ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় একটি স্কুলে গভীর নলকূপ খননের পর পাইপ বসানোর সময় হঠাৎ উপড়ে গিয়ে পানি, বালি ও ‘গ্যাস’ উঠতে শুরু করেছে। গত ১২ ঘণ্টা ধরে অবিরাম হলহল করে তা বের হয়েই চলেছে।
বুধবার সকাল ৯টার দিকে স্থানীয় শেরেবাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠের এ ঘটনার শুরু হয়। এমন ‘উদগিরণের’ ফলে বিদ্যালয়সহ অষ্টজংগল গ্রাম হুমকির মুখে পড়েছে। উপজেলায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাল পতাকা উড়িয়ে পুরো এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে গ্রামে কেউ যাতে চুলায় আগুন না ধরান সে বিষয়ে মাইকে প্রচার করে সাবধান করে দিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পানি ও বালিতে শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ ভরে গেছে। গ্যাসের গন্ধে পুরো এলাকায় এক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। শত শত মানুষ বিদ্যালয়ের দেয়ালের চারপাশে ঘিরে আছেন।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ও বায়েক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আল মামুন ভুইয়া জানান, বিদ্যালয়ের পানীয় জলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি গভীর নলকূপ বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দ পাওয়া ওই গভীর নলকূপটি গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ১৫ জন শ্রমিক বসানোর কাজ শুরু করেন। মঙ্গলবার রাতে ৫৪০ ফুট খননের পর বালি ও পানির স্তর পাওয়া যায়। বুধবার সকাল ৯টার দিকে শ্রমিকরা সেখানে পানির ফিল্টার পাইপ স্থাপনের জন্য পাইপ উত্তোলনের সময় গ্যাস, পানি ও বালির চাপে পাইপ উপড়ে যায় এবং শ্রমিকরা ১৫ থেকে ২০ ফুট উপর থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যান।
তিনি জানান, এ অবস্থায় প্রায় ১২০ ফুট পর্যন্ত পানি, বালি ও গ্যাস উপরে উঠতে থাকলে এক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। প্রশাসনের নির্দেশে তাৎক্ষণিক অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল ছুটি ঘোষণা করা হয়।
আল মামুন ভুইয়া জানান, এরপর চলতি দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর হোসেন খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি স্থানীয় পুলিশ ও বিজিবি সদস্য দ্বারা স্কুল কর্ডন করে লাল পতাকা উড়িয়ে দেন এবং সেখানে নজরদারি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, বিরতিহীনভাবে পানি, গ্যাস ও বালি উঠে বিদ্যালয়ের মাঠ ভরে বালি ও পানি গড়িয়ে আশেপাশের জমিতে চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মাঠে প্রায় ১ ফুট বালি স্তর পড়ে গেছে। পুরো এলাকা গ্যাসের আচ্ছন্ন হওয়ায় জনসাধারণকে চুলা জ্বালানো বন্ধ রাখার ও আশেপাশে আগুন না জ্বালাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম জানান, এই ঘটনা শুনে শত শত নারী-পুরুষ বিদ্যালয়ের গেইটের বাইরে থেকে এ দৃশ্য দেখছেন। তবে সবাই আতংকিত হয়ে আছেন সিলেটের মাগুর ছড়ার মতো কোনো দুর্ঘটনা ঘটে কিনা। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ কসবা-আখাউড়া থেকে নির্বাচিত এমপি ও মন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলেছেন যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, তিনি এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছেন। এছাড়া তিনি আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গেও কথা বলেছেন।
এই মুহূর্তে দমকল বাহিনীর লোকজন বেশ কিছু কার্বনডাইঅক্সাইড সিলিন্ডার নিয়ে শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয় এলাকায় অবস্থান করছেন।