এসএসএফকে প্রযুক্তিগতভাবে যুগোপযোগী হতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

pm-5d050cdc95f58

প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই যুগে অপরাধের ধরন পাল্টাতে থাকায় একে মোকাবেলার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) সদস্যদের আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন হয়ে গড়ে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অপরাধীদের নতুন প্রযুক্তিগত দক্ষতাকে মোকাবেলা করার জন্য এসএসএফ সদস্যদের আরো পারদর্শী হওয়া দরকার এবং সেইদিক থেকেও আমাদেরকে যুগোপযোগী থাকতে হবে।’

প্রতিটি জিনিসের ভাল ও খারাপ দুটি দিকই থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসের ধরন বদলাচ্ছে, নতুন প্রযুক্তি যেমন আমাদেরকে উন্নয়নের যাত্রাপথকে সুগম ও গতিশীল করে দেয় তেমনি একইভাবে যারা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, অসামাজিক কাজসহ নানা অপরাধে সম্পৃক্ত তাদের ক্ষেত্রেও নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী শনিবার দুপুরে রাজধানীর তেঁজগাঁওয়ে এসএসএফ অফিসার্স মেস-এ এসএসএফ’র ৩৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একথা বলেন।
এসএসএফ’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন এবং এই বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সবিস্তারে তুলে ধরেন। খবর বাসসের

মন্ত্রি পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, তিনবাহিনী প্রধানগণ, মুখ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্ট সচিববৃন্দ,পদস্থ সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ এবং এসএসএফ-এর সদস্যবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই যুগে মানুষের জীবনে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন হওয়ায় আমাদের জীবন-মানের উন্নয়ন ঘটছে, জীবনযাত্রাকে অগ্রগামী করছে, উন্নয়নের ধারাকে অগ্রগামী করছে পাশাপাশি নানা ধরনের ঝুঁকিরও সৃষ্টি করছে।’

তিনি এ সময় এসএসএফ সদস্যদের আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন হয়ে গড়ে উঠে এই প্রযুক্তিকে যারা মন্দ কাজে ব্যবহার করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানান।

সরকার প্রধান বলেন, ‘এসএসএফকে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে। এই বাহিনীতে নতুন নতুন প্রযুক্তির যেমন সন্নিবেশন ঘটাতে হবে সেইসাথে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় অপরাধের পরিবর্তিত অবস্থা সম্পর্কেও তাদের প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। আর সেইসাথে যেকোন অবস্থা মোকাবেলার সরঞ্জামাদিও দরকার।’

‘তাই যখন যেটা প্রয়োজন সেটার আমরা ব্যবস্থা করছি। ক্ষেত্র বিশেষে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েও তা করা হচ্ছে, ’যোগ করেন তিনি।

প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘যুগোপযোগী প্রশিক্ষণটা এজন্য সবসময় গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ, নিজস্ব পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা, আন্তর্জাতিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রসংগ উল্লেখ করে, দেশি ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের যেকোন প্রকার ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার জন্যও অনুষ্ঠানে উপস্থিত এসএসএফ সদস্যদের প্রতি আহবান জানান।

সরকার প্রধান বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যারা আমাদের সমর্থন দেয়নি তাদের চক্রান্ত, কুটিলতা, জটিলতা থাকবে। কিন্তু সেগুলো মোকাবেলায় আমাদের সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিতে হবে এবং সকলে সচেতন থাকবে, সেটাই আমরা চাই।’ এ সময় তিনি মাদকের ভয়াবহতা রোধ কল্পেও সকলকে সচেতন থাকার আহবান জানান।

রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে এবং নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এসএসএফ সদস্যদের কর্তব্য নিষ্ঠার ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তাতে ’৭৫ সালে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর ১৯ বার ক্যু হয়েছে, নানা ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা ঘটেছে। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের উত্থান ঘটেছে। বার বার নানা প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এসব চক্রান্ত মোকাবেলা করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের নিরাপত্তা দেয়া- এটা একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ।’

‘তবে, আমি এটুকু বলবো যে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের এসএসএফ সবসময়ই অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছে’, যোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এই বাহিনীর সকল সদস্যদের অত্যন্ত দৃঢ় মনোবল দেখেছি এবং তাদের আনুগত্য এবং উচ্চমানের পেশাদারিত্ব আমাকে সত্যিই গর্বিত করেছে।’

বিদেশ থেকে আগত অতিথিরাও এসএসএফ সদস্যদের দায়িত্ব পালনের প্রশংসা করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের এসএসএফ’র সদস্যরা তাদের দক্ষ পেশাদারিত্বের মাধ্যমে সবসময় দেশের ভাবমূর্তিকে সমুন্নত রেখেছেন।’

ভিআইপিদের নিরাপত্তাসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গে নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখায় তিনি এসএসএফ সদস্যদের এ সময় আন্তরিক ধন্যবাদ ও জানান।

নিজেকে নিয়ে নয় বরং তার আশেপাশে যারা নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত থাকেন তাদেরকে নিয়েই তার সবসময় চিন্তা হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সকলের উন্নতি-সমৃদ্ধি এবং নিরাপদ জীবন কামনা করেন।

তিনি বলেন, ‘কতক্ষণ আছি জানি না। তবে, যে সময়টুকু পাব আমি দেশের জন্য কাজ করে যাব। নিজেকে নিয়ে বেশি চিন্তা করি না কারণ, আমার ভাগ্যে যা আছে তা ঘটবে। তোমাদের জন্যই (যারা নিরাপত্তায় নিয়োজিত) আমার চিন্তা, আল্লাহ তোমাদের হেফাজত করুন।’

তিনি এসএসএফ সদস্যদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কল্যাণ কামনা করে বলেন, ‘আমি চাই এই বাহিনীটা একটা আদর্শ নিরাপত্তা বাহিনী হিসেবে যেভাবে গড়ে উঠছে সেভাবে এটা গড়ে উঠে দেশ ও জাতির মুখ উজ্জ্বল করবে।’

দেশের জনগণ, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থা অত্যন্ত দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদসহ নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেছে বলেই দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে এবং সততার সঙ্গে যদি কাজ করা যায় তাহলে একটা দেশকে যে উন্নত করা যায় সেটা আমরা হত এক দশকে প্রমাণ করেছি।’

অবশ্য জাতির জীবনে ’৭৫ এর কালো রাত না এলে বাংলাদেশ আরো আগেই এই সক্ষমতা অর্জনে সমর্থ হত বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতির পিতার স্বপ্নের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা যেন কোনভাবেই ব্যর্থ না হয়, মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের ইতিহাস কেউ যেন ভুলে না যায়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শান্তির ধর্ম ইসলামে সন্ত্রাসের কোন স্থান নেই এবং আল্লাহ তায়ালাই শেষ বিচারের মালিক, কে ভাল মুসলমান কে ভাল নয়, সেটা নির্ণয়ের দায়িত্ব তিনি কাউকে দেন নাই। তাহলে আজকে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে কেন এত সংঘাত, খুনোখুনি, রক্তারক্তি। কেন সমস্যাগুলি নিজেরা বসে আমরা সমাধান করতে পারি না।’

মুসলমানদের এই রক্তপাতে লাভবান হচ্ছে কেবল অস্ত্র ব্যবসায়ীরা উল্লেখ করে তিনি এই সংঘাত বন্ধে ওআইসিকে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘আমি জানি এই কথা বলে আমি আমার জীবনকে আরো ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছি। এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ছাড়া কাউকে ভয় করি না। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করি না, আমার বাবাও যেটা করেন নি।’

জাতির পিতার দিয়ে যাওয়া পররাষ্ট্র নীতি সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়, অনুসরণ করেই তিনি সরকার পরিচালনা করছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সকলকে নিয়ে একটা শত্রুই নির্দিষ্ট করতে চাই, সেটা হচ্ছে দারিদ্র। যেটা সমগ্র বিশ্বের একটি কমন এনিমি।’

Pin It