চট্টগ্রামের লাইফ লাইন কর্ণফুলী নদী থেকে উচ্ছেদ অভিযানের দ্বিতীয় দিনে উচ্ছেদ করা হয়েছে ৭০টি অবৈধ স্থাপনা। মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মাঝিরঘাট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা ও র্যাব-৭-এর সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজের নেতৃত্বে দুই শতাধিক পুলিশ ও র্যাব সদস্য অংশ নেন অভিযানে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন এতে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ফায়ার সার্ভিস, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ, কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ, বিআইডব্লিউটিএ ও র্যাব-পুলিশ-আনসার।
সহকারী কমিশনার তাহমিলুর রহমান সমকালকে জানান, উচ্ছেদ অভিযানের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে কর্ণফুলী নদীর মাঝিরঘাট এলাকা থেকে অভিযান শুরু করা হয়। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ৩০টি পাকা ঘর উচ্ছেদ করা হয় এবং অবৈধভাবে অবস্থান নেওয়া ৪০টি ঘর নিজ উদ্যোগে ভেঙে ফেলেন বসবাসকারীরা। বিকেল ৫টা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করা হয়। সবার প্রচেষ্টায় অভিযান কার্যক্রম দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সব সংস্থা আন্তরিকতার সঙ্গে অভিযান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। অভিযান পরিচালনা করতে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়নি আমাদের। উচ্ছেদ অভিযানে কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। যতবড় প্রভাবশালী হোক না কেন, কর্ণফুলীর তীরে একটিও অবৈধ স্থাপনা থাকতে পারবে না।
পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা জানান, দ্বিতীয় দিনের মতো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। প্রশাসনের পাশাপাশি দ্বিতীয় দিনে অবৈধভাবে অবস্থান নেওয়া অনেকে নিজ উদ্যোগে স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। এখন পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। সেইসঙ্গে এখনও পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেনি। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে আমরা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে পারব।
উচ্ছেদ অভিযানের প্রথম দিনে সোমবার ৮০টি অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয় ৪ একর ভূমি। এতে দখলমুক্ত করা হয় প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা। ২০১০ সালের ১৮ জুলাই পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশ-এর পক্ষে জনস্বার্থে একটি রিট আবেদন করা হয়। পরে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ কর্ণফুলী নদী দখল, মাটি ভরাট ও নদীতে সব ধরনের স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দেয়। সেইসঙ্গে ছয় মাসের মধ্যে স্থানীয় প্রশাসনকে নদীর প্রকৃত সীমানা নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দিতেও নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশের পর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর কর্ণফুলীর দুই তীরে সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করে। জরিপে কর্ণফুলী নদীর দুই তীরে প্রায় আড়াই হাজার অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসন। পরে এ প্রতিবেদনটি ২০১৫ সালের ৯ নভেম্বর দাখিল করা হয় উচ্চ আদালতে। পরে ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ কর্ণফুলীর দুই তীরে গড়ে ওঠা স্থাপনা সরাতে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দেন। অর্থ সংকটে সে সময় উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। পরে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে এক কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন চিঠি দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় সেবারও আর উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে অর্থ বরাদ্দের পর গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রথমবারের মতো এত বড় পরিসরে ও কয়েকটি সংস্থার সমন্বয়ে কর্ণফুলীর পাড়ে অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।