উত্তর কোরিয়ার নতুন সংবিধানে নেতা কিম জং-উনকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সেনাপ্রধান ঘোষণা করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তি করার প্রস্তুতির জন্যই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
১৯৫০ থেকে ৫৩ সালের কোরীয় যুদ্ধ দুই কোরিয়ার মধ্যে কোনো শান্তিচুক্তি ছাড়াই যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শেষ হয়েছিল। ফলে দু’দেশের মধ্যে এখনো যুদ্ধের আবহ বজায় আছে।
উত্তর কোরিয়া এ পরিস্থিতির ইতি ঘোষণা করা এবং সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য একটি শান্তিচুক্তি করার উদ্যোগ নিতে যুক্তরাষ্ট্রকে বহুদিন ধরেই আহ্বান জানিয়ে আসছে।
বৃহস্পতিবার সরকারি ওয়েব পোর্টাল নায়িনারায় উত্তর কোরিয়ার নতুন সংবিধান প্রকাশ করা হয়।
এ সংবিধানে ২০১৬ সালে গঠিত শীর্ষ পরিচালনা পর্ষদ ‘স্টেট অ্যাফেয়ার্স কমিশন’ (এসএসি)-এর চেয়ারম্যান কিম জং-উনকে ‘কোরিয়ার জনগণের সর্বোচ্চ প্রতিনিধি’ অর্থাৎ, রাষ্ট্রপ্রধান এবং ‘কমান্ডার-ইন-চিফ’ অর্থাৎ, সেনাপ্রধান বলা হয়েছে।
আগের সংবিধানে কিম জং-উনকে সাধারণভাবে ‘সর্বোচ্চ নেতা’ বলা হয়েছিল। এ পদবি দেশটির গোটা সামরিক বাহিনীর কমান্ডারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
এর আগে উত্তর কোরিয়ার পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্টই দেশের আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্টকে বলা হয় ‘প্রেসিডিয়াম অব দ্য সুপ্রিম পিপলস অ্যাসেম্বলি’।
দক্ষিণ কোরিয়ার ক্যুংনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফার ইস্ট ইনস্টিটিউট’ এর অধ্যাপক কিম ডং-ইয়ুপ বলেন, কিম উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সে স্বপ্ন তিনি সত্যি করে ছেড়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই দেশে সেনাবাহিনীকে প্রাধান্য দেওয়ার চলমান অস্বাভাবিক নীতি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন।
কিম গত বছর থেকে দেশের অর্থনীতিতে মনোনিবেশ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা শুরু করেছেন। দক্ষিণ কোরিয়া, চীন এবং রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিয়ে বিশ্ব নেতা হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।
সিউলে জাতীয় একীকরণ বিষয়ক কোরিয়া ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন গবেষক হং মিন বলেছেন, পদবি পরিবর্তন করায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে বসার জন্য উত্তর কোরিয়ার প্রস্তুতির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ পরিবর্তনের ফলে শান্তিচুক্তি হলে তাতে স্বাক্ষর করার মর্যাদা অর্জন করলেন কিম। তাছাড়া, এর মধ্য দিয়ে একটি স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসাবে উত্তর কোরিয়াকে তুলে ধরারও পট প্রস্তুত হল।
উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত পরিপূর্ণ একটি শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করার পক্ষপাতী ছিল না যুক্তরাষ্ট্র। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, চলমান উত্তেজনা হ্রাস, লিয়াজোঁ অফিস খোলা এবং স্বাভাবিক সম্পর্কের পথে হাঁটার জন্য যুক্তরাষ্ট্র একটি সীমিত চুক্তি সই করতে ইচ্ছুক।