এস আলম ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা

saiful-alam-masud-s-alam-150824-1723728764

প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা আদায়ে জনতা ব্যাংকের মামলায় চট্টগ্রামের অর্থ ঋণ আদালতের বিচারক এ আদেশ দেন।

প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদসহ এ শিল্পগোষ্ঠীর বিভিন্ন কোম্পানির শীর্ষ ১০ কর্মকর্তা এবং ১৪ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক।

রোববার করা এ মামলার আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত সাইফুল আলম মাসুদের (এস আলম) ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চার কোটি ৯৬ লাখ ১০ হাজার ৬৬টি শেয়ার এবং তার ভাই আবদুস সামাদ লাবুর আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক পিএলসির ২ কোটি ৪৬ লাখ ৮৪ হাজার ৬৮টি শেয়ার পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।

চট্টগ্রামের অর্থ ঋণ আদালতের বিচারক যুগ্ম জেলা জজ মুজাহিদুর রহমান রোববার এ আদেশ দেন।
প্রায় ১৯৬৩ কোটি টাকা ঋণ খেলাপির বিষয়ে দায়ের করা এ মামলার আদেশের তথ্য দিয়ে অর্থ ঋণ আদালতের পেশকার মো. রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিবাদিরা যাতে এসব শেয়ার হস্তান্তর বা দায়বদ্ধ করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আদেশ দিয়েছেন আদালত।”

মামলার বাদী জনতা ব্যাংকের আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১৯৬৩ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ে মামলা করা হয়েছে। পাশাপাশি দুটি ব্যাংকে থাকা সাইফুল আলম মাসুদ ও আবদুস সামাদ লাবু শেয়ার ক্রোকের আবেদন করেছি। আদালত শুনানি শেষে আদেশ দিয়েছেন।”

লিখিত আদেশে বলা হয়, “দুই বিবাদীর শেয়ার কেন রায়ের আগে ক্রোক করা হবে না তার জন্য কারণ দর্শাতে বিবাদী সাইফুল আলম মাসুদ ও আবদুস সামাদ লাবুকে নির্দেশ প্রদান করা হল।”

মামলা ও আদালতের আদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে এস আলম গ্রুপের ব্যবস্থাপক (এডমিন) এম হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইনগত বিষয় আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হব। আর কোনো বক্তব্য নেই।”

আসামিদের মধ্যে চট্টগ্রামের আছাদগঞ্জ এলাকার গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুছ ছবুর ছাড়া সবাই এস আলমের ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্য। সরকার পতনের আগে ও পরে থেকে যারা বিদেশে চলে গেছেন বলে খবরে এসেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তাদের প্রকাশ্যেও দেখা যায়নি। এ কারণে মামলার বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।

জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ঢাকা এবং চট্টগ্রামের শেখ মুজিব রোডের সাধারণ বীমা ভবন কার্যালয়ের পক্ষে মামলাটি করা হয়। পাশাপাশি দুটি পৃথক আবেদনে দুটি ব্যাংকে থাকা এস আলম ও আবদুস সামাদ লাবুর শেয়ার জব্দের আবেদন করা হয়।

মামলায় বিবাদি করা হয়েছে- চট্টগ্রামের আছাদগঞ্জ এলাকার গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন ও এটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুছ ছবুর এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাশেদুল আলমকে। এদের মধ্যে রাশেদুল এস আলমের ভাই।

পাশপাশি বিবাদি করা হয়েছে এস আলম রিফাইনড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের পরিচালক এস আলমকে।

অন্যরা হলেন- এস আলম রিফাইনড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক মো. আবদুল্লাহ হাছান, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের পরিচালক আবদুস সামাদ লাবু, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান গণি, এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডের পরিচালক শাহানা ফেরদাউস, মিশকাত আহমেদ ও ফারজানা পারভিন এবং ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহীদুল আলম।

এছাড়া এস আলম ট্রেডিং কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড, এস আলম রিফাইনড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড, এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড, এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড, এস আলম স্টিলস লিমিটেড, এস আলম সিমেন্ট লিমিটেড, এস আলম ব্রাদার্স লিমিটেড, এস আলম সয়া সিড লিমিটেড, এস আলম ব্যাগ ম্যানুফেকচারিং মিলস লিমিটেড, এস আলম পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড, এস আলম লাক্সারি চেয়ার কোচ সার্ভিস লিমিটেড এবং চেমন ইস্পাত লিমিটেডের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, “সাইফুল আলম মাসুদের ‘আনডিউ ইনফ্লুয়েন্স ও প্রেসারে’ (অনৈতিক প্রভাব ও চাপে) বাধ্য হয়ে ব্যাংকের সেসময়ের ব্যবস্থাপনা পর্ষদ বড় অংকের ঋণ সুবিধা প্রদানে বাধ্য হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকও অনুরূপ অনৈতিক চাপে বাধ্য হয়ে উক্ত বড় অংকের ঋণ মঞ্জুরিতে অনুমোদন প্রদানে বাধ্য হয়।”

মামলায় এস আলম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন জনতা ব্যাংকের চট্টগ্রাম শেখ মুজিব রোডের সাধারণ বীমা ভবন শাখা থেকে ৬৫০ কোটি টাকার এই ঋণ নিয়েছিল। এতদিনে সুদে আসলে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৯৬৩ কোটি টাকা।

অভিযোগে বলা হয়, কয়েক মেয়াদে পুন:তফশিলের পর সবশেষ ২০২৩ সালের ২৫ জুলাই ওই ঋণ পুন:তফসিল করা হয়। এরপর গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ঋণের কিস্তি আর শোধ করেনি বিবাদিরা।

Pin It