নির্বাচন শুরুর ঠিক আট দিন আগে দলীয় ইশতেহার প্রকাশ করে কংগ্রেস জানাল, মিথ্যা স্তোক নয়, প্রতিটি প্রতিশ্রুতিই তারা পূরণ করে দেখাবে। ইশতেহারের প্রথম পৃষ্ঠায় সেই অঙ্গীকারও লিপিবদ্ধ, ‘কংগ্রেস উইল ডেলিভার’। অর্থাৎ, কংগ্রেস করে দেখাবে।
কী কী প্রতিশ্রুতি দিল কংগ্রেস? প্রধানত সেই বিষয়গুলো যেগুলো নিয়ে তারা এত দিন ধরে সরকারের সমালোচনায় মুখর। দলীয় সভাপতি রাহুল গান্ধী একেকটি প্রতিশ্রুতির ব্যাখ্যা করে বলেন, ন্যূনতম আয় যোজনা বা ‘ন্যায়’ বাস্তবায়িত করে দেশের গরিবদের ব্যাংক খাতায় বছরে ৭২ হাজার কোটি রুপি জমা করা হবে। ২২ লাখ সরকারি শূন্য পদে চাকরি দেওয়া হবে। গ্রাম পঞ্চায়েতগুলোয় খালি রয়েছে ১০ লাখের বেশি পদ। সেখানে লোক নিয়োগ করা হবে। গরিবদের কর্মসংস্থানের জন্য ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পকে ১৫০ দিন করা হবে। অর্থাৎ, বছরে দেড় শ দিন গরিব মানুষের ন্যূনতম আয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
আজ মঙ্গলবার ২৪ আকবর রোডের দলীয় সদর দপ্তরে দুপুর ১২টা নাগাদ ভিড়ে ঠাসা অনুষ্ঠানে কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশিত হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, ইউপিএ চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি, অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরমসহ ওয়ার্কিং কমিটির অধিকাংশ নেতার সঙ্গে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও। ইংরেজি ও হিন্দিতে লেখা নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশের পর রাহুল গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতিগুলো ব্যাখ্যা করে বলেন, পাঁচ বছর ধরে বিজেপি সরকার ও তার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আশ্বাসের কথাই শুধু শোনা গেছে। একটি প্রতিশ্রুতিও পালিত হয়নি। কংগ্রেস কিন্তু তার প্রতিটি প্রতিশ্রুতি পালন করে দেখিয়ে দেবে।
রাহুল বলেন, ‘এক বছর ধরে ইশতেহার কমিটি এই কাজ করেছে। আমি শুধু তাদের দুটো কথা বলেছিলাম। প্রথমত, বদ্ধ ঘরে বসে যেন ইশতেহার তৈরি করা না হয়। মানুষের আশা ও চাহিদার প্রতিফলন যেন ইশতেহারে ঘটে। দ্বিতীয়ত, যে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে, যা লেখা হবে, সব যেন সত্য হয়। মিথ্যা স্তোক যেন একটাও না থাকে। দিনের পর দিন প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যা শুনতে শুনতে মানুষ ক্লান্ত ও বিরক্ত।’
ইশতেহারের ব্যাখ্যা করে রাহুল বলেন, কংগ্রেসের প্রতীক হাতের পাঞ্জায় পাঁচটি আঙুল আছে। ঠিক তেমনই ইশতেহারেও প্রধানত পাঁচটি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বেশি জোর ‘ন্যায়’-এর ওপর। দেশের ২০ শতাংশ অতিদরিদ্রকে বছরে ৭২ হাজার করে পাঁচ বছরে ৩ লাখ ৬০ হাজার রুপি কংগ্রেস দেবে। মোদির আমলে নোট বাতিল ও জিএসটি অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছিল, ‘ন্যায়’ সেই বেহাল অবস্থাকে ফের সচল করে তুলবে।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিষয় হলো কর্মসংস্থান ও কৃষকদের দুর্দশা। এক বছরের মধ্যে সব শূন্য পদে নিয়োগের পাশাপাশি রোজগার বাড়ানোর যেসব পরিকল্পনা কংগ্রেস করেছে, তা ব্যাখ্যা করে রাহুল বলেন, ব্যবসা করতে গেলে প্রথম তিন বছর কাউকে কারও কাছ থেকে কোনো রকম অনুমতি নিতে হবে না। কৃষকদের জন্য আলাদা বাজেট তৈরির প্রতিশ্রুতিও ইশতেহারে দেওয়া হয়েছে। রাহুল বলেন, চাষি তাঁর ঋণ শোধ করতে না পারলে তাঁকে জেলে পোরা যাবে না। চাষির ঋণখেলাপিকে ফৌজদারি অপরাধ গণ্য করা হবে না।
চতুর্থ ও পঞ্চম বিষয় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। রাহুল বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে মোট জাতীয় উৎপাদনের ৬ শতাংশ ব্যয় করা হবে, মোদি সরকার যা কমিয়ে দিয়েছে। তিনি জানান, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিকাশের নামে মোদি সরকার বেসরকারি সংস্থার বিকাশ ঘটিয়েছে। ক্ষমতায় এলে কংগ্রেস সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল ফেরাবে।
ইশতেহারে কংগ্রেস দেশের বহুত্ববাদী চরিত্র রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিভিন্ন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের গৌরব ও মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা বলেছে। অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্রনীতি ব্যক্তিবিশেষের খেয়ালিপনায় পরিণত করেছে। বলা হয়েছে, সন্ত্রাস বন্ধে পাকিস্তানের ওপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা হবে। প্রতিবেশী ও জি-২০ সদস্যভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করা হবে। সীমান্তবর্তী সড়ক উন্নয়নে বিশেষ নজর দেওয়া হবে। কাশ্মীরে অত্যধিক সেনা উপস্থিতি কমানো ও যত্রতত্র দেশদ্রোহ আইনের প্রয়োগ বন্ধের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এ ইশতেহারের সমালোচনা করে বলেছেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে দেশের নিরাপত্তা বলে আর কিছু থাকবে না।