করোনা ভাইরাসের ওষুধ আবিষ্কারের চেয়ে প্রতিষেধক হিসেবে এর ভ্যাকসিন বা টিকা আবিষ্কারেই গুরুত্ব দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। বিশ্বের ১৭০টিরও বেশি গবেষক দল টিকা আবিষ্কারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে গতকাল পর্যন্ত কোনো টিকারই চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়নি। ফলে নির্দিষ্ট করে কবে টিকা আসবে তা বলতেও পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। যদিও চলতি বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের প্রথম দিকে কার্যকর টিকা বাজারে আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সূত্র অনুযায়ী, ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দৌড়ে আছে ১৭০টির বেশি উদ্যোগ। একেকটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষাপর্ব সারতেই সাধারণত বছরের পর বছর সময় লাগে। তবে কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে তা ১২ থেকে ১৮ মাসে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা।
প্রাক ক্লিনিক্যাল পর্ব
ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান এবং জার্মান মিডিয়া ডয়চেভেলে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ১৩৯টি উদ্যোগ প্রাক ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে। এই ধাপে বিজ্ঞানীরা ভাইরাস বা তার কোনো একটি অংশ তৈরি করেন। সেটি অন্য প্রাণীদের ওপর প্রয়োগ করে দেখেন রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ঠিকঠাক সাড়া দিচ্ছে কিনা।
প্রথম ধাপ
এই ধাপে আছে ২৫টি টিকা। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার প্রথম ধাপে সীমিত সংখ্যক মানুষের মধ্যে টিকাটি প্রয়োগ করা হয়। দেখা হয়, প্রাক ক্লিনিক্যাল পর্বে পশুর দেহে যেভাবে প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে, মানুষের শরীরেও তা একইভাবে কাজ করছে কিনা।
দ্বিতীয় ধাপ
ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপে পৌঁছাতে পেরেছে ১৫টি ভ্যাকসিন। সম্ভাব্য টিকাটি কতটা নিরাপদ আর তা কী মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে, এই ধাপে মূলত সেটি দেখেন বিজ্ঞানীরা। এজন্য কয়েক শ মানুষের শরীরে টিকাটি পরীক্ষা করা হয়।
তৃতীয় ধাপ
তৃতীয় ধাপে ভ্যাকসিন পরীক্ষার আওতায় আসেন কয়েক হাজার মানুষ। কার্যকারিতা, শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দিকগুলোতে এই পর্যায়ে বিজ্ঞানীরা মনোযোগ দেন। এই ধাপটিতে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯-এর মাত্র সাতটি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন পৌঁছাতে পেরেছে।
অনুমোদন
পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ভ্যাকসিন বাজারজাতের অনুমোদন দেয় দেশগুলোর সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। চীনের প্রতিষ্ঠান ক্যানসিনো বায়োলোজিক্স দেশটির একাডেমি অব মিলিটারি মেডিক্যাল সায়েন্সের সঙ্গে যৌথভাবে একটি টিকা উদ্ভাবন করেছে। দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় এর কার্যকারিতার প্রমাণও মিলেছে। তবে জুনেই জরুরি প্রয়োজনীয় ওষুধ হিসেবে সেটি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী। এ বিষয়ে বিস্তারিত আর জানা যায়নি। রাশিয়া তার দেশের তৈরি একটি টিকার অনুমোদন দিয়েছে শেষ ধাপ পেরোনোর আগেই।
গত বুধবার ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, স্পুটনিক পাঁচ নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের আলোচনা শুরু হয়েছে। রাশিয়া চায়, ভারতে এ ভ্যাকসিনের উত্পাদন হোক। ভ্যাকসিনটি ভারতের সঙ্গে রাশিয়া যৌথভাবে উত্পাদন করতে চায়। ভারত বিষয়টিতে আগ্রহ দেখালেও এখনই সবুজ সংকেত দেয়নি। ভ্যাকসিনটির বিষয়ে সব তথ্য রাশিয়ার কাছে চাওয়া হয়েছে।
শেষ ছয়
ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার তৃতীয় ধাপে পৌঁছানো ছয়টি ভ্যাকসিনের দুইটি চীনের। এর মধ্যে নিষ্ক্রিয় ভাইরাস থেকে টিকা তৈরি করেছে সিনোভ্যাক নামের একটি প্রতিষ্ঠান। জুলাইতে আরব আমিরাতে চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু করেছে সিনোফার্ম নামে দেশটির আরেকটি কোম্পানি। শেষ ধাপের এই দৌড়ে আরো আছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানিও।
আলোচনায় অক্সফোর্ড
করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে শুরু থেকে আলোচনায় যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। ব্রিটিশ-সুইডিশ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে তারা। পৌঁছে গেছে তাদের উদ্ভাবিত টিকা পরীক্ষার শেষ ধাপে। দক্ষিণ আফ্রিকা আর ব্রাজিলে চলছে এর ট্রায়াল।
ভারতের পুনেভিত্তিক সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, কোভিড-১৯-এর জন্য অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বানানো টিকা তারা শিল্প উত্পাদনের জন্য প্রস্তুত। বিশ্বের বৃহত্তম টিকা প্রস্তুতকারী এই সংস্থাটি অক্সফোর্ডের ঐ প্রকল্পে অন্যতম প্রধান পার্টনার বা অংশীদার হিসেবে কাজ করছে।