ঢাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির দাম ছয় মাসের ব্যবধানে আরও ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নাগরিকরা।
বিদ্যুত বিলের সঙ্গে পানির বিল বাড়িয়ে দেওয়ায় বাড়িওয়ালারাও এখন ভাড়া বাড়িয়ে দেবেন বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পানির দাম বাড়িয়ে একটি অফিস আদেশ জারি করা হয়।
সেখানে বলা হয়, আবাসিকে ঢাকা ওয়াসার সরবরাহকৃত প্রতি এক হাজার লিটার পানির দাম ১১ টাকা ৫৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৪ টাকা ৪৬ পয়সা করা হয়েছে।
আর বাণিজ্যিক সংযোগে প্রতি হাজার লিটার পানির দাম ৩৭ টাকা ৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়েছে।
একইভাবে আবাসিক সংযোগে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রতি হাজার লিটার পানির দাম ৯ টাকা ৯২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৪০ পয়সা এবং বাণিজ্যিকে ২৭ টাকা ৫৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা ৩০ পয়সা করা হয়েছে।
অর্থাৎ আবাসিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ঢাকায় পানির দাম ২৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং চট্টগ্রামে ২৫ শতাংশ বাড়ছে। আর বাণিজ্যিক সংযোগে ঢাকায় ৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং চট্টগ্রামে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ দাম বেড়েছে পানির।
বিদ্যুতের দাম সব পর্যায়েই বাড়ল
এর আগে গত বছর ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বাড়ানো হয়। সে সময় ঢাকায় আবাসিক সংযোগে পানির দাম বাড়ে ১০ শতাংশের মত।
ছয় মাসের ব্যবধানে পানির দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোড এলাকার মীর মোকাব্বির হোসেন শুক্রবার বলেন, “সরকার চুরি বন্ধ করতে পারে না, এর দায় চাপায় সাধারণ মানুষের ওপর।”
মোকাব্বির জানান, আগে তার ছয় তলা বাড়ির জন্য পানির বিল আসত মাসে দশ হাজার টাকার মত। এখন তাকে আরও অন্তত আড়াই হাজার টাকা বেশি দিতে হবে।
“এই টাকা আমি দেব কোত্থেকে? আসলে আমাদেরকে চতুর্দিক থেকে শুষে নেওয়া হচ্ছে। তারা যেটা করবে সেটাই মেনে নিতে হবে।”
‘শতভাগ বিশুদ্ধ’ ওয়াসার পানির শরবত নিয়ে এমডির দুয়ারে অপেক্ষা
জাতীয় ভাড়াটিয়া পরিষদের সহ-সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, বিদ্যুৎ, গ্যাস বা পানি- এই তিন সেবার যে কোনো একটার দাম বাড়লেই বাড়ি ভাড়া বাড়িয়ে দেন মালিকরা। আর এখন বিদ্যুৎ-পানি একসঙ্গে বেড়েছে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বৃহস্পতিবার পাইকারি, খুচরা ও সঞ্চালন- তিন ক্ষেত্রেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। তাতে সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে (খুচরা) প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, যা মার্চ থেকে তাদের দিতে হবে।
ইয়াসিন বলেন, “দেখা গেছে পানির বিল বেড়েছে দুই-তিনশ টাকা। বাড়িওয়ালা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন পাঁচশ থেকে এক হাজার টাকা। এভাবেই দিনের পর দিন চলে আসছে। যতদিন পর্যন্ত সরকারের চার্ট আকারে ভাড়া না আসে ততদিন এভাবেই চলবে। এজন্য ইউটিলিটি বিল ভাড়াটেরা আলাদা দেব এমন আইন করতে হবে।”
ঢাকা ওয়াসা ভেঙে দুই ভাগ করার সুপারিশ
নাগরিকদের এই ক্ষোভের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, বৃহত্তর সুবিধার জন্য জনগণকে ‘কিছুটা চাপ’ নিতেই হবে।
“বিকল্প কিছু আমাদের ছিল না। দাম না বাড়ালে প্রতিষ্ঠানগুলো টিকতে পারবে না। দিন দিন এভাবে চললে প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর হয়ে যাবে। অন্য কোনো জায়গা থেকে ঋণ করতে হবে। আর সামান্য প্রেসার নিলে মানুষ বৃহত্তর অর্থে উপকৃতই হবে। এসব বিষয় চিন্তা করে বাস্তবতার ভিত্তিতেই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
বাংলাদেশে পানির দাম এখনও পৃথিবীর অনেক দেশের চেয়ে কম দাবি করে মন্ত্রী বলেন, “আমাদের উৎপাদন খরচ কিন্তু অন্য দেশের মতই।… দাম আরও বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব ছিল, কিন্তু বেশি দাম বাড়ালে মানুষের মধ্যে একটা নেতিবাচক বার্তা যাবে। হিসাব করে দেখেছি পরিবার প্রতি ৫০-৬০ টাকা করে পানির দাম বাড়বে। এই দাম বৃদ্ধির ফলে যদি সে নিরাপদ পানি পায় তাহলে তো সমস্যার কিছু নেই।”