করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে রোজার মতো কোরবানির ঈদের জামাতও মসজিদের পড়তে হবে। এক্ষেত্রে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি এবং করা যাবে না কোলাকুলি।
সবাইকে বাসা থেকে ওজু করে মসজিদে যেতে হবে মাস্ক পরে। কাতারে দাঁড়াতে হবে দূরত্ব রেখে। নামাজ শেষে কোলাকুলি বা হাত মেলানো যাবে না। করোনাভাইরাস অতি সংক্রামক বলেই এ ব্যবস্থা।
শনিবার সকালে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত হবে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল ৭টায়।
অন্যবছর ঈদে বায়তুল মোকাররমে পাঁচটি জামাত হলেও এবার হবে ছয়টি।
সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে, ৮টা ৪৫ মিনিটে, ৯টা ৩৫ মিনিটে, ১০টা ৩০ মিনিটে এবং ১১টা ১০ মিনিটে ধারাবাহিকভাবে পরের পাঁচটি জামাত হবে বলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে।
আবহাওয়া ভালো থাকলে এমনিতে দেশে ঈদের প্রধান জামাতটি হয় ঢাকায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সেই জামাতে নামাজ পড়েন ঈদের সকালে। কিন্তু মহামারীর কারণে রোজার ঈদের মত এবার কোরবানির ঈদেও তা হচ্ছে না।
প্রতিবছর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতের আয়োজন হয়। কিন্তু মহামারীর মধ্যে খোলা মাঠে ঈদ জামাত আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় রোজার ঈদের মত এবারও জামাত হচ্ছে না শোলাকিয়ায়।
ঢাকায় সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় এবার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঈদ জামাতের আয়োজন থাকছে না। মসজিদগুলো নিজেদের ব্যবস্থাপনায় ঈদ জামাতের আয়োজন করছে।
ঈদের জামাতের সময়ে মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না, নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিস্কার করতে হবে।
অজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুতে বলা হচ্ছে সবাইকে। মসজিদে অজুর স্থানেও সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে বলা হয়েছে।
ঢাকা
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের বাইরে ঢাকার মসজিদগুলোতে এক বা একাধিক ঈদ জামাতের ব্যবস্থা থাকছে।
রাজধানীর গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদে সকাল ৬টা, সকাল ৮টা এবং সকাল ১০টায় ঈদের তিনটি জামাত হবে।
মিরপুর কাজীপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তিনটি জামাত হবে সকাল ৭টায়, সকাল ৮টায় এবং ৮টা ৪৫ মিনিটে।
সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা, ঢাকা মসজিদ এবং ধানমণ্ডি ঈদগাহ মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদের জামাত হবে।
পুরান ঢাকা তারা মসজিদ, বংশাল বড় মসজিদ, নিমতলী ছাতা জামে মসজিদ, নাজিরা বাজার আহলে হাদিস মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় এবং সকাল সাড়ে ৮টায় দুটি করে ঈদের জামাত হবে।
চকবাজার জামে মসজিদ, যাত্রাবাড়ী মারকাজ জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় এবং লাল শাহী মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদের নামাজ হবে।
ধানমণ্ডি তাকওয়া মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় ও সকাল ৯টায়, ধানমণ্ডির বায়তুল আমান মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায় ও সাড়ে ৮টায় দুটি করে জামাত হবে।
সিলেট
সিলেটে হযরত শাহজালাল (র.) জামে মসজিদে এবার ঈদুল আজহার প্রধান জামাত হবে।
এ মসজিদের খতিব আসজাদ আহমদ জানান, মসজিদের ভিতরে সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ৮টায় ঈদুল আজহার প্রধান জামাত হবে। মসজিদের বাইরে কেউ নামাজে অংশ নিতে পারবেন না।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খোলা মাঠে বা ময়দানে এবার ঈদের নামাজ আদায় করা যাবে না।
ফলে সিলেটের শাহী ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল আজহার প্রধান ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে না বলে তিনি জানান।
সিলেট জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবার সিলেটের মসজিদগুলোতে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
জেলায় পাঁচ হাজার ২০৩টি জামে মসজিদ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মসজিদগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে ঈদের জামাত আয়োজন করতে বলা হয়েছে।
রংপুর
রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সৈয়দ এনামুল কবির (সার্বিক) বলেন, সকাল ৮টায় কোট মসজিদে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় কেরামতিয়া মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া অন্যান্য এলাকায় মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায় হবে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান জানান, নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে মসজিদে ঈদুল আজাহার জামাত করতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
রাজশাহী
রাজশাহীতে হযরত শাহমখদুম (রহ.) দরগা জামে মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদের প্রধান জামাত হবে।
জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল সাংবাদিকদের জানান, ঈদুল ফিতরের মত ঈদুল আজহার নামাজও মসজিদ কমিটির নির্ধারণ করা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হবে।
“তাই জেলা প্রশাসন নামাজের সময় নির্ধারণ করে দেয়নি। মসজিদ কমিটি তাদের সুবিধামত নামাজের সময় নির্ধারণ করবে। তারপর মাইকিং করে তা জানিয়ে দেবে।”
তবে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে সব জায়গায় ঈদের নামাজ হবে বলে জেলা প্রশাসক জানান।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, “আমি রাজশাহীর কালেক্টরেট মসজিদে নামাজ পড়ব। সেখানে জামাত সকাল ৮টায়।”
ঈদের জামাত মসজিদে আদায় করতে হবে
করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে ঈদুল আজহার জামাতও মসজিদে পড়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার। আগামীকাল ১ আগস্ট সারা দেশের মসজিদগুলোতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
করোনায় মুসল্লিদের জীবনের ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে নিকটস্থ মসজিদে ঈদের জামাত পড়ার নির্দেশনা দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। প্রয়োজনে একই মসজিদে একাধিক ঈদ জামাত আদায় করা যাবে। উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ঈদুল ফিতরের জামাত ঈদগাহে আদায় না করে মসজিদে আদায় করা হয়েছিল।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও বায়তুল মোকাররমে পর্যায়ক্রমে ছয়টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে এসব জামাত আয়োজনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জাতীয় মসজিদে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়। এরপর এখানে পর্যায়ক্রমে আরো পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সর্বশেষ জামাত বেলা ১১টা ১০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জাতীয় মসজিদে ঈদের নামাজের সময়সূচি, ইমাম ও মুকাব্বিরগণের দায়িত্ব পালনের তালিকা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই প্রকাশ করা হয়েছে। এসব জামাতে ইমাম ও মুকাব্বির দায়িত্ব পালনকারীদের তালিকা নিচে তুলে ধরা হলো—
প্রথম জামাত: সকাল ৭টায়, ইমাম-হাফেজ মুফতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান, সিনিয়র পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ। মুকাব্বির-হাফেজ কারি কাজী মাসুদুর রহমান, মুয়াজ্জিন, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ।
দ্বিতীয় জামাত: সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে, ইমাম-হাফেজ মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী, পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ। মুকাব্বির-হাফেজ কারি হাবিবুর রহমান মেশকাত, মুয়াজ্জিন, বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদ।
তৃতীয় জামাত: সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে, ইমাম-হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক, পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ। মুকাব্বির-মাওলানা ইসহাক, মুয়াজ্জিন, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ।
চতুর্থ জামাত: সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে, ইমাম-মাওলানা মহিউদ্দিন কাসেম, পেশ ইমাম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ। মুকাব্বির-মো. শহীদুল্লাহ, প্রধান খাদেম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ।
পঞ্চম জামাত: সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে, ইমাম-হাফেজ মাওলানা ওয়ালিয়ূর রহমান খান, মুহাদ্দিস, ইসলামিক ফাউন্ডেশন। মুকাব্বির-হাফেজ মো. আবদুল মান্নান, খাদেম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ।
৬ষ্ঠ ও সর্বশেষ জামাত: সকাল ১১টা ১০ মিনিটে, ইমাম-মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রব মিয়া, সাবেক উপপরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন। মুকাব্বির-হাফেজ মো. আবদুর রাজ্জাক, খাদেম, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ।