সীমান্তের সর্বাপেক্ষা ঝুঁকিপূর্ণ জেলা যশোর এবার করোনার ‘হটস্পট’ হতে চলেছে। প্রশাসনের প্রাণান্তকর চেষ্টার পরও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলার কারণে করোনা এখানে ভয়ঙ্করভাবে থাবা মেলতে শুরু করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে জেলার করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার প্রায় দ্বিগুণের কাছে পৌঁছে গেছে। এজন্য বুধবার বিকেলে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির জরুরি সভায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সরাসরি ‘লকডাউন’ না বললেও যশোর ও নওয়াপাড়া পৌরসভায় বুধবার মধ্যরাত থেকে ‘বিধিনিষেধ’ নামের ‘অঘোষিত লকডাউন’ কার্যকর করতে যাচ্ছে। এজন্য জেলা প্রশাসন প্রজ্ঞাপন জারি করবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান।
এর আগে এই দুই পৌরসভায় দুটি করে ওয়ার্ডে এই কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর ছিলো। এখন গোটা পৌর এলাকাকেই এর আওতায় আনা হলো।
যশোর জেলার করোনা সংক্রমণের হার ও সাবির্ক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্যে মঙ্গলবার বিকেলে কালেক্টরেট সভাকক্ষে সভার আয়োজন করে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি।
সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সভায় বলা হয়, প্রতিদিন যশোর পৌর এলাকা ও অভয়নগরের নওয়াপাড়া পৌর এলাকায় সংক্রমণের হার বেড়ে যাচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে যশোর ও নওয়াপাড়া পৌর এলাকার দু’টি ওয়ার্ডের চলমান বিধিনিষেধই দুটি পৌর এলাকার সব ওয়ার্ডে সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
করোনার ‘হটস্পট’ হতে চলেছে যশোর, অঘোষিত লকডাউন
সভায় সবার মাস্ক ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে, বাজারে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের পাশাপাশি গণসমাবেশ ও অনুষ্ঠান আয়োজন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, নতুন বিধিনিষেধের আওতায় মোটরসাইকেল ও রিকশায় একজন এবং অটোরিকশায় দুজনের বেশি চলাচল করতে পারবে না।
সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, জেলায় করোনা সংক্রমণের হার মার্চ মাসে ১২ শতাংশ থেকে এপ্রিলে ২৫ শতাংশে উন্নীত হয়। মে মাসে তা ১৮ শতাংশে নেমে আসে। জুন মাসের এক সপ্তাতে তা হু হু করে বেড়ে প্রায় ৩২ শতাংশে উঠে যায়। এ মাসে এক হাজার ৯শ’ ৬৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ৬শ’ ১৫ জনের পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই দুটি পৌরসভায় স্বাস্থ্যবিধি মানতে এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সদস্যবৃন্দ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করবেন। এছাড়া জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবেন। বিজিবি, র্যাব, আনসার বাহিনীর টহল টিম টহল জোরদার করবে। দুটি পৌরসভায় স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আইন অমান্যকারীকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করা হয় সভা থেকে।
পাশাপাশি যশোর শহরের বাইরে বিভিন্ন গ্রামে করোনা আক্রান্তদের বাড়িতে লাল পতাকা উত্তোলন করা হবে। সেখানে জনগণের চলাচল সীমিতকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন। যেসব এলাকা বিধিনিষেধের আওতায় থাকছে, সেসকল এলাকার রাস্তাঘাট বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বিধিনিষেধের এলাকায় থাকা সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। কাঁচা বাজারগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান বসানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে।
এর আগে গত ৫ জুন সভা থেকে যশোর পৌরসভার ৩ ও ৪ এবং নওয়াপাড়া পৌরসভার ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।