ইন্দোর টেস্ট যেন এক আয়না, যেখানে বাংলাদেশের ক্রিকেটের শক্তি-দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আর যা ফুটে উঠছে তা মোটেও ভালো লাগার নয়। বাংলাদেশ কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর মতে, তলানিতে পড়ে থাকতে না চাইলে টেস্ট দলের কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে।
টেস্ট দলের জন্য খুঁজতে হবে পেস বোলিং অলরাউন্ডার। ব্যাটসম্যানদের উন্নতি করতে হবে। বাকিটা, পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন করে আনতে হবে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন। সে প্রক্রিয়ায় কিছু দিন ভুগতে হলেও নতুন মুখ নিয়ে নতুন করে চেষ্টা করতে হবে। ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ডমিঙ্গো। সেখানে ইন্দোর টেস্ট, বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে কথা বলেন প্রধান কোচ।
হতাশাজনক দিন গেল। ইন্দোর টেস্টে বাংলাদেশ কোথায় দাঁড়িয়ে আছে?
ডমিঙ্গো: কঠিন এক দিন কাটল। পুরো কৃতিত্ব ভারতের। দুই দিন ওরা আমাদের ডমিনেট করেছে। এখনও তিন দিনের খেলা বাকি। খুব কঠিন পরিস্থিতি, তবে আমাদের জন্য বিশেষ কিছু করার সুযোগও। অনেকের ২০ কিংবা ৩০ গড় আছে। আমাদের এমন কাউকে লাগবে যে ১০০, ১৫০ কিংবা ২০০ রান করবে যেমনটা আজ মায়াঙ্ক (আগারওয়াল) করেছে।
এ নিয়ে বাংলাদেশের দুটি টেস্ট দেখছেন। টেস্ট দল সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?
ডমিঙ্গো: দলের কাঠামোর পরিবর্তন প্রয়োজন। দুই পেসার নিয়ে খেলা খুব কঠিন। আমাদের অবশ্যই তৃতীয় একজন পেস বোলার প্রয়োজন হবে যে ব্যাট করতে পারে। সাইফ উদ্দিন আছে তবে সে চোটের সঙ্গে সংগ্রাম করছে। দলের কাঠামো মনোযোগ দাবি করছে। আমার মনে হয়, অনেক দলই বাংলাদেশের বিপক্ষে ভালো উইকেট বানাবে, যেটা খুব একটা স্পিন করবে না। আমাদের এমন একজন পেসার বের করতে হবে যে, সাত বা আট নম্বরে ব্যাট করতে পারে।
তৃতীয় পেসারের অভাব অনুভব করছেন?
ডমিঙ্গো: অবশ্যই আমরা তিন পেসার নিয়ে খেলার কথা ভেবেছিলাম। তবে এতে আমাদের ব্যাটিং লাইন আপ হালকা হয়ে যেত। সম্ভবত আমাদের তিন পেসার খেলানো প্রয়োজন ছিল।
অধিনায়ক হিসেবে মুমিনুল হকের প্রথম দিনটা কেমন ছিল?
ডমিঙ্গো: এটা খুব অনভিজ্ঞ একটা টেস্ট দল। গতকাল ছিল অধিনায়ক হিসেবে মাঠে মুমিনুলের প্রথম দিন। অধিনায়কের জায়গাটা খুব কঠিন। সে শান্ত ও ধীর-স্থির একজন মানুষ। আমি নিশ্চিত, সে আজকে অনেক কিছু শিখেছে। ভারতে একটি টেস্টে কঠিন দুটি দিন দেখে তাকে বিচার করাটা খুব কঠিন হবে। এই দায়িত্বে সে বেড়ে উঠবে। তার মধ্যে সকল বৈশিষ্ট্য আছে।
প্রথম টেস্টের আগে আমরা টেস্ট স্কোয়াডের সঙ্গে দুই দিন ছিলাম। টি-টোয়েন্টির দিকে অনেক বেশি মনোযোগ ছিল। কারণ, সেটাই আগে ছিল। টেস্ট ক্রিকেটের প্রস্তুতির জন্য খুব বেশি সময় ছিল না।
পিচ পড়তে বাংলাদেশ ভুল করেছে কি না?
ডমিঙ্গো: আমি জানি, এমন পিচে সময়ের সঙ্গে এখানে ব্যাট করা কঠিন হয়ে যায়। কাল এক সময়ে আমাদের স্কোর ছিল ১০৩/৩। সেখান থেকে দিন শেষে আমাদের স্কোর হতে পারতো ২৮০। আমরা আমাদের সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু আমরা মিডল ও লোয়ার অর্ডারে ব্যর্থ হয়েছি।
তাহলে ভারত এতো রান কি করে করল?
ডমিঙ্গো: সবশেষ যখন আমি এসেছিলাম, ভারতীয় কোনো ব্যাটসম্যান বড় ইনিংস খেলতে পারেনি। যতদূর মনে পড়ে, অজিঙ্কা রাহানে দিল্লি টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিল। আর কেউ বড় ইনিংস খেলতে পারেনি। এই মুহূর্তে তাদের সবাই আত্মবিশ্বাসী। তারা ভালো উইকেটে খেলছে। টেস্ট ক্রিকেটে এখন বেশ সফল। গত ৬/৭ মাসে এটা বাংলাদেশের কেবল দ্বিতীয় টেস্ট। ভারত গত তিন মাসে সম্ভবত খেলেছে ১০ টেস্ট। দুই দলের অভিজ্ঞতায় অনেক বড় পার্থক্য রয়েছে। এ কারণেই দুই দলের পারফরম্যান্সে এতো পার্থক্য।
অনভিজ্ঞতাই তাহলে ব্যবধান গড়ে দিয়েছে বলতে চাচ্ছেন?
ডমিঙ্গো: বাংলাদেশের টেস্ট রেকর্ড ভালো নয়। তারা ১১৫ ম্যাচের মধ্যে ১৩টা জিতেছে। যদি আমরা খুব ভালো টেস্ট দল হতে চাই এবং দেশে ও বাইরে ভালো পারফরম্যান্স নিশ্চিত করতে চাই তাহলে, আমাদের দলে কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে। আগামী দিনের পরিকল্পনা ঠিক করতে আমাকে নির্বাচক ও অধিনায়কের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।
আমার দ্বিতীয় টেস্টে আমি কিছু খেলোয়াড় দেখেছি। দলের কি প্রয়োজন, কোথায় ঘাটতি তার একটা ধারণা আমার হয়েছে। আশা করি, আমরা পরিবর্তনগুলো করতে পারব এবং এগিয়ে যেতে পারব।
আবু জায়েদ চৌধুরি আজ চমৎকার বোলিং করেছে। দল তাকে সমর্থন দিয়ে যাবে কি না?
ডমিঙ্গো: আমরা মতে, সে খুব ভালো একজন টেস্ট বোলার। লাইন ও লেংথে সে ধারাবাহিক। এই ম্যাচে সে খুব ভালো বোলিং করেছে। আমি কিছু প্রতিবেদন পড়েছি যেখানে বলা হয়েছে ঘরোয়া ক্রিকেটে খুব বেশি উইকেট সে পায়নি। তবে আমার মতে ও আমাদের শীর্ষস্থানীয় একজন টেস্ট বোলার। কেউ কেউ বলতে পারে, সে এখনও খুব বেশি উইকেট পায়নি। আমাদের পরিকল্পনায় ওর বড় ভূমিকা থাকবে। সে এমন একজন যাকে আমাদের অবশ্যই সমর্থন দিতে হবে।
২০ গড়ের একজন বাড়তি ব্যাটসম্যান নেওয়ার চেয়ে একজন বাড়তি বোলার নেওয়া বেশি যৌক্তিক কি না?
ডমিঙ্গো: যখন আপনার ছয় ব্যাটসম্যানের গড় ৪৫ কিংবা ৫০ তখন এটা বলা সহজ। আপনি ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের সংখ্যাগুলো দেখেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের লাইন আপে এখনও এই সংখ্যাগুলো নেই। এই জন্য ঘাটতি পূরণের জন্য আমাদের বাড়তি ব্যাটসম্যান নিতে হয়। যদি আপনি উইকেট নিতে না পারেন, সবাই বলবে কেন আপনি বাড়তি বোলার নেননি।
দেশের বাইরে ভালো করতে ভালো একটি বোলিং ইউনিট কতটা জরুরি?
ডমিঙ্গো: টেস্ট জিততে আপনার একটা বোলিং ইউনিট প্রয়োজন হবে। দেশের বাইরে ভালো করতে বাংলাদেশের অন্তত ছয় জন বোলার প্রয়োজন হবে। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা সবাই দেশের বাইরে ভালো করে। কারণ, তাদের পাঁচ কিংবা ছয় জন পেসার আছে যারা দেশে কিংবা বাইরে যে কোনো কন্ডিশনে কার্যকর।
দেশের মাটিতে বাংলাদেশের শক্তি অবশ্যই স্পিন বোলিং। পেসাররা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে এমন পিচে তাদের সুযোগ দিতে হবে। দিনে ১৮ থেকে ২০ ওভার বোলিং করাতে হবে। আমার মনে হয়, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে যে উইকেট আছে সেখানে তাদের এটা করার সুযোগ দেওয়া হয় না। চার দিনের ম্যাচে ওরা হয়তো ছয় বা সাত ওভার বোলিং করে।
তাহলে কি বাংলাদেশ পরাজয়ের ধারা থেকে বের হয়ে আসতে পারবে?
ডমিঙ্গো: কোনো সন্দেহ নেই দলের কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে। অন্যথায় ফল সব সময় একই হবে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে নির্বাচকদের সঙ্গে আমার বসতে হবে। কয়েকজন নতুন মুখ নিয়ে শুরুতে কিছু সময়ে সংগ্রাম করলে তা এই মুহূর্তে যা হচ্ছে তার চেয়ে ভিন্ন কিছু হবে না। আমাদের দলে দারুণ কিছু খেলোয়াড় আছে যাদের সম্মান প্রাপ্য। বাংলাদেশের জন্য তাদের পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন আমাদের করতে হবে। একই সঙ্গে দলের স্বার্থে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।