বারবার বলার পরও প্রায় শতবর্ষী, ঝুঁকিপূর্ণ কালুরঘাট সেতু এখনও নতুন করে নির্মাণ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও, বোয়ালখালী) আসনের সাংসদ মঈনউদ্দিন খান বাদল।
শুক্রবার চট্টগ্রাম ক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় কালুরঘাট সেতু নির্মাণ না হলে সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণাও দেন তিনি।
ক্ষুব্ধ বাদল প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, “আর কতটা ভাঙ্গলে নতুন করে কালুরঘাট সেতু হবে?”
সংসদে বিভিন্ন সময়ে কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণের দাবি করে আসছেন এই বাম রাজনীতিক।
এ নিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “গত ১০ বছরে না হলেও ২০ বার বলেছি। সারা দেশে গত ১০ বছরে অনেকগুলো বড় বড় সেতু হয়েছে।
“আমরা ১০ বছরে কি একটাও ব্রিজ পাই না? এটার জবাব কে দেবে? এমনও ব্রিজ হয়েছে যেখানে সারা দিনে তিনটা গরুর গাড়ি পার হয়।”
কালুরঘাট সেতু গর্ত ও খানাখন্দে ভরে গেছে জানিয়ে বাদল বলেন, “বর্তমানে সেতুটির ৭৯টি জায়গায় কর্ণফুলী দেখা যায়। এই ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিন ৫০ হাজার লোক পারাপার হয়। গাড়ির কথা বাদই দিলাম। ব্রিজে এভারেজ ওয়েটিং টাইম ২-৩ ঘণ্টা।
“দোহাজারিতে ফার্নেস ওয়েল নিয়ে এবং প্যাসেঞ্জার ট্রেন যায় আসে। সেগুলো আড়াই মাইল গতিতে চলে… কখন ব্রিজ ভেঙ্গে যায়,” উদ্বেগ জানিয়ে বলেন তিনি।
বাদল বলেন, কালুরঘাট সেতু নির্মাণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথেও কথা হয়েছে তার।
“গত রমজানে, ২৬ রোজার দিন আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তিনি বললেন, অসুস্থ শরীর নিয়ে আপনি কেন এসেছেন, আপনি কী চান?
“আমি বললাম, আপনার কাছে আমার চাওয়ার কিছু নেই, শুধু ব্রিজটা করে দিলে হবে। প্রধানমন্ত্রী বললেন, আপনার ব্রিজ আমি করে দেব। কিন্তু এরপরও হচ্ছে না।
”প্রধানমন্ত্রীকে করজোড়ে বলেছি, প্রতিদিন ৫০ হাজার মানুষ আমার মাকে গালি দেয়। আল্লাহর ওয়াস্তে আপনি ব্রিজটা করে দেন।”
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, চান্দগাঁও ও বায়েজিদ বোস্তামী থানার একাংশ নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৮ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক জাসদ একাংশের কার্যকরি সভাপতি মঈনুদ্দীন খান বাদল।
গত ২৬ জুন সংসদে বাজেট অধিবেশনে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ব্রিজ নির্মাণের কোনো অগ্রগতি না হলে সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি।
চট্টগ্রামের প্রবীণ এ রাজনৈতিক নেতা বলেন, “আমি সরকারি জোটের এমপি, ব্রিজের জন্য যদি আমাকে আওয়ামী লীগ করতে হয়, প্রয়োজনে সেটাও করতে রাজি।”
সাংবাদিকদের কাছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল লাইনে কালুরঘাট সেতুর কার্যকারিতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বারবার বলছি, কালুরঘাটে সড়কসহ রেলসেতু না করলে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন বানিয়ে কোনো লাভ হবে না।
”ট্রেন কি বোয়ালখালীর গোমদণ্ডী পর্যন্ত আসার পর লাফ দিয়ে শহরে যাবে? ট্রেন যেতে না পারলে সেই রেললাইন বানিয়ে লাভ কী? এ জন্য সবার আগে দরকার ছিল কালুরঘাট সেতু।”
চট্টগ্রাম নগরীর সঙ্গে বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার একাংশের যোগাযোগের মাধ্যম এই সেতু বন্দর নগরীর সঙ্গে কক্সবাজারের রেল যোগাযোগের অন্যতম সংযোগ।
এদিকে ব্রিজ না করে কক্সবাজারে স্টেশন নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ আগে করায় পরিকল্পনাকারীদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমি সংসদে প্রশ্ন করলাম, কক্সবাজারে ঝিনুক আকৃতির রেল স্টেশন তৈরি করা হচ্ছে। চারটা ব্রিজ করতে তিন থেকে চার বছর লাগবে। ব্রিজ হতে হতে ঝিনুক মার্কা স্টেশনের দরজা-জানালা কী হবে?”
১৯৩০ সালে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয় ৭০০ গজ দীর্ঘ কালুরঘাট রেল সেতু। ১৯৫৮ সালে এ সেতুটি সব ধরনের যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার।
স্থানীয়রা বলছেন, ৮৯ বছরের পুরনো সেতুটি আর বইতে পারছে না তার বার্ধক্যের ভার।
২০০১ সালে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার পর ২০০৪ ও ২০১২ সালে দুই দফায় এ সেতুটি বন্ধ রেখে সংস্কার কাজ করেছিল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আর মাঝে মাঝে জোড়তালি দিয়ে ভরানো হয় ব্রিজের গর্ত।
মতবিনিময় সভায় সাংসদ বাদল বলেন, “চারবার সেতু নিয়ে সমীক্ষা হয়েছে। সর্বশেষ কোরিয়া সমীক্ষা করে জানাল, ১২০০ কোটি টাকার মতো লাগবে। কোরিয়া দেবে ৮০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকারকে দিতে হবে ৩৯০ কোটি টাকা।
“এত হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হচ্ছে, অথচ ৩৯০ কোটি টাকার জন্য একটি সেতু পাচ্ছে না চট্টগ্রামবাসী।”