‘ওরা হানিয়াকে নয়, শান্তিকে হত্যা করেছে’

image-832413-1722442243

ইসরাইলের কাপুরুষোচিত গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া।

বুধবার সকালে তেহরানে ইসমাইল হানিয়ার বাসভবন লক্ষ্য করে ইসরাইলের বিমান হামলায় একজন দেহরক্ষীসহ তিনি নিহত হন।

হামাস নেতার হত্যাকাণ্ডে শোক প্রকাশ করছে গাজার যুদ্ধ-ক্লান্ত নিরীহ ফিলিস্তিনিরা।

সালেহ আল-শানার নামে উত্তর গাজার এক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বলেন, ‘এই মানুষটা বেঁচে থাকলে দখলদার ইসরাইলিদের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে পারত। ওরা কেন মারল তাকে? ইসমাইল হানিয়াকে নয়, ওরা আসলে শান্তিকে হত্যা করেছে’।

নূর আবু সালাম নামে এক বাস্তুচ্যুত নারী বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ইসরাইল এটাই প্রমাণ করল যে, তারা এ অঞ্চলে যুদ্ধের অবসান বা শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায় না।

‘হানিয়াকে হত্যা করে তারা সবকিছুই ধ্বংস করে দিয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেন এই ফিলিস্তিনি নারী।

এদিকে হানিয়া হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে শত শত ফিলিস্তিনি। এ সময় তারা হামাসের সবুজ পতাকা বহন করছিলেন এবং ‘জনগণ কাসসাম ব্রিগেডকে চায়’ বলে স্লোগান দেন। কাসসাম ব্রিগেড মূলত হামাসের সামরিক শাখা হিসাবে কাজ করে থাকে।

রামাল্লায় হামাসের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থনে মিছিল বা বিক্ষোভ অনেকটা বিরল ঘটনা। রামাল্লা হলো অধিকৃত পশ্চিম তীরের প্রশাসনিক রাজধানী। যা ফিলিস্তিনের আরেক সংগঠন ফাতাহ-অধ্যুষিত এবং এর নেতাদের দ্বারা শাসিত অঞ্চল।

উল্লেখ্য যে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের শাসন নিয়ে হামাস ও ফাতাহর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মতবিরোধ চলে আসছে। সূত্র: ‍আল-জাজিরা

শরণার্থী শিবির থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং ইসরাইলের ত্রাস

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া ইসরাইলের কাপুরুষোচিত গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন। বুধবার সকালে ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসরাইলি হামলায় নিজের বাসভবনে দেহরক্ষীসহ নিহত হন।

গত ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরু পর এ নিয়ে হামাসের দুজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ইসরাইলি গুপ্ত হত্যার স্বীকার হলেন।

নিহত দুই হামাস নেতা হলেন- ইসমাইল হানিয়া এবং সালেহ আল-আরুরি, যিনি লেবাননে অবস্থান করছিলেন।

ইসমাইল হানিয়া ১৯৬২ সালে গাজা উপত্যকার আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন। ইসরাইল অধিকৃত আশকেলন শহর থেকে তার মা-বাবা আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন। তিনি ১৯৮৭ সালে গাজার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি সাহিত্যে স্নাতক সম্পন্ন করেন।

ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রথম ও দ্বিতীয় ইন্তিফাদায় হানিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এজন্য তাকে কয়েকবার ইসরাইলের কারাগারে যেতে হয়।

১৯৯৭ সালে ইসরাইলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ইসমাইল হানিয়া হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমদ ইয়াসিনের কার্যালয়ের প্রধান নিযুক্ত হন। শেখ ইয়াসিনের সঙ্গে ইসমাইল হানিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।

ইসরাইলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কয়েক বছরের রাজনৈতিক তৎপরতার পর, হানিয়া ওই বছরই হামাসের অন্যতম শীর্ষনেতা হিসেবে নিযুক্ত হন। এর ধারাবাহিকতায় তিনি এক পর্যায়ে হামাসের প্রধান নির্বাচিত হন।

হানিয়া দখলদার বাহিনীর বহু গুপ্তহত্যার প্রচেষ্টা থেকে বেঁচে গেছেন। ২০০৩ সালে তাকে বোমা হামলার মাধ্যমে হত্যা করার চেষ্টা করে দখলদার ইসরাইল।

২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং সেই নির্বাচনে হামাস রাজনৈতিক দল হিসেবে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। বিজয়ের মধ্য দিয়ে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু ফিলিস্তিনি স্বশাসন (ফাতাহ) কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ২০০৭ সালে হামাসের সরকার ভেঙে দেন।

২০০৬ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ইসমাইল হানিয়া গাজা উপত্যকায় হামাসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৭ সালের ৬ মে তিনি হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন এবং হামাস নেতা খালেদ মেশালের জায়গায় দায়িত্ব পালন শুরু করেন।

গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরাইলের অভ্যন্তরে হামাসসহ অন্যান্য প্রতিরোধ যোদ্ধারা অভিযান চালানোর পর, হানিয়া তার রাজনৈতিক দপ্তরকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গ্রুপগুলোকে রক্ষার কাজে বিশেষভাবে ব্যবহার করেন।

ফিলিস্তিনিদের ওই অভিযানের পর ইসমাইল হানিয়া বলেছিলেন, ‘আমরা বহুবার তোমাদের সতর্ক করেছি যে, ফিলিস্তিনি জনগণ ৭৫ বছর ধরে শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে। অথচ তোমরা আমাদের জনগণের অধিকারকে অস্বীকার করে চলেছ।’

গাজা যুদ্ধ শুরুর পর ইসমাইল হানিয়ার পরিবারের ১৪ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে তার তিন ছেলে ও ৮০ বছর বয়সি বোনও রয়েছেন। গত নভেম্বরে তার দুই নাতি ও নাতনি ইসরাইলি হামলায় নিহত হন।

শেষ পর্যন্ত ২০১৪ সালের ৩১ জুলাই ইসমাইল হানিয়া নিজেও বর্বর ইসরাইলি বাহিনীর গুপ্ত হত্যার শিকার হলেন এবং এর মধ্যদিয়ে শেষ হলো তার বর্ণাঢ্য সংগ্রামী জীবন।

Pin It