করোনাভাইরাস আতঙ্কে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। যেহেতু এর কোনো প্রতিষেধক নেই এ কারণে এটি প্রতিরোধে অনেকেই ভিটামিন সি খা্ওয়ার ব্যাপারে জোর দিচ্ছেন। কেউ কেউ ভাবছেন, বেশি করে ভিটামিন সি খেলেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, ফ্লু ঠেকাতে ভিটামিন সি-এর ভূমিকা আছে মনে করা হলেও এটা আসলে সাধারণ ফ্লু ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকায় না। বরং রোগ হওয়ার পর তার প্রকোপ কম রাখতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে ভোগান্তির সময়টা কমাতেও সাহায্য করে।
ভিটামিন সি কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে কতটা উপকারী এবং কি মাত্রায় এটা গ্রহণ করা উচিত তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন নানা কথা। চাইনিজ জার্নাল অব ইনফেকশাস ডিজিজ-এ প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীকে যদি শিরার মাধ্যমে বেশি মাত্রায় ভিটামিন সি দেওয়া যায় তাহলে তার ফুসফুসের কার্যকারিতা কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা আছে। এতে তার কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র তথা ভেন্টিলেটরের প্রয়োজনও কিছুটা কমতে পারে।
আরেকটি গবেষণা বলছে, ভিটামিন সি গ্রহণের ফলে করোনা আক্রান্ত রোগীর ইনটেনসিভ কেয়ারে থাকার প্রয়োজনীয়তা ৮ শতাংশ কমতে পারে। আর ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন কমতে পারে ১৮ শতাংশ। তবে এসব গবেষণাই এখনও ক্লিনিকাল ট্রায়ালের পর্যায়ে আছে। এর মানে হচ্ছে, ভিটামিন সি দিয়ে চিকিৎসা করলে তা কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য কতটা উপকারী হবে তা নিয়ে এখনও পরীক্ষা চলছে।
অন্য একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে, শিরার মধ্যে দিয়ে বেশি মাত্রায় ভিটামিন সি দিলে সোয়াইন ফ্লু ও অন্য আরও কিছু ভাইরাস সংক্রমণে ফুসফুসে যে প্রদাহ হয় তার প্রকোপ কিছুটা কমতে পারে। তবে এটাও ক্লিনিকাল ট্রায়ালের পর্যায়ে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভিটামিন সি যেহেতু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এ কারণে সীমিত আকারে এটা খেতে পারেন। কিন্তু করোনা নিয়ন্ত্রণে প্রচুর পরিমাণে এই ভিটামিন খাওয়ার দরকার নেই। কারণ কোন গবেষণাপত্রে এই ভিটামিন খাওয়ার কথা বলা হয়নি। বলা হয়েছে শিরার মাধ্যমে দেওয়ার কথা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন সি খেলে তা ইউরিনের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। এতে পেট খারাপ হতে পারে।
কতটা ভিটামিন সি খাবেন?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে ৯০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি দরকার। ধূমপায়ী হলে বা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে আরও ৩০-৩৫ মি গ্রাম বেশি প্রয়োজন হয়। পুষ্টিবিদদের মতে, সাধারণত মাঝারি আকৃতির একটা কমলা খেলেই প্রয়োজনের ৭৭ শতাংশ পূরণ হয়ে যায়। এছাড়া এককাপ রান্না করা ব্রকলি খেলে ভিটামিন সি পাওয়া যায় প্রায় ১১০ শতাংশ।
আবার অনেক খাবার থেকেও দিনের চাহিদার বেশি ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটা কাঁচা মরিচে ১২১ শতাংশ, একটা পেয়ারায় ১৪০ শতাংশ, আধকাপ গোলমরিচে ১৫২ শতাংশ ভিটামিন সি পাওয়া যায়। সকালে খালিপেটে লেবুর রস খেলে সারা দিনের চাহিদার ৯০ শতাংশ পাওয়া যাবে।