লিগের পরের রাউন্ড স্থগিত হয়ে গেছে। আবাহনী লিমিটেডের ক্রিকেটারদের তবু মাঠে দেখা গেল মঙ্গলবার। অনুশীলন অবশ্য তেমন কিছু হলো না। স্রেফ হালকা জিম করলেন অনেকে। তবে দ্রুত এই অবস্থার অবসান চান ক্রিকেটাররা। শুরু করতে চান অনুশীলন, ফিরতে চান খেলার মাঠে।
আবাহনীর ক্রিকেটারদের এ দিন একত্রিত হওয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উদযাপন। মাঠে কেক কাটলেন ক্রিকেটাররা। বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামালের প্রতিষ্ঠিত ক্লাব বলেই কেবল নয়, কোচ খালেদ মাহমুদ জানালেন, শততম জন্মদিনে জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই এটি তাদের ‘ছোট্ট উদ্যোগ।’
উপলক্ষ্য ভিন্ন হলেও আবাহনীর কোচকে বেশির ভাগ কথা বলতে হলো ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে। করোনাভাইরাসের কারণে আপাতত এক রাউন্ডের খেলা স্থগিত করা হয়েছে। তবে বাস্তবতা বলছে, ৩১ মার্চের আগে খেলা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা সামান্যই।
শঙ্কার কথা অজানা নয় খালেদ মাহমুদেরও। তবে তার নিজের চাওয়া, লিগের খেলা চলুক। ক্রিকেটারদের চাওয়াও প্রতিফলিত হলো তার কণ্ঠে।
“আজকে আমরা এসেছি। সেভাবে অনুশীলন করিনি, কারণ খেলা বন্ধ আপাতত। আমরা খেলতে চাই, সত্যি কথা বলতে। ছেলেদের সঙ্গে কথা বলেছি, সবাই খেলতে চাই। যদিও জানি যে করোনার ভয়াবহতা চলছে। তারপরও এই যে ছেলেরা এখানে একাডেমিতে যতটা নিরাপদ আছে, দেশের বাড়িতে গেলে হয়তো ততটা নিরাপদ নয়।”
আবাহনীর ক্রিকেটারদের একটা বড় অংশ থাকছেন মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের একাডেমি ভবনে। তাদের কোচের মতে, এই ছেলেদের ছেড়ে দিলে হতে পারে আরও বিপদ।
“ছেলেদের এখন যদি ছেড়ে দেই, এরা বাড়ী যাবে। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করবে। অনেকেই থাকবে সেখানে, কখন কার কী হয় বলা মুশকিল। সবাইকে চিনবেও না। আক্রান্ত কেউ যদি কাছাকাছি থাকে, ওদের জন্য খারাপই হবে।”
“আমরা চাই এখানেই ওদের রাখতে। দেখা যাক, বোর্ড শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয়। যদি খেলা না হয়, ওদের প্রতি পরামর্শ থাকবে যেন পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার না করে নিজ দায়িত্বে যায়। আর এত লোক বাইরে থেকে এসেছে, সবার সম্পর্কে জানাও কঠিন। এখানে একাডেমিতে নিরাপদ থাকবে।”
খালেদ মাহমুদের মতে, আরও কয়েক রাউন্ডের খেলা স্থগিত হলে লিগের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে।
“আমরা মাঠের মানুষ। আমরা চাই খেলা হোক। খেলা মাঠে ফিরুক, ছেলেরা এটিই চায়। কারণ ক্রিকেট মৌসুম শেষ হয়ে যাচ্ছে। সামনে ঝড়-বৃষ্টি হবে। গরম আরও বাড়বে। আরও সমস্যা হবে খেলতে। আশা করি, দ্রুত সবকিছু ভালো হয়ে যাবে। করোনাভাইরাস থেকে বাংলাদেশ মুক্ত থাকবে।”
“এখন প্রিমিয়ার লিগ যদি বন্ধই থাকে, শুরু হতে না পারে, সামনে রোজার মাসও আসছে। ঠিকমতো শেষ করতে পারি কিনা, সেই প্রশ্ন থাকবে। তারপরও সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান রাখতেই হবে। আশা করব, আমরা যত তাড়াতাড়ি পারা যায় মাঠে ফিরব। ছেলেরা খেলতে চায়।”
গত রোববার এই মৌসুমের প্রিমিয়ার লিগের খেলা শুরু করেছিল বিসিবি। তাদের দাবি ছিল, ঘরোয়া ক্রিকেটে দর্শক তেমন হয় না বলে ঝুঁকি কম। তবে সরকার ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার পর সরকারি সিদ্ধান্তে দেশের সব খেলাধুলাও বন্ধ করে দেওয়া হয় সোমবার।
বিসিবি অবশ্য কেবল বুধ ও বৃহস্পতিবারের খেলা স্থগিত করেছে আপাতত। সরকারকে বুঝিয়ে লিগ চালু করা যায় কিনা, এরকম ভাবনা বিসিবি কর্তাদের আছে। আবাহনী কোচ খালেদ মাহমুদ বোর্ডের একজন পরিচালকও। তার মতে, আপাতত ক্রিকেট মাঠে ঝুঁকি ততটা নেই।
“বসে থাকলেও তো হবে না, চলতে তো হবে। মাঠে দেখছেন আপনারা, কয়টা লোক থাকে! কোর্ট-কাচারিতে লাখ লাখ লোক থাকে। ক্রিকেট তো বডি কন্ট্যাক্টের খেলাও নয়। মাঠে দর্শক হয় গুটি কয়েক। দর্শক বসেন অনেক দূরে, গ্যালারিতে। ক্রিকেটারদের কাছে ঘেষতে পারে না। সেদিক থেকে মনে হয়, সরকার থেকে অনুমতি পেলে দ্রুত শুরু করে দেওয়া যায় খেলা।”
লিগ বন্ধ থাকার সময়টায় বিসিবির জিম ও অন্যান্য অনুশীলন সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন ক্রিকেটাররা। মঙ্গলবার আবাহনীর ক্রিকেটারদের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে অনুশীলন করেছেন আরও কয়েকজন ক্রিকেটার।
মাঠে এসেছিলেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার সৌম্য সরকার। এবারের লিগে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের হয়ে সোমবার ম্যাচ খেলেছেন তিনি। কতটা গুরুতর কারণে লিগ বন্ধ হয়েছে, সেটি জানেন তিনি। গুরুত্বও অনুধাবন করছেন। তবে তারও চাওয়া, দ্রুত আবার শুরু হোক খেলা।
“একটি রাউন্ড স্থগিত হয়েছে, এটি অবশ্যই সবার ভালোর জন্য। আশা করি, দেশের মানুষ সবাই সুস্থ থাকবেন, আমরাও সুস্থ থাকব। সুস্থ থাকাটাই মুখ্য, তাহলে সামনে অনেক ম্যাচ খেলা যাবে। তবে খেলোয়াড় হিসেবে আমি মাঠে থাকতে চাই, ফিরতে চাই। ভাইরাসের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা অবশ্যই ভালো। এখন যত দ্রুত এসব শেষে আমরা মাঠে ফিরতে পারব, সেটি চাওয়া।”