করোনাভাইরাস মহামারীর সময়ে অনেকে সরকারের সমালোচনা আর খুঁত ধরায় ব্যস্ত থাকলেও তাদের কতজন সাধারণ মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি তার নির্দেশে দল এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মহামারী পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য যেসব কাজ করে যাচ্ছেন তা তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের তো অনেক রাজনৈতিক দল আছে। সমালোচনা অনেকেই করে যাচ্ছেন। এমনকি বহু এনজিও, অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ঠিক বর্তমানে কতজনকে চোখে পড়ে যারা কাজ করছে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে? সেটাই আমার প্রশ্ন।
“ঘরে বসে সমালোচনা, বাজেটের খুঁত ধরা, কাজের খুঁত ধরা সেগুলো অনেকেই ধরতে পারেন, এটা ঠিক। কিন্তু মাঠে গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষকে সেবা করা, এই কাজগুলি কিন্তু আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক যারা, আমরাই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি।”
তিনি বলেন, “অনেক মানুষ আছে যারা হয়ত হাত পাততে পারছে না, তাদের কোনো আয় নেই। গোপনে তাদেরকে খাবার জিনিস সরবরাহ করা হয়। এমনকি ঢাকা শহরে আমাদের প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে বিভিন্ন অঞ্চলে আমাদের যে কমিটিগুলো, তারা কিন্তু সেভাবে সাহায্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে।
“যারা নিচ্ছে তারা কিন্তু চায় না তাদের নামটা প্রচার হোক। আমরাও চাই না। কারণ এটা তাদের একটু আত্মাভিমানে লাগে। কিন্তু তারা যেন কষ্ট না পায় সেদিকে আমাদের দৃষ্টি আছে।”
সরকারের পাশাপাশি দলের পক্ষ থেকেও মানুষকে সহায়তা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
করোনাভাইরাস সংকটে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে সরকারের কাজ করে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “ইতিমধ্যে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করবার জন্য আমরা দুই হাজার ডাক্তার ও ছয় হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছি। পাশাপাশি আরো দুই হাজার ডাক্তারের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। তাছাড়া হেলথ টেকনোলোজিস্ট, কার্ডিওগ্রাফার এবং ল্যাব অ্যাটেনডেন্টের তিন হাজার পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা সেগুলোও দেব।
অনেকেই অনেক কথা বলতে পারেন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “টেস্ট করার জন্য খুব ভালো টেকনিক্যাল লোক দরকার হয়। এই লোক পাওয়া কঠিন। কারণ বাড়িতে গিয়ে গিয়ে তারা নমুনা সংগ্রহ করছে, যেতে গিয়ে তাদের অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। অনেক সময় পাড়ার লোক ঢুকতে দেবে না, বাড়িতে যেতে দেবে না, তারা নমুনা নিতে দেবে না। এই ধরনের প্রতিবন্ধকতাও…।”
যারা বিভিন্ন এলাকায় করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করতে যান তাদের পোশাক দেখলে অনেক সময় ওই এলাকায় প্রবেশ করতে না দেয়ার ঘটনা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, “এমনকি যারা নমুনা সংগ্রহকারী, তারা এক সময় ওই সমস্ত পোশাকগুলো খুলে ব্যাগে নিয়ে যে বাড়িটায় যাবে ঢোকার মুখে ওগুলো পড়ে তারপর গিয়ে দরজায় নক করেছে এবং তাদের থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে। অনেক সময় সাধারণ মানুষ তাদের আঘাতও করেছে।
“এই খবর তো আপনারা রাখেন না অনেকে। আমাদের বিরোধী দল অনেক কথা বলেছে। তারা কিন্তু এই খবরটা কোনোদিন রাখে না। হয়তো আজকেই প্রথম শুনলেন তারা। যে এই রকম ঘটনাও ঘটেছে বাংলাদেশে যে নমুনা সংগ্রহকারীদের যেতে দেয় না। কিন্তু আমাদের করতে হয়েছে।”
“যারা এই দুঃসময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন তাদের সকলকেই আমাদের দেখতে হবে এবং তাদেরকে আমাদের সহযোগিতা করতে হবে। সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ডাক্তার, নার্স ও টেকনেশিয়ানদের থাকা-খাওয়াসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সেখানে খরচ তো হবেই। হ্যাঁ, এসব কাজ করতে গেলে বাংলাদেশের মানুষের চরিত্র নষ্ট করে দিয়ে গিয়েছে পঁচাত্তরের পর যারা রাতের অন্ধকারে অস্ত্র হাতে নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তারাই।
“…কারণ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সেই ক্ষমতা কুক্ষিগত করবার জন্য এরা মানুষকে দুর্নীতি শিখিয়েছে, কালোটাকা শিখিয়েছে, ঋণখেলাপ শিখিয়েছে, তারা সমাজকে কলুষিত করে দিয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর দলমত নির্বিশেষে দুর্নীতিবাজদের ধরছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।