এবার নতুন দল নিয়ে আসছে জামায়াতের ‘সংস্কারপন্থিরা’

Mojibur-Rahman-Monju-27042019-0002

এক বছর আগে নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম গঠনের পর প্রায় হারিয়ে যাওয়া জামায়াতে ইসলামীর ‘সংস্কারপন্থিরা’ এবার নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে।

আগামী শনিবার নতুন এই দলের আত্মপ্রকাশ হবে বলে জানিয়েছেন জামায়াত থেকে বহিষ্কৃত মজিবুর রহমান মঞ্জু।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মঞ্জু একসময় চট্টগ্রাম কলেজ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরেরও সভাপতি ছিলেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্যও ছিলেন তিনি।

তিনি ২০১৮ সালে বহিষ্কৃত হওয়ার পর ২০১৯ সালের ২৭ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে ‘জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করে তিন মাসের মধ্যে নতুন দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।  তারপর তাদের আর কোনো সক্রিয়তা দেখা যায়নি।

এক বছর পর করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে সোমবার এক ভিডিও সংবাদ ব্রিফিংয়ে মঞ্জু বলেন, “আগামী ২ মে আমাদের নতুন দলের নাম, কর্মসূচি ও আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হবে। আমরা কী করতে চাই তা দেশবাসীর কাছে তুলে ধরব।”

মঞ্জু জানান, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের লক্ষ্যে এক বছর দেশ-বিদেশে নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন তারা।

জামায়াতে ইসলামীতে যারা সংস্কারের দাবি তুলেছিলেন, নতুন দলে তারা থাকবেন বলে জানান তিনি।

ভিডিও সংবাদ ব্রিফিংয়ে জামায়াত থেকে পদত্যাগকারী সাবেক সচিব এএফএম সোলাইমান চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত মেজর আব্দুল ওহাব মিনার, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে আইনি লড়াই চালানো ব্যারিস্টার তাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে মঞ্জু বলেন, লন্ডনে অবস্থানরত জামায়াতের পদত্যাগী সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ রয়েছে।

“তার পরামর্শও আমরা গ্রহণ করছি।”

নতুন দলটি ধর্মভিত্তিক হবে না জানিয়ে মঞ্জু বলেন, “আমাদের দল ধর্মভিত্তিক দল হবে না। আমাদের স্বাধীনতার মূল নীতির আলোকে জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণই এই দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আমরা এটাকে বলতে চাই, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রের আলোকে দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র বিনির্মাণের লড়াই।”

শুরুতে ১১০ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে নতুন দলের কর্মকাণ্ড শুরু হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীতে সংস্কার নিয়ে ১৯৭৯ সাল থেকে বিরোধ চলে। ১৯৭৭ সালে ধর্মভিত্তিক দল গঠনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর জামায়াত নেতারা মাওলানা আবদুর রহিমের নেতৃত্বে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ গঠন করেন।

স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বনকারী জামায়াত নেতা গোলাম আজম ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে জামায়াতে ইসলামীকে পুরুজ্জীবিত করেন; দলচ্যুত হন মাওলানা আবদুর রহিম।

সংস্কারের দাবিতে ১৯৮১ সালে ছাত্রশিবিরে এবং ২০০৭ সালে জামায়াতে ফের অস্থিরতা দেখা দেয়। ২০১০ সালেও জামায়াতের নেতৃস্থানীয় পর্য়ায়ে সংস্কারে দাবি উঠেছিল।

প্রতিবারই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই দাবি গুঁড়িয়ে দিয়েছে এবং সংস্কারের সঙ্গে যুক্ত নেতাদের শক্ত হাতে দমন করেছে।

যুদ্ধাপরাধের দায়ে গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আলী আহসান মো. মুজাহিদ, এম কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা, মীর কাসেম আলীর মতো শীর্ষনেতারা দণ্ডিত হলে জামায়াত ব্যাপক চাপে পড়ে। এর মধ্যে একটি অংশ দলে সংস্কারের দাবি তোলে।

২০১৮ সালে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রাজ্জাক একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চেয়ে জামায়াত ছাড়ার ঘোষণা দিলে সংস্কারপন্থিরা আরও জোর পায়। তখনই রাজ্জাকের মতো মত প্রকাশের জন্য দল থেকে বহিষ্কৃত হন মঞ্জু; তারপর তিনি বিকল্প দল গঠনের উদ্যোগ নেন।

Pin It