থানার ওসির কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। এ ঘটনায় সংশ্নিষ্ট থানা পুলিশকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য গৃহীত পদক্ষেপ এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন আকারে হাইকোর্টে দাখিল করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।
শুনানির শুরুতেই রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সাইফুল আলম আদালতে বলেন, সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার ওসির বিরুদ্ধে ভাংচুরের ঘটনায় হাইকোর্টে রিটকারী ফজলুর করিমের মামলা না নেওয়ার অভিযোগের আংশিক সত্যতা পাওয়া গেছে। পাশাপাশি মামলা না নিয়ে স্থানীয় সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তির চেষ্টা হয়েছে।
এ পর্যায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেন, ‘ওসি মামলা নিলেন না কেন? আমরা রুল দিয়ে দেখি, কেন তিনি মামলা নিলেন না। ওসি সাহেবরা সব জায়গায় কোর্ট বসিয়ে দেন। তারা কি সালিশ করতে বসেছেন যে সুবিধামতো হলে মামলা নেবেন। অথচ টাকা ছাড়া থানায় একটা জিডিও হয় না।’
হাইকোর্ট আরও বলেন, ওসিরা যেখানে সেখানে কোর্ট বসান, রাতে কোর্ট বসান। এত সাহস তারা কোথায় পান? তারা নিজেরা বিচার বসান কিভাবে?
এ ধরনের ঘটনা পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ করে মন্তব্য করে হাইকোর্ট আরও বলেন, ১৩ হাজার পুলিশ যারা থানায় বসেন, তাদের জন্য গোটা পুলিশের বদনাম হতে পারে না। অনেক পুলিশ খুব কস্ট করে জীবন-যাপন করেন। অথচ অনেকের দেখি ৪-৫টা করে বাড়ি। দেশটা কি চোরের দেশ হয়ে গেছে?
এরপর হাইকোর্ট এক সপ্তাহের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ফজলুর করিমের মামলা না নেওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে শ্যামনগর থানা পুলিশের গৃহীত পদক্ষেপ লিখিত আকারে জমা দিতে নির্দেশ দেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার সোরা গ্রামের মো. ফজলুর করিমের বাড়িতে হামলা হয়।
এজন্য ওই গ্রামেরই ইউসুফ আলীসহ তার সঙ্গীদের দায়ী করে হামলার সময় শ্যামনগর থানার ওসিকে ফোন দিয়ে সাহায্যও চেয়েছিলেন ফয়জুর। কিন্ত ওসি ‘অন্য কাজে ব্যস্ত’ বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। এরপর ফজলুর কালিগঞ্জ সার্কেলের এএসপিকে ফোনে বিষয়টি জানানোর পাশাপাশি ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চাইলে শ্যামনগর থানার এক এএসআই ঘটনাস্থলে যান। কিন্ত ততক্ষণে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
এরপর ফজলুরের বাড়িতে গিয়ে ওই এএসআই থানার ওসিকে ফোন করেন। এক পর্যায়ে এএসআইর ফোনে ওসির সঙ্গে কথা হয় ফজলুরের। ফোনে ওসি ফজলুরকে শাসিয়ে বলেন, ‘উপর মহলে নালিশ করিস, তোর মামলা হবে না, কোর্টে মামলা কর’।
পরদিন তিনি শ্যামনগর থানায় যোগাযোগ করলে তাকে চেয়ারম্যানের সঙ্গে বসে মীমাংসা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপর ফজলুর সালিশের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপারের কাছে পুরো ঘটনা তুলে ধরে লিখিত অভিযোগ করেন।
ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এসপি শ্যামনগর থানার ওসিকে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে লিখিত নির্দেশ দেন। তারপরও ওসি কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় গত ৩ মার্চ হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন ফজলুর।
পরে ১০ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষকে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানাতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষ শুনানিতে অভিযোগে আংশিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানান।