করোনাভাইরাস সংকটে কতিপয় গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষার বদলে কয়েক কোটি মানুষের জীবনরক্ষায় তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও নাগরিক সংগঠনের নেতারা। শুক্রবার এক যুক্ত বিবৃতিতে তারা এই দাবি জানান।
এতে বলা হয়, বহু দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের নিরাপত্তাহীনতা এমনিতেই বেশি। করোনা পরিস্থিতিতে তারা ভয়ঙ্কর অস্তিত্ব সংকটে পড়েছেন। পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবার আগেই তড়িৎগতিতে সরকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
বিবৃতিতে করোনা পরিস্থিতিতে ছয় দফা জরুরি প্রয়োজন তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে অন্তত তিনমাসের জন্য এক কোটি পরিবারকে বিনামূল্যে খাদ্যসহ অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যাদির যোগান দেওয়া, এসব পরিবারের চিকিৎসা বিনামূল্যে নিশ্চিত করা, কৃষকের ফসল, সব্জি ও ফলের সঠিক দাম নিশ্চিত করা; সব প্রতিষ্ঠানে বেতন মজুরি নিশ্চিত করা, ক্ষুদে উদ্যোক্তা ও কৃষকদের জন্য সহজশর্তে ঋণ সহজলভ্য করা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিশেষ করে রোহিঙ্গা, পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য ত্রাণ ও সরকারি সহায়তা নিরবচ্ছিন্ন ও পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রদান, হাম-আক্রান্ত অঞ্চলে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও জরুরি মানবিক সহায়তা প্রদান করা।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই কোটি কোটি মানুষের খাদ্য, ন্যূনতম চিকিৎসা ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে সমন্বিত, স্পষ্ট ও সম্মানজনক কর্মসূচি সরকারকেই নিতে হবে। এজন্য ৭০ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকার একটি প্যাকেজ বরাদ্দ প্রয়োজন। এ বরাদ্দের জন্য জনগণের ওপর করের নতুন বোঝা না চাপিয়ে কয়েকটি গোষ্ঠীর কাছ থেকে জনগণের লুন্ঠিত সম্পদের কিছু অংশ উদ্ধার করলেই বিপন্ন জনগণকে বিপদ থেকে উদ্ধার করা সম্ভব। প্যাকেজ বরাদ্দ ঘোষণা করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিটি গঠন করলে সরকারের পক্ষে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব। সরকার স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করলে বহু সামাজিক শক্তি এতে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে রাজি থাকবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস , মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. পারউইন হাসান, আলোকচিত্রী ও লেখক ড. শহিদুল আলম, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের শিক্ষক ড. স্বপন আদনান, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, নারী অধিকার কর্মী শিরীন প. হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক (অবসরপ্রাপ্ত) ড. আকমল হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সামাজিককর্মী ও পরিবেশবাদী খুশি কবীর, বিপ্লবী সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খান, সাধারণ সম্পাদক আসলাম খান, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি সহিদুল্লাহ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান প্রমুখ।