বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে আটকে গেছে দেড় লাখ শ্রমিকের বিদেশ যাত্রা। এই সময়ে যারা দেশে ফিরেছিলেন তাদের যাওয়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে।
তবে করোনা ভাইরাসের এই সংকট কালে যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে তাদের মেয়াদ বাড়াতে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, ‘তিনটি ধাপে আমাদের দেড় লাখ শ্রমিকের বিদেশ যাওয়া আটকে গেছে। প্রথমত, যাদের সমস্ত কার্যক্রম (স্মার্টকার্ড, ইমিগ্রেশন, মেডিকেল) সম্পন্ন হয়েছে তারা ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার কারণে যেতে পারছে না। দ্বিতীয়ত, যাদের ভিসা সম্পন্ন হলেই যেতে পারবে। তৃতীয়ত, যেসব শ্রমিকের চাহিদা ইস্যু করা হয়েছে সেগুলো প্রস্তুত করা হচ্ছে।
সৌদি আরব বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। দেশটিতে ৪০ লাখের মতো বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করেন। করেনা ভাইরাস ঠেকাতে সৌদি সরকার বিদেশিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সে কারণে দেশটিতে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে কর্মী পাঠানো বন্ধ হয়ে গেছে।
শুধু সৌদি আরর নয়, কুয়েত, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও চলছে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। এর ফলে ভিসার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরও বিদেশে কাজ করতে যেতে পারছেন না কোনো বাংলাদেশি।
শুধু নতুন কর্মীরা নন, বিপাকে পড়েছেন ছুটিতে আসা অনেকে। এরইমধ্যে তাদের ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। এতে অনেকেই চাকরি হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন। এমতাবস্থায় ভিসার মেয়াদ বাড়াতে দূতাবাসগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, ‘অনেক দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করবেন তারা।’
রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, ‘যারা বিদেশ যাওয়ার জন্য ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছে, তাদের ঋণের সুদ যেন স্থগিত রাখা হয়। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরকার থেকে তাদের একটি আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা উচিত।’
করোনা ভাইরাসের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী হলে বিদেশের শ্রমবাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
বায়রা মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান আরও বলেন, ‘সবাই পোশাক খাত নিয়ে কথা বলছেন। করোনা ভাইরাসের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী হলে আগামী মাস থেকে আমাদের এই খাত চালাতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে। আমাদের কাছে যে দেড় লাখ ভিসা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, সেখানে বড় ধরনের বিনিয়োগ করা হয়েছে। লোক পাঠাতে না পারলে আমরা এই টাকা আদায় করতে পারবো না।’
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বিদেশে শ্রমিক যাওয়া কমে গেছে ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই। জানুয়ারিতে যে সংখ্যক শ্রমিক বিদেশে গেছেন, ফেব্রুয়ারিতে তার ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ কম। জানুয়ারিতে কর্মী হিসেবে বিদেশে গেছেন ৬৯ হাজার ৯৯৮ জন আর ফেব্রুয়ারিতে গেছেন ৫৯ হাজার ১৩৯ জন।’
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে কমে গেছে রেমিটেন্স প্রবাহ। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশে এসেছে ৩৮ কোটি ডলারের রেমিটেন্স। দ্বিতীয় সপ্তাহে এছে ৪২ দশমিক ৫ কোটি ডলার। তৃতীয় সপ্তাহে সেটি কমে ২৬ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। চলতি মাসের প্রথম ১৯ দিনে রেমিটেন্স এসেছে ১০৭ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম আটমাসে এসেছে ১ হাজার ২৫০ কোটি ডলার।