ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ-সদস্য মো. আনোয়ারুল আজীম আনার ভারতে গিয়ে নিখোঁজের পাঁচদিনেও কোনো সন্ধান না মেলায় বাড়ছে শঙ্কা।
উদ্বেগে রয়েছে পরিবার। তাকে উদ্ধারে যেৌথভাবে কাজ করছে দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে কী ঘটেছে সংসদ-সদস্য আনারের ভাগ্যে, এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি তারা। তিনি কোথায় কী অবস্থায় রয়েছেন, বেঁচে আছেন না কোনো বড় অঘটন ঘটেছে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারছেন না গোয়েন্দারা।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধ ও ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব এ দুটি বিষয়কে সামনে রেখেই চলছে তদন্ত।
এদিকে তার স্বজনদের ধারণা, রাজনৈতিক বিরোধের জেরে নিখোঁজ হয়েছেন সংসদ-সদস্য আনার। প্রতিপক্ষরা পরিকল্পিতভাবে ভারতে কোনো অঘটন ঘটাতে পারেন এমন আশঙ্কা আনারের বড় ভাই এনামুল হক ইমানের।
তিনি মঙ্গলবার বিকালে বলেন, আমরা গোয়েন্দা পুলিশের মাধ্যমে জানতে পেরেছি আনার নিখোঁজের আগে ১৬ মে সকালে ঝিনাইদহ পেৌরসভার সাবেক মেয়র সাইদুল করিম মিন্টুকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু মিন্টুর সঙ্গে তার (আনোয়ারুল আজীম) এতটাই বিরোধ যে তাকে ফোন করার কথা না।’
এনামুল হক বলেন, যেহেতু ভারত থেকে মিন্টুকে ফোন করেছে, আমার মনে হচ্ছে ভাই বুঝতে পেরেছিল তার বিপদ হচ্ছে। হয়তো জানভিক্ষা চাওয়ার জন্য ফোনটা দিতে পারে।’ সংসদ-সদস্য আনারকে মিন্টুর লোকেরা হয়তো মেরে ফেলেছে এমন ধারণার কথাও বলেন এনামুল হক।
বিরোধের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিন্টু পাঁচ বছরের জন্য মেয়র হওয়ার পর মামলা করে কেৌশলে ভোট ছাড়াই ১২ বছর পার করেন। পরবর্তী সময়ে স্থানীয়দের বিদ্রোহের জেরে ২০২৩ সালে তার মেয়র পদ চলে যায়। নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও দলের (আওয়ামী লীগ) সমর্থন না পাওয়ায় নির্বাচন করার সুযোগ পাননি মিন্টু। এ বিষয়ে আনারকে দোষারোপ করতেন মিন্টু। এ নিয়েই তাদের দ্বন্দ্ব ছিল।
এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে ঝিনাইদহ পেৌরসভার সাবেক মেয়র সাইদুল করিম মিন্টুকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জানা যায়, অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি সংসদ-সদস্য আনারের নিখোঁজের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
সম্প্রতি তার মেয়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডিবির একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, বিষয়টি নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ ভারতের পুলিশের সঙ্গে একত্রে কাজ করছে।
এদিকে ভারতে চিকিত্সা করাতে গিয়ে নিখোঁজ সংসদ-সদস্য আনোয়ারুল আজীমের বিষয়ে সরকারি সব সংস্থা কাজ করছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। মঙ্গলবার সচিবালয়ে মনি্ত্রপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, Èআমাদের ও ভারতের ইমিগ্রেশন পার হয়ে যথাযথভাবেই তিনি ভারত যান। তার পরিবার থেকে আমাদের জানানো হয়েছিল যে তার কোনো খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি সব সংস্থা এটি নিয়ে কাজ করছে। আমাদের এনএসআই, এসবি ও পুলিশ কাজ করছে। ভারতীয় পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি, ভারত সরকারের মাধ্যমে শিগ&গিরই তার বিষয়ে জানতে পারব।’
চিকিত্সা ও বন্ধুর মেয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যে ১২ মে ভারত যান আনার। কলকাতার ব্যারাকপুর সংলগ্ন মণ্ডলপাড়ায় পূর্বপরিচিত স্বর্ণ কারবারি গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন তিনি। পরদিন ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফের সঙ্গে তার কথা হয়। ১৬ মে সকাল ৭টা ৪৬ মিনিটে সংসদ-সদস্য আনারের ফোন থেকে পিএসের নম্বরে সর্বশেষ কল আসে। কলটি ধরতে পারেননি পিএস। এক মিনিট পর পিএস তাকে কল করলে ওপাশ থেকে রিসিভ হয়নি। এরপর থেকে সংসদ-সদস্যের সঙ্গে আর যোগাযোগ নেই।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, সংসদ-সদস্য আনার ভারতে যাওয়ার পর তার মোবাইল ফোন সিমের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান পাওয়া গেছে। তার অবস্থান কখনো মোজাফফরাবাদ, কখনো বেনাপোলের কাছাকাছি আবার কখনো কলকাতা দেখা গেছে। আসলে তিনি কোথায়, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনের অবস্থান পরিবর্তন করার পেছনে কী রহস্য আছে, এরও তদন্ত চলছে।
সংসদ-সদস্যের পিএস আব্দুর রউফ বলেন, ‘ভারত থেকে স্যার আমাকে সর্বশেষ ফোন করেন ১৬ মে সকাল ৭টা ৪৬ মিনিটে। কিন্তু আমি ধরতে পারিনি। এক মিনিট পরই কল ব্যাক করি। কিন্তু তিনি আর ধরেননি।’
তিনি জানান, ১৫ বছর ধরে পিএস হিসাবে আছেন আব্দুর রউফ। এর আগেও একাধিকবার ভারতে গেছেন আনোয়ারুল আজীম। কিন্তু কখনোই পিএস আব্দুর রউফকে নিয়ে যেতেন না।
উলে্লখ্য, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ওয়ারেন্টভুক্ত ছিলেন আনার। হুন্ডি কারবার, চোরাচালান ও পাচারের অভিযোগে ইন্টারপোল তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেছিল। তিনি ঝিনাইদহ-৪ আসনে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা তিনবার আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন।