যশোরের রাজনীতিতে এখন আলোচিত মানুষ এসকেন্দার আলী জনি। তিনি জাতীয়তাবাদী যুবদলের যশোর জেলা কমিটির বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক।
তিনি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লাইভে এসে অভিযোগ করেছেন, পতিত সরকারের সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ভারতে নিরাপদে পার করে দিয়েছেন যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা।
এরপর থেকেই যশোরের রাজনীতিতে টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছেন এসকেন্দার আলী জনি। কয়েকটি মিডিয়া ওই ভিডিও’র সূত্র ধরেই সংবাদ প্রকাশ করায় তা আরও প্রচারিত হয়।
বিষয়টিকে আজগুবি ও আষাঢ়ে গল্প বলে অভিহিত করেছেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি বলেছেন, এমন একটি ঘটনা ফ্যাসিবাদ-উত্তর বাংলাদেশে ঘটে যাবে আর তা অন্য কেউ জানবে না, বিষয়টি খুবই হাস্যকর। এ ঘটনায় মিডিয়ার আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন তিনি।
জেলা যুবদল নেতারা বলছেন, দলীয় কার্যালয়ের ‘টি-বয়’ থেকে সংগঠনের পদ-পদবী লাভ করার ভার সামলাতে না পেরে মাথা খারাপ হয়ে গেছে এসকেন্দার আলী জনির। এ কারণে তিনি মাঝেমধ্যে উল্টাপাল্টা কথা বলতেন। তাই জেলা বিএনপির সুপারিশে কেন্দ্রীয় যুবদল জনিকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে। তারপর থেকেই তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে গেছেন। এবার তিনি যা বলেছেন, তা কোনো বিবেচনাতেই মানুষের সুস্থ মস্তিষ্কপ্রসূত নয় বলে মনে করেন যুবদল নেতারা।
ভিডিওবার্তায় এসকেন্দার আলী জনি যা বলেছেন
৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার ফেসবুক লাইভে এসে এসকেন্দার আলী জনি দাবি করেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভারতে পালিয়ে গেছেন। তাকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা। ’
তার দাবি, যশোর ক্যান্টনমেন্টে লুকিয়ে ছিলেন ওবায়দুল কাদের। ৫ তারিখের পর (কোন মাসের ৫ তারিখ তা উল্লেখ করেননি তিনি) তাকে ভারতে যেতে সহযোগিতা করেছেন যুবদলের জেলা সেক্রেটারি রানা। এসকেন্দার আলী জনির অভিযোগ, শুধু ওবায়দুল কাদের নন, যুবদল নেতা রানা আওয়ামী লীগের আরও অনেক নেতাকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন।
জনির ফেসবুক লাইভ ছিল ২৭ মিনিটের। তিনি তার অভিযোগের তদন্ত চেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে। পাশাপাশি এসব বিষয় নিয়ে তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করারও হুমকি দিয়েছেন।
কে এই এসকেন্দার আলী জনি?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসকেন্দার আলী জনির বাড়ি যশোর সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গায়। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের জীবদ্দশায় দলের যশোর জেলা কার্যালয়ে টি-বয় হিসেবে যোগদান করেন। তিনি জেলা বিএনপি কার্যালয়ে আগতদের আপ্যায়ন করতেন এবং রাতে কার্যালয়েই থাকতেন। সে সুবাদে তিনি দলের নেতাকর্মীদের আস্থাভাজন হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে সক্ষম হন।
সেই সূত্রে জেলা ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের অনেক নেতার সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। এভাবেই তিনি জিয়া পরিষদের কমিটিতে যুক্ত হন। পরে তাকে প্রথমে জেলা যুবদলের সদস্য ও পরে প্রচার সম্পাদকও করা হয়। এরইমাঝে তিনি জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্যে নিজের নাম প্রচার করতে থাকেন। বিষয়টিতে কেউ পাত্তা না দেওয়ায় তিনি বিভিন্ন সময় নেতাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে মনগড়া ও অশ্লীল কথাবার্তা লিখতেন ও বলতেন।
এসকেন্দার আলী জনি বর্তমানে ঢাকাতে অবস্থান করে কোনো ব্যবসায়ের সাথে যুক্ত বলে জানা গেছে।
বিএনপি ও যুবদল নেতৃবৃন্দ যা বলছেন
বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বুধবার (০৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে বলেন, ওবায়দুল কাদেরের মতো একজন মানুষকে যে কেউ ভারতে পার করে দেবেন, তা অন্য কোনো সংস্থা বা সাংবাদিকেরা জানবেন না, এটি অসম্ভব। যিনি এই অভিযোগ করেছেন তিনি একজন অসুস্থ মানুষ। তার আষাঢ়ে ও আজগুবি গল্পের কোনো সত্যাসত্য যাচাই না করেই একটা ছেলের বিরুদ্ধে নিউজ করে দেওয়া হলো। একবারও ভেবে দেখা হলো না, যিনি এই অভিযোগ করছেন তার রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান কী, তিনি যা বলছেন বাস্তবতার সাথে তার কোনো মিল থাকতে পারে কি না।
অনিন্দ্য ইসলাম আরও বলেন, অসুস্থ কোনো ব্যক্তির মন্তব্য নিয়ে দায়িত্বশীল কোনো মিডিয়া এভাবে নিউজ করতে পারে, তা ফ্যাসিবাদ-উত্তর বাংলাদেশে কল্পনা করা যায় না।
এই ধরনের সংবাদ প্রকাশের আগে অন্তত দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে যাচাই করে সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান জানান বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক।
যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা বাংলানিউজকে বলেছেন, জনি বিভিন্ন সময় বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের নিয়ে ফেসবুকে বিতর্কিত মন্তব্য করতেন। নেতাদের অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করতেন। সে কারণে যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু গত বছরের ৩০ নভেম্বর জেলা যুবদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বরাবর দলীয় প্যাডে একটি চিঠি দেন। ওই চিঠিতে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জনির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও বলেছিলেন।
রানা আরও জানান, জেলা বিএনপির চিঠি কেন্দ্রীয় যুবদলের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যার ভিত্তিতে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন সংগঠনের যশোর জেলা কমিটি থেকে জনিকে বহিষ্কার করেন, যা সংগঠনের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম হোসেল ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিলেন। মূলত সংগঠন থেকে বহিষ্কারের পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে যান জনি।
যশোর জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নগর কমিটির আহ্বায়ক মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ বাংলানিউজকে বলেছেন, শৃঙ্খলা ভঙ্গ, দলের সিনিয়র নেতাদের চরিত্র হনন এবং বিকৃত মানসিকতার পরিচয় দেওয়ায় এসকেন্দার আলী জনিকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার সাথে সংগঠনের কোনো যোগাযোগ নেই। ফলে তার বিষয়ে এখন সংগঠন কোনো দায়দায়িত্ব নেবে না।
তিনি বলেন, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা বা অন্য যে কেউ যদি ওবায়দুল কাদেরকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করতেন তাহলে এতদিন মিডিয়ায় চলে আসতো। জনির কাছ থেকে শুনতে হবে কেন?
এ বিষয়য়ে জানতে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে জনির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।