বাংলাদেশে ৬৮টি কারাগারে ১৪১টি পদের বিপরীতে চিকিৎসক মাত্র ১০ জন; যেখানে বন্দি আছেন ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণের বেশি।
এদিকে গত বছর ২৮ জানুয়ারি ২০ জন চিকিৎসককে বিভিন্ন কারাগারে পদায়ন করা হলেও ১৬ জন এখনও যোগ দেননি।
একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্টে কারা অধিদপ্তরের দেওয়া এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে কারাগারে চিকিৎসার অপ্রতুলতার এ চিত্র।
বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চে মঙ্গলবার এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
পরে আদালত রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেয়, কেন ওই ১৬ চিকিৎসক ওই পদে যোগ দেননি তা ১১ নভেম্বরের মধ্যে জানাতে।
আদালতে রিট আবেদনকারী আইনজীবী মো. জে আর খাঁন রবিনের পক্ষে শুনানি করেন এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। আদালতে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
কারা চিকিৎসকদের পদায়নের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারা অধিদপ্তর সরাসরি চিকিৎসক নিয়োগ দিতে পারে না। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে বিসিএস ক্যাডারের সহকারী সার্জন বা সমমানের পদ থেকে প্রেষণে কারা চিকিৎসক পদায়নের বিধান রয়েছে।
নিয়োগপ্রাপ্তরা কেন যোগ দিচ্ছে না, তার কারণও ব্যাখ্যা করা হয়েছে, কারা অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে।
গত ২৪ এপ্রিল আরেকটি রিট মামলায় এ ব্যাখ্যা দিয়েছিল কারা অধিদপ্তর।
তারা বলছে, কারা অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যথা নিয়মে চিকিৎসক পদায়নের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে যাচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক পদায়ন না হওয়ায় এবং প্রেষণে পদায়নের কারণে চিকিৎসকদেরও যোগ দিতে অনীহা রয়েছে।
গত বছর ২৮ জানুয়ারি ১৬ কারা চিকিৎসক নিয়োগের পর শূন্য পদে পদায়ন চেয়ে জনপ্রশাসন সচিব ও স্বাস্থ্য বিভাগকে অনুরোধ জানিয়ে ৫৫ বার চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। তারপরও প্রেষণে চিকিৎসক পদায়ন করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০ সহকারী সার্জনকে পদায়ন করলেও এখনও তাদের ১৬ জন কর্মস্থলে যোগ দেননি।
যোগ না দেওয়া এই ১৬ জনের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নিতে গত বছর ২১ অক্টোবর আবার চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ।
সে চিঠিতে বলা হয়, ইতোমধ্যে ১০ মাস অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও ১৬ জন সহকারী সার্জন অদ্যাবধি স্ব-স্ব কর্মস্থলে যোগদান করেননি।
গত অগাস্টের হালনাগাদ তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ৬৮টি কারাগারে ৪০ হাজার ৬৬৪ জন বন্দি ধারণের ক্ষমতা থাকলেও রয়েছেন ৮৬ হাজার ৯৯৮ জন।
গত ২৩ জুন এক আদেশে আদালত সারাদেশের সব কারাগারে বন্দিদের ধারণ ক্ষমতা, বন্দি ও চিকিৎসকের সংখ্যা এবং কারা চিকিৎসকের শূন্যপদের তালিকা দাখিলের নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করে।
ওই নির্দেশেই কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মোস্তফা কামাল পাশার পক্ষে ডেপুটি জেলার মুমিনুল ইসলাম এ প্রতিবেদন দেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে আদালতে রিট আবেদনটি দায়ের করেছিলেন আইনজীবী জে আর খাঁন (রবিন)।