কারফিউ শিথিল হওয়ায় কয়েক দিন ধরেই বেড়েছে সাধারণ মানুষের চলাচল। জনমনে ধীরে ধীরে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। শুক্রবার ছুটির দিন থাকলেও সব জায়গাতেই ছিল মানুষের কর্মব্যস্ততা।
রাজধানী ঢাকায় যারা এতদিন ঘর থেকে বের হননি তারাও এদিন বেরিয়ে এসেছিলেন। ছুটির দিন হলেও মূূলত কর্মব্যস্ততার মধ্য দিয়েই কেটেছে বেশির ভাগ মানুষের। এদিন সব শ্রেণিপেশার মানুষ তাদের জরুরি কাজ সেরে নেওয়ার পাশাপাশি পেশাগত নানা কজেও যুক্ত ছিলেন।
শুক্রবার খোলা ছিল অনেক কারখানা। পোশাক শ্রমিকদের অনেকেই যার যার কর্মস্থলে গেছেন। কাজ সেরেছেন। শ্রমজীবী মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেমে এসেছিলেন রোজগারের আশায়। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ ঘরে বসে থাকতে রাজি নন। অন্যান্য দিনের তুলনায় এদিন রাস্তায় রিকশা, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনও চলেছে অনেক বেশি।
রাজধানীর বাংলামটরে রিকশাচালক হাতেম আলি বলেন, চাকা না ঘুরলে আমাদের পেট চলবে না। তাই সব বন্ধ থাকলে আমাদের বিপদ। আমরা আর এসব গ্যানজাম চাই না। কাজ করে পরিবার পরিজন নিয়ে দুবেলা খেয়ে বাঁচতে চাই। আজকে সকাল থেকেই রিকশা চালিয়েছি। আয়ও গত কয়েক দিনের চেয়ে ভালো। আগামী সপ্তাহে অবস্থা যেন আরও ভালো হয়।
সপ্তাহে শুক্রবারের সন্ধ্যাতেই বাকি ছয় দিনের বাজার সারেন সিঙ্গেল মাদার নূর-জাহান তন্বী। পেশায় ব্যাংকার তন্বী থাকেন সেগুনবাগিচায়। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে যে সহিংসতা ঘটেছে- তা ন্যক্কারজনক। প্রাণভয়ে বাসা থেকেই বের হইনি। শুক্রবার কারফিউ অনেকটাই শিথিল ছিল। তাই অনেকেই রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিলেন, আমিও তাই। দুই মেয়েকে নিয়ে বাজার সেরেছি। তিনি বলেন, আমরা এমন ঘটনা আর চাই না। স্বস্তি ফিরে আসুক সবখানে। সবকিছু স্বাভাবিক হোক। আগের অবস্থায় ফিরে আসুক।
এদিন রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে সেনাবাহিনী, পুুলিশ, র্যাব, বিজিবির উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়। টহল থাকলেও নগরজুড়েই ফিরে এসেছে স্বস্তি। গত কয়েক দিন ধরে যারা বের হয়েছেন- তাদের কেটে যাচ্ছে শঙ্কাও। সাধারণ মানুষ বলছেন, সাম্প্রতিক সৃষ্ট পরিস্থিতি ছিল চরম ভয়ংকর ও আতঙ্কের। কারফিউ জারির পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। শুক্রবার নগরের সড়ক, বাজারসহ বিভিন্ন শপিংমলে সাধারণ মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সারেন।
এদিন সড়কে দেখা মিলেছে রিকশা-সিএনজি, বাসসহ ব্যক্তিগত গাড়িও। ঢাকার ফার্মগেট, মিরপুর, সায়েদাবাদ, মতিঝিল, কল্যাণপুর, বনানী, তেজগাঁও, মহাখালীসহ বিভিন্ন রাস্তায় যান চলাচল করতে দেখা গেছে। মহাখালী থেকে গুলশান-১ নম্বর হয়ে বাড্ডার সড়কসহ নগরের বিভিন্ন সড়কে বৃহস্পতিবার যানজট ছিল। শুক্রবার কোনো কোনো সড়কে যানজট ছিল। বৃহস্পতিবারের তুলনায় এদিন মানুষের চলাচল অনেক বেশি দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহ থেকেই পরিস্থিতি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করে। ধীরে ধীরে কাউফিউ শিথিল করা হয়। সাধারণ মানুষও ঘর থেকে বের হতে থাকে। খোলা হয় অফিস-আদালত। খোলে ব্যাংক, কারখানাও। পাশাপাশি সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হয় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা দ্রুত সময়ের মধ্যেই পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।