কিছু বড় দেশ বাংলাদেশে তাঁবেদার সরকার চায় : প্রধানমন্ত্রী

image-104560-1693408724

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ বলেছেন, কিছু বড় দেশ বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এখানে একটি তাঁবেদার সরকার চায়।

তিনি বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কিছু (বড়) দেশ বাংলাদেশে এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেটি তাদের চাটুকার হবে।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। .

আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের রক্ত ঝরিয়ে দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া সত্ত্বেও যেসব দেশ বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচন খুঁজছে তাদের কড়া সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, রক্তের বিনিময়ে আমরা দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি।

তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট এর আগে বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স চালুর প্রস্তাব দিয়েছিল। ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার আইন প্রণয়ন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে এবং কমিশনকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন করেছে।

তারা (কিছু বড় দেশ) গণতন্ত্র ও নির্বাচনের অতীত সম্পর্কে নাও জেনে থাকতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজ, তারা আমাদের দেশে গণতন্ত্র এবং ভোট দেওয়ার অধিকার খুঁজছে।’

সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান, যে পকেট থেকে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, প্রথমে হ্যাঁ/না ভোট এবং রাষ্ট্রপতির ভোটের মাধ্যমে ভোট কারচুপির সংস্কৃতি চালু করে নির্বাচন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু করেন এবং এরশাদ ও খালেদা জিয়া (জিয়াউর রহমানের স্ত্রী) জিয়ার পথই অনুসরণ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বড় দেশগুলো সব সময় বিশ্বের সর্বত্র মাতবরি করার চেষ্টা করে।

রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের অমানবিক অবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যাদের (বড় দেশ) তাদের মতো বন্ধু আছে তাদের শত্রুর কোন প্রয়োজন নেই।

বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি, গুম ও মানুষ হত্যার কথা বলে এমন কিছু দেশকে একপাশে সরিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি রাশেদ ও নূরকে আশ্রয় দিয়েছে এবং বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে খুনি রাশেদকে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করেছি কারণ আমাদের বিচার বিভাগের বিচারে সে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। এতে হস্তক্ষেপ করার অধিকার তাদের নেই। তারা এখন খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে।’

তিনি আরও বলেন, খুনি ডালিম ও রশিদ পাকিস্তান ও লিবিয়ার মধ্যে তাদের আস্তানা পরিবর্তন করে চলছে, অন্য একজন খুনির হদিস এখনও পাওয়া যায়নি এবং বাকি খুনিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, খুনিদের বিচারের জন্য আমার পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমি দেশবাসী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনি ছিলেন এবং তিনি খুনিদের বিচার বন্ধ করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন এবং তাদের বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে পোস্টিং দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলাম।
ঢাকা উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মোন্নাফী এবং পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।
ঢাকা উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাদেক খান এমপি, আবদুল কাদের খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম মাজহার আনাম ও মো. আজিজুল হক রানা, পরিবার কল্যাণ সম্পাদক মেহেরুন্নেছা মেরি ও ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. দিলীপ কুমার রায়, মিজবাউর রহমান ভূঁইয়া রতন ও সাজেদা বেগম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মোরশেদ কামাল, সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তার হোসেন ও গোলাম সারোয়ার কবির প্রমুখ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ড এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মা ও ভাইদের হত্যার পর ৩৫ বছর ধরে তারা ন্যায়বিচার পাননি।

যেসব দেশ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছে, তারা কেন বিষয়টি নিয়ে আওয়াজ তোলেনি এ প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কি মানবাধিকার নেই? ন্যায়বিচার দাবির অধিকার নেই?’

তিনি বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান ও এইচএম এরশাদের রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পথকে অবৈধ ঘোষণা করেছে এবং আদালতের আদেশ অনুযায়ী রাজনৈতিক দল–বিএনপি ও জাতীয় পার্টি অবৈধ।

তিনি বলেন, বিএনপি শুধু হত্যা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ষড়যন্ত্র, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং ও চোরাচালান বা অস্ত্রের রাজনীতি জানে।

তিনি দেশবাসীকে সতর্ক করে বলেন, বিএনপি দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে দেশে শান্তি বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, রাতে কারফিউ জারি করে জিয়া কারফিউ গণতন্ত্রের প্রবর্তন করেছিলেন। বাংলাদেশে ১৯ থেকে ২০টি অভ্যুত্থান ঘটেছে। জিয়া অবাধে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হাজার হাজার সামরিক কর্মকর্তা ও সৈন্যকে হত্যা করে।

তিনি বলেন, ‘হত্যা, অভ্যুত্থান, ষড়যন্ত্র এবং অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী ব্যক্তির পকেট থেকে গঠিত বিএনপির কাছ থেকে গণতন্ত্র শব্দটি শুনে আমি বিস্মিত। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার নিয়ে কথা বলা বিএনপির পক্ষে শোভা পায় না কারণ দলটি নির্বাচনে কারচুপি করে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবীও বিএনপিকে সমর্থন করে আসছে।

১৫ আগস্ট যখন পুরো জাতি জাতির পিতার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে হত্যার জন্য জাতীয় শোক দিবস পালন করছে তখন ১৫ আগস্ট ভুয়া জন্মদিন পালনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করেন।

দেশ ও এর জনগণের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং এভাবে বিশ্ব মঞ্চে মর্যাদা ও সম্মান অর্জন করেছে। এভাবে বাংলাদেশ। মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের সংগঠন। এটা মানুষের কল্যাণে কাজ করে। আসুন আজ আমরা প্রতিজ্ঞা করি যে, জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করে তাদের উন্নত ও সুন্দর জীবন দান করে জাতির পিতার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করবো।

Pin It