কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ কিছুটা কমলো

image-807490-1716234847

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ছাপানো টাকায় চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত সরকার নতুন কোনো ঋণ নেয়নি। বরং আগের ঋণ থেকে ৩৬ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ কিছুটা কমলেও গত অর্থবছরে নেওয়া ঋণের এখনো ৬২ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। যে কারণে ছাপানো টাকার নেতিবাচক প্রভাব এখনো মূল্যস্ফীতিতে পড়ছে। ফলে এ হার এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের নেওয়া ঋণের স্থিতি মার্চ পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত অর্থবছরের বৈশ্বিক মন্দার কারণে রাজস্ব আয় কমে গেলে এবং বাড়তি ব্যয় মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেকর্ড পরিমাণ ঋণ নিয়েছিল সরকার। এর পরিমাণ ছিল প্রায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। ওই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ স্থিতি ছিল ১ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সরকারের ঋণ স্থিতি কমে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আলোচ্য সময়ে ঋণ স্থিতি কমেছে ২৬ হাজার কোটি টাকা। ঋণ কমেছে ১৮ দশমিক ০৫ শতাংশ। এ সময়ে নতুন কোনো ঋণ নেয়নি। বরং গত অর্থবছরে নেওয়া ঋণের সুদসহ ৩৬ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। ফলে ঋণ স্থিতি কিছুটা কমেছে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ছাপানো টাকায় ঋণ নেওয়াকে সরকারের খারাপ কাজের সঙ্গে তুলনা করা হয়। কারণ, ছাপানো টাকায় ঋণ নিলেই মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যাবে। যথাসম্ভব এ ঋণ এড়িয়ে চলতে হবে। সরকারের অপচয় বন্ধ করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয় না।

তিনি আরও বলেন, সরকারের ঋণ গ্রহণের একটি পরিকল্পনা থাকা দরকার। যাতে আর্থিক খাত সরকারকে চাহিদা অনুযায়ী ঋণের জোগান দিতে পারে। একই সঙ্গে ঋণের টাকা উৎপাদন খাতেই নেওয়া উচিত। অনুৎপাদনশীল খাতে এ টাকা ব্যয় করা একেবারেই অনুচিত। সরকার মূল্যস্ফীতির হার কমানোর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। এটি করতে হলে ছাপানো টাকায় নতুন ঋণ নেওয়া যেমন বন্ধ করতে হবে, তেমনই আগের নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যেসব টাকা বেরিয়ে গেছে, সেগুলো ফেরত আসবে না। ফলে মুদ্রার প্রবাহ বাড়তে থাকবে।

সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব সময়ই টাকা ছাপানোর কাজটি করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশমতো গাজীপুরে অবস্থিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেড টাকা ছাপানোর কাজটি করে। ছাপানো টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে জাম থাকে। ভল্টে থাকা অবস্থায় ছাপানো টাকাকে মৃত বা নির্জীব বা মূল্যহীন কাগজ বলা হয়। ভল্ট থেকে টাকা বাইরে এলেই জীবন পায়। মূল্যবান হয়ে ওঠে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকাকে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বা হাইপাওয়ার্ড মানি বলা হয়, যা বাজারে টাকার প্রবাহ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। এতে মূল্যস্ফীতির হারও বাড়ে। তবে উৎপাদন খাতে ছাপানো টাকার জোগান গেলে মূল্যস্ফীতিতে চাপ কম পড়ে।

অনুৎপাদনশীল খাতে গেলে মূল্যস্ফীতিতে চাপ বেশি পড়ে। গত অর্থবছরে ছাপানো টাকার বেশির ভাগই গেছে অনুৎপাদনশীল খাতে। যে কারণে মূল্যস্ফীতিও বেড়ে ডাবল ডিজিটের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে। এপ্রিলে এ হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ডাবল ডিজিটে উঠেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত বছরের মার্চের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের নেওয়া ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। ওই সময়ে ঋণ বেড়েছে ১০ দশমিক ৭৩ শতাংশ। তবে জুলাই-মার্চের হিসাবে ঋণ কমেছে ২৬ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ঋণ নিয়েছিল ৪৯ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা।

গত অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়েছিল ৪৭ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ঋণ নিয়েছে ২১ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে সরকারের ঋণ কমেছে ২৬ হাজার ২৪১ কোটি টাকা।

গত অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে নন-ব্যাংক খাত থেকে সরকার ঋণ নিয়েছিল প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে নিয়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। এ খাত থেকে সরকারের ঋণ বেড়েছে ৭ হাজার কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র, ট্রেজারি বিল ও ট্রেজারি বন্ড বিক্রি করে সরকার এসব ঋণ নিয়েছে।

এদিকে সরকার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে কম সুদে ঋণ নিতে পারত; কিন্তু এখন সুদের হার বাজারভিত্তিক করতে গিয়ে ট্রেজারি বিল বন্ডের সুদের হার বেড়ে গেছে। এপ্রিলে এ হার বেড়ে গড়ে প্রায় ১১ শতাংশে উঠেছে। এতে সরকারের ঋণের খরচ বেড়ে গেছে, যা সরকারের ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে।

Pin It