ভারতের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের নির্বিকার ভূমিকা দেশের সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রবিরোধী বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধন আইনকে অগণতান্ত্রিক, বৈষম্যমূলক, অসাংবিধানিক, মানবতাবিরোধী আখ্যায়িত করে সেদেশে এখন প্রতিবাদ চলছে। কোথাও কোথাও এই প্রতিবাদ সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। কেবল সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে টার্গেট করেই এই আইন প্রণীত হয়েছে বলে আজ জনমনে বিশ্বাস স্থাপিত হয়েছে।
রোববার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। ভারতের এনআরসি নিয়ে বিএনপির অবস্থান প্রকাশ করতেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার যতই এনআরসিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে সাফাই গাইতে থাকুক না কেন, সম্প্রতি বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে সন্তর্পণে এবং কখনও বা খোলামেলাভাবে বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পুশইন চলছে। এর বিরুদ্ধে ভারতেই প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের পাশাপাশি বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। আসামের গোয়ালপাড়ায় এরই মধ্যে ডিটেনশন সেন্টার (বন্দিশিবির) নির্মাণ করা হয়েছে। পুরো ভারতে আরও অনেক ডিটেনশন সেন্টার নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি বলেন, এমনিতেই ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে বাংলাদেশ ভারাক্রান্ত। প্রকৃতপক্ষে মিয়ানমার যেমন রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রহীন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে, একইভাবে নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি জটিলতায় সংখ্যালঘু ভারতীয় মুসলিমদের রাষ্ট্রহীন ঘোষণা করে জোর করে বাংলাদেশে পুশইন করার প্রক্রিয়া লক্ষ্য করছি। বাস্তবে এনআরসি ইস্যুতে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে জোরপূর্বক ঢুকিয়ে দেওয়া সংখ্যালঘু ভারতীয় মুসলিমদের মধ্যে কোনো মৌলিক ব্যবধান নেই।
লোকসভায় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের বক্তব্য প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সারাবিশ্বের দৃষ্টি এখন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও এনআরসি উদ্ভূত চলমান সংঘাতের ওপর নিবদ্ধ। জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে শুরু করে প্রভাবশালী দেশগুলো ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে নিন্দা জানাচ্ছে। ঠিক এমন সময়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে একটি সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী রাষ্ট্রের তকমা এঁটে দেওয়ার একটি সুদূরপ্রসারী ভয়াবহ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন কি-না, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। এই মিথ্যাচারের কারণে একদিকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণই হচ্ছে, অন্যদিকে ভবিষ্যতে এটি বাংলাদেশ ও তার নাগরিকদের নিরাপত্তাজনিত উৎকণ্ঠার কারণও হয়ে উঠতে পারে।
মির্জা ফখরুল বলেন, কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে বাংলাদেশের প্রিয়া সাহা এদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়নের নালিশ করছেন। এটা এদেশের জনগণকে বিক্ষুব্ধ করেছে। প্রধানমন্ত্রী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এসব কিছুর সঙ্গে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের একটি যোগসূত্র পাওয়া যায়।
এ সময় বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ‘নির্যাতন’ নিয়ে বিএনপিকে দোষারোপ করে অমিত শাহ ও দেশটির বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রাবীশ কুমারের বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকারের সময় বরাবরই বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ণ ছিল। এমনকি বাবরি মসজিদ সংকট এবং গুজরাট-দাঙ্গার সময়ও খালেদা জিয়ার আমলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।