তার অবর্তমানে দলীয় প্রধানের দায়িত্ব কে পালন করবেন এ প্রশ্নে সিদ্ধান্ত বদল করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হসেইন মুহম্মদ এরশাদ। গত ৮ ডিসেম্বর তিনি যে ‘সাংগঠনিক নিদের্শনা’ জারি করেছিলেন, তাতে বলেছিলেন তার অবর্তমানে চেয়ারম্যানের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করবে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। শুক্রবার সিদ্ধান্ত বদলে জানান, তার অবর্তমানে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন জিএম কাদের।
এরশাদের উপ-প্রেস সচিব খন্দকার দেলোয়ার জালালী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অবর্তমানে এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি বিদেশে থাকাকালীন সময়ে দলের কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারার ক্ষমতাবলে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এই নিয়োগ প্রদান করেছেন। যা ইতোমধ্যেই কার্যকর হয়েছে।’
কয়েক মাস ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছেন বিরোধীদলীয় নেতা এরশাদ। গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে তিন দফা সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করান। নভেম্বর ও ডিসেম্বর পাঁচবার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি হন। ভোটের আগে দুই সপ্তাহ সিঙ্গাপুর চিকিৎসা নেন। নির্বাচনে পাঁচ দিন আগে দেশে ফিরলেও বাসা না থাকায় সিএমএইচে থাকছেন এরশাদ। তার দলের নেতারা যদিও দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সুস্থ আছেন, কিন্তু গত ৬ জানুয়ারি হুইল চেয়ারে করে সংসদে গিয়ে শপথ নেন এরশাদ। এরপর থেকে জনসম্মুখে আসেননি সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।
জাতীয় পার্টির সূত্র জানিয়েছে, ৮৯ বছর বয়েসী এরশাদের শারিরিক অবস্থা ভাল নয়। তার অবস্থা গুরুতর না হলেও স্বাভাবিক হাটাচলা করতে পারছেন না। স্বাভাবিক খাওয়া দাওয়াও করতে পারছেন না। তার রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণও স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম। হাঁটু ও চোখের সমস্যাও ভোগাচ্ছেও সাবেক সেনাশাসক এরশাদকে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তিনি চিকিৎসার জন্য ফের সিঙ্গাপুর যেতে পারেন দীর্ঘ সময়ের জন্য। যাওয়ার আগে ছোট ভাই জিএম কাদেরকে দলে প্রতিষ্ঠিত করে যাচ্ছেন। জিএম কাদেরও জানিয়েছেন, চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পারেন এরশাদ।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ২২ আসন পেয়ে বিএনপিকে টপকে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে জাতীয় পার্টি। স্ত্রী রওশন এরশাদকে সরিয়ে নিজেই বিরোধীদলীয় নেতার পদে বসেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ। বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব দিয়েছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে। ইতোমধ্যে তাদের বিরোধীদলীয় নেতা ও উপনেতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার।
গত ২ জানুয়ারি এরশাদ দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া চিঠিতে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে উত্তরসূরি মনোনীত করেন। তাকে দলের আগামী কাউন্সিলে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতেও আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে জাতীয় পার্টিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরোধ রয়েছে বলে দলটির সূত্রের খবর। রওশন এরশাদের অনুসারীরা তাকেই ফের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে চেয়েছিলেন। যোগ দিতে চেয়েছিলেন সরকারেও। এরশাদ তাদের কোনো চাওয়াই পূরণ করেননি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে বিরোধী দলে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দশম সংসদে একই সঙ্গে সরকারে ও বিরোধী দলে থেকে ‘গৃহপালিত বিরোধী দলের’ তকমা পেয়েছিল জাতীয় পার্টি।