ফাইনালের আগের দিন যখন বাংলাদেশ দলের অনুশীলন শেষ হলো, মিরপুরের আকাশে তখন মেঘের ঘনঘটা। বাংলাদেশের ড্রেসিং রুম থেকে অবশ্য অস্বস্তির মেঘ সরে গেছে অনেকটাই। প্রায় অপরাজেয় হয়ে ওঠা আফগানদের হারানো গেছে আগের ম্যাচে। আত্মবিশ্বাস নিয়েই তাই ফাইনালের লড়াইয়ে নামবে বাংলাদেশ। তবে র্যাঙ্কিং, স্কিল আর সামর্থ্য মিলিয়ে ফাইনালেও ফেবারিট আফগানিস্তানই।
প্রাথমিক পর্বের নানা চড়াই-উৎরাই শেষে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট এখন শেষ ধাপে। ফাইনালে মঙ্গলবার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। বিজয় মঞ্চে ট্রফি উঁচিয়ে ধরার লড়াইয়ে নামবেন সাকিব আল হাসান ও রশিদ খানের দল। খেলা শুরু যথারীতি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়।
ফাইনালের রোমাঞ্চে অবশ্য জল ঢেলে দিতে পারে বৃষ্টি। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বৃষ্টির শঙ্কা আছে দিনজুড়ে। শেষ পর্যন্ত খেলা না হলে যৌথভাবে বিজয়ী হবে দুই দল, নেই কোনো রিজার্ভ ডে।
বৃষ্টি সত্যিই বাগড়া দিলে, সমর্থক-অনুসারীদের জন্য যেমন হবে হতাশার, তেমনি হতাশা থাকবে দুই শিবিরেও। ট্রফি জয়ের আশা করছে যে দুই দলই।
জিততে হলে দিতে হবে শতভাগ ।
“৬০-৭০ ভাগ দিয়ে ওদের সঙ্গে জেতা সম্ভব না। জিততে হলে অনেক ভালো খেলতে হবে। আমরা ৬০ ভাগ দিলে আর আফগানিস্তান সামর্থ্য অনুযায়ী খেললে, ওরা আমাদের হারিয়ে দেবে। আমাদের চ্যালেঞ্জ এটিই, সবসময় উন্নতি করে যেতে হবে। আমরা গত ম্যাচে সম্ভবত আমাদের সামর্থ্যের ৬০-৭০ ভাগ দিতে পেরেছি। কিন্তু আফগানরাও কেবল তাদের সামর্থ্যের ৫০-৬০ ভাগ দিতে পেরেছিল। আমরা যদি আমাদের একাগ্রতা বাড়াতে না পারি, আফগানিস্তান অবশ্যই হারাতে পারে আমাদের, কোনো সংশয় নেই।”
টুর্নামেন্টের মাঝপথেও বাংলাদেশের জন্য সেই আশার ছবি ছিল ভীষণ বিবর্ণ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারতে হারতে কোনো রকমে জয় দিয়ে শুরু হয়েছিল টুর্নামেন্ট। পরের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে লড়াইও করতে পারেনি দল। আফগানদের বিপক্ষে সেটি ছিল বাংলাদেশের টানা চতুর্থ টি-টোয়েন্টি হার। এই টুর্নামেন্টের আগে একমাত্র টেস্টে পরাজয় তো ছিলই। সব মিলিয়ে আফগানরা চলে গিয়েছিল যেন বাংলাদেশের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সেই ব্যবধান নাগালে এসেছে চট্টগ্রাম পর্বে। আফগানিস্তান সেখানে হেরেছে দুটি ম্যাচই। বাংলাদেশ জিতেছে দুটিই। জিম্বাবুয়েকে সহজে হারানোর পর শেষ ম্যাচে ধরা দিয়েছে আফগানদের বিপক্ষে বহু কাঙ্ক্ষিত জয়। পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থেকে তাই ফাইনালে খেলছে বাংলাদেশ।
তাতে দুই দলের টি-টোয়েন্টি বাস্তবতা বদলে যায়নি। আফগানিস্তান এখনও এই সংস্করণে এগিয়ে। তবে বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমে এই বিশ্বাসটুকু ফিরেছে, আফগানদের হারানো যায়!
সেই বাস্তবতা জানেন বলেই ফাইনালের আগের দিন কোনো উচ্চাশা দেখাননি কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। বাংলাদেশ কোচের আশা, ফাইনালে যেন শতভাগ দিতে পারেন ক্রিকেটাররা। প্রচেষ্টায় কোনো ঘাটতি থাকলে জয়ের সম্ভাবনা দেখছেন না কোচ।
“আমরা এখনও নিখুঁত ক্রিকেট খেলতে পারিনি। কিছু কিছু জায়গায় আমরা ভালো ছিলাম, কিছু কিছু ক্ষেত্রে গড়পড়তা। আমরা এখনও সেরা খেলাটা দেখানোর পথ খুঁজছি।”“৬০-৭০ ভাগ দিয়ে ওদের সঙ্গে জেতা সম্ভব না। জিততে হলে অনেক ভালো খেলতে হবে। আমরা ৬০ ভাগ দিলে আর আফগানিস্তান সামর্থ্য অনুযায়ী খেললে, ওরা আমাদের হারিয়ে দেবে। আমাদের চ্যালেঞ্জ এটিই, সবসময় উন্নতি করে যেতে হবে। আমরা গত ম্যাচে সম্ভবত আমাদের সামর্থ্যের ৬০-৭০ ভাগ দিতে পেরেছি। কিন্তু আফগানরাও কেবল তাদের সামর্থ্যের ৫০-৬০ ভাগ দিতে পেরেছিল। আমরা যদি আমাদের একাগ্রতা বাড়াতে না পারি, আফগানিস্তান অবশ্যই হারাতে পারে আমাদের, কোনো সংশয় নেই।”
কোচ বিশেষ করে উন্নতি চান ব্যাটিংয়ে। টপ অর্ডার টুর্নামেন্ট জুড়েই ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচে ছোট লক্ষ্য তাড়ায়ও বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছিল। জয় এসেছে সাকিবের দারুণ এক ইনিংসে।
ডমিঙ্গো তাই ফাইনালে দেখতে চান, ওপরের ব্যাটসম্যানরা যেন শেষ দিকে ঝড় তোলার প্রেক্ষাপট তৈরি করে দিতে পারেন।
“আমরা এখনও ২-৩ উইকেট হারিয়ে শেষ ৫-৬ ওভারে যেতে পারিনি। প্রথম ১০ ওভারে আমরা অনেক বেশি উইকেট হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের চাওয়া, ২ উইকেটে হারিয়ে ১৫ ওভার শেষ করা। তাতে শেষ দিকে ঝড় তোলার ভিত গড়ে উঠবে। এটায় মনোযোগ দিতে হবে। আশা করি ফাইনালে সেটি পারব।”
এই সংস্করণে ও এই কন্ডিশনে আফগানদের কোনো দুর্বলতা আপাত দৃষ্টিতে নেই। কেবল মাত্র মোমেন্টামই হয়তো নেই তাদের সঙ্গে। টানা ১২ টি-টোয়েন্টি জয়ের বিশ্বরেকর্ড গড়ার পর একটু ছন্দপতন হয়েছে চট্টগ্রামের দুই হারে।রশিদ খান যদিও সেটিকে খুব বড় করে দেখছেন না। মৌলিক দিকগুলো ঠিক করতে পারলে নিজেদেরই জয় দেখছেন আফগান অধিনায়ক।
“গ্রুপ পর্ব শেষ, তা নিয়ে না ভেবে আমরা ফাইনালে মনোযোগ দিচ্ছি। আমাদের স্রেফ মৌলিক ব্যাপারগুলো ঠিক রাখতে হবে, প্রথম দুই ম্যাচে যেটি করতে পেরেছিলাম। পরের দুই ম্যাচে না পারলেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, আমরা আগেই ফাইনালে উঠেছি। আগের জয়-হার ফাইনালে কাজে লাগবে না।”
বাংলাদেশের সঙ্গে সেই হারের ম্যাচে পায়ে টান লেগেছিল রশিদের। তবে নতুন করে কিছু না হলে ফাইনালে তার খেলা নিয়ে শঙ্কা খুব একটা নেই।
উল্টো চিত্র বাংলাদেশ দলে। দারুণ অভিষেকের পর আর মাঠে নামা হয়নি আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের। তার ইনজুরি স্পিনিং হাতে নয়, ফাইনালে হয়তো খেলানো যেত। তবে শতভাগ ফিট ক্রিকেটারদের নিয়েই মাঠে নামতে চান বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ কোচ। ফাইনালে তাই এই লেগ স্পিনারের খেলার সম্ভাবনা নেই।
ম্যাচের আগের দিন কিছুটা ঘাস দেখা গেছে ফাইনালের উইকেটে। কোচ তাই জানালেন, চার পেসারের কথাও ভাবছে দল। যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে ম্যাচের দিনের উইকেট ও কন্ডিশন দেখে।তবে একাদশের চেহারা যেমনই হোক, আফগানিস্তানকে হারাতে হলে, একাদশের প্রায় সবাইকে থাকতে হবে নিজেদের সেরা চেহারায়।
ফাইনাল জিতলে বা হারলেই টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ খুব ভালো বা খারাপ দল হয়ে উঠবে না। তবে জিতলে সামনে এগিয়ে চলার পথে অনুপ্রেরণার রসদ মিলবে। দেশের ক্রিকেটের অস্থির সময়ে একটু স্বস্তির বাতাসও বইবে।