চারপাশে ওজন কমানোর উপায়ের কোনো কমতি নেই। অসংখ্য উপায়ের ভীড়ে কিছু উপায় ওজন কমালেও অন্য দিক দিয়ে আবার শরীরের ক্ষতি করছে। ফলে শরীরের ওপর বয়সের ছাপ পড়ছে স্বাভাবিক সময়ের আগেই।
ক্যালরির হিসাব: যুক্তরাষ্ট্রের সনদস্বীকৃত পুষ্টিবিদ হুইটনি স্টুয়ার্ট বলেন, “খাওয়ার আগে পরে সারাদিনের ক্যালরির হিসাব করে নেওয়াটা কিছু মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তবে তার তুলনায় বহুগুন গুরুত্বপূর্ণ হল একটি সুস্থ ভারসাম্য বজায় রাখে এমন খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা।”
ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “অনেক মানুষকে দেখছি যারা ক্যালরি গুনে গুনে খাবার খাচ্ছেন ওজন কমানোর জন্য কিন্তু খাচ্ছেন প্রক্রিয়াজাত, পুষ্টিমানের দিক থেকে নিম্নমানের খাবার। এই খাবারগুলো থেকে পর্যাপ্ত মাত্রায় ভোজ্য আঁশ, আনস্যাচুরেইটেড ফ্যাট, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ইত্যাদি মিলছে না। শরীরকে তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করলে ওজন কমানো সহজ হবে, দীর্ঘায়ু মিলবে।”
অবহেলায় প্রোটিন: যুক্তরাষ্ট্রের ‘নিউট্রিশন স্টারিং ইউ’য়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং ‘দ্য এভরিথিং ইজি প্রি-ডায়াবেটিস কুকবুক’য়ের রচয়িতা লরেন হ্যারিস-পিনকাস বলেন, “ওজন কমানোর ক্ষেত্রে মারাত্মক একটি ভুল হল ক্যালরির উৎস বিবেচনা না করেই তার ঘাটতি তৈরি করা।”
যখন ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন তখন উচ্চমাত্রায় প্রোটিন খাওয়া জরুরি। এখন ক্যালরি গ্রহণ কমাতে গিয়ে প্রোটিন খাওয়া কমিয়ে দিলেও বাঁধল বিপত্তি।
নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসে চর্বি আর পেশি দুটোই কমে। আর পেশি কমলে বিপাকক্রিয়ায় গতি কমে, শারীরিক শক্তি কমে, হাড়ের ক্ষয় বাড়ে।
তাই প্রতিবেলার খাবারে অবশ্যই ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম প্রোটিন থাকতেই হবে। ‘হোল গ্রেইন’, ভোজ্য আঁশযুক্ত উদ্ভিজ্জ খাবার, আর হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী চর্বি আছে এমন প্রোটিনের উৎস বেছে নিতে পারলে তা হবে আদর্শ।
খাবারের বদলে অন্য কিছু: যুক্তরাষ্ট্রের ‘হেল্থ ক্যানাল’য়ের পুষ্টিবিদ সারা চ্যাটফিল্ড বলেন, “খাবারের বদলে ‘মিল রিপ্লেসমেন্ট’ যেমন- শেইক, বার ইত্যাদি খাওয়া শরীরের জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমনি তা খেয়ে নামিয়ে আনা ওজন ধরে রাখাও কঠিন।”
কারণ অধিকাংশ ‘মিল রিপ্লেসমেন্ট’ পণ্যই প্রচণ্ডমাত্রায় প্রক্রিয়াজাতকরণের মধ্য দিয়ে যায়। তাতে যোগ করা হয় বাড়তি চিনি। এগুলো নিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের অংশ হলে নানান দূরারোগ্য ব্যাধি শরীরে বাসা বাঁধবে।
কার্বোহাইড্রেইট বাদ দেওয়া: চ্যাটফিল্ড বলেন, “কিটো ডায়েট, অ্যাটকিন্স ডায়েট ইত্যাদি জনপ্রিয় খাদ্যাভ্যাস কার্বোহাইড্রেট’কে যেন শরীরের শত্রু বানিয়ে ফেলেছে। খাবারের অতিরিক্ত চিনি আর পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেইট পরিহার করা স্বাস্থ্য ও ওজন কমানোর ক্ষেত্রে উপকারী ঠিক। তবে তাজা ফল, ‘স্টার্চ’যুক্ত সবজি, ‘হোল গ্রেইন’ ইত্যাদিতে থাকা ‘কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট’ শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।”
সময়ের আগেই শরীরে বয়সের ছাপ পড়া থেকে সুরক্ষা দেয় এই উপাদান। ভোজ্য আঁশ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদানও যোগায় এই খাবারগুলো।
চর্বি বাদ দেওয়া: যুক্তরাষ্ট্রের আরেক পুষ্টিবিদ ও ‘মাই ইন্ডিয়ান টেবিল: কুইক অ্যান্ড টেস্টি ভেজিটেরিয়ান রেসিপি’র রচয়িতা বান্দানা সেথ বলেন, “ওজন কমানোর জন্য সব চর্বি বাদ দিতে হবে এই ধারণা ভুল। শরীরের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চর্বিও জরুরি।”
প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেইটের প্রতি গ্রামে ক্যালরি থাকে ৪, ওদিকে চর্বির প্রতি গ্রামে থাকে ৯ ক্যালরি। অর্থাৎ চর্বিতে ক্যালরি বেশি।
কিন্তু হৃদযন্ত্রের সুস্বাস্থ্যের জন্য বাদাম, বীজ, অ্যাভোকাডো, এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল, স্যামন মাছ ইত্যাদিতে থাকা চর্বি প্রয়োজন। মস্তিষ্কের জন্য এই চর্বি গুরুত্বপূর্ণ। আর এই খাবারগুলো সুস্বাদু তো বটেই।