ফেইসবুকের কোটি কোটি গ্রাহকের পাসওয়ার্ড সোশ্যাল মিডিয়াটির হাজার হাজার কর্মীর কাছে উন্মুক্ত ছিল বলে খবর প্রকাশ হয়েছে।
ইন্টারনেট নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ব্রায়ান ক্রেবস ফেইসবুকের তথ্য সুরক্ষার ব্যর্থতার এই খবর দিয়েছেন বলে বিবিসি জানিয়েছে।
ক্রেবস বলছেন, ৬০ কোটির মতো ব্যবহারকারীর পাসওয়ার্ড ফেইসবুকের অভ্যন্তরীণ সার্ভারে এমনভাবে ছিল যে চাইলেই সেগুলো তাদের ২০ হাজারের মতো কর্মীর যে কেউ দেখতে পারতেন।
ফেইসবুকের প্রতিটি পাসওয়ার্ডই এনক্রিপটেড বা সাংকেতিকভাবে থাকার কথা, যাতে তা কোনোভাবেই কেউ দেখতে না পারেন। কিন্তু ফেইসবুকের ইন্টারনাল সার্ভারে এসব পাসওয়ার্ড সাধারণ টেক্সট হিসাবে রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ক্রেবস।
তিনি বলেছেন, ফেইসবুকের এক কর্মীই তথ্য সুরক্ষার এই ব্যর্থতা সম্পর্কে তাকে জানিয়েছেন। তার ভাষ্য মতে, ফেইসবুকের কর্মীরা এমন অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছেন যেগুলো দিয়ে এনক্রিপটেড পাসওয়ার্ড ইন্টারনাল সার্ভারে সাধারণ টেক্সট হিসাবে জমা রাখা যায়।
তথ্য সুরক্ষায় ব্যর্থতার এই কথা স্বীকার করে এক বিবৃতিতে ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ বলেছে, অভ্যন্তরীণ সার্ভারে পাসওয়ার্ড সংরক্ষণের ‘সামান্য ত্রুটি’ দেখা দিয়েছিল এবং সেটি তারা ঠিক করে ফেলেছেন।
ফেইসবুক বলছে, নিয়মিত নিরাপত্তা পর্যালোচনায় গত জানুয়ারিতে এই সমস্যাটি তাদের নজরে আসে। পরে তদন্তে দেখা যায়, এতে ক্ষতিগ্রস্তদের অধিকাংশই ফেইসবুক লাইট ব্যবহারকারী।
সাধারণত ধীর গতির ইন্টারনেটের দেশগুলোতেই ফেইসবুক লাইট ব্যবহারের প্রবণতা বেশি।
ফেইসবুকের ভাষ্যমতে, কয়েক কোটি ফেইসবুক লাইট ব্যবহারকারী, লাখ লাখ ফেইসবুক ব্যবহারকারী এবং হাজার হাজার ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীর পাসওয়ার্ড এভাবে উন্মুক্ত হয়ে পড়েছিল।
তারা বলছে, এসব গ্রাহককে বিষয়টি জানানো হবে। তবে পাসওয়ার্ড অন্য কেউ দেখে ফেলেছে এমন কোনো প্রমাণ পেলে তবেই ব্যবহারকারীকে তা বদল করতে বলা হবে।
ফেইসবুকের প্রকৌশলী স্কট রেনফ্রো দাবি করেছেন, তাদের তদন্তে এসব পাসওয়ার্ড অপব্যবহারের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
গ্রাহক তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষায় ব্যর্থতার জন্য এর আগেও কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে ফেইসবুক কর্তৃপক্ষকে।
২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে ১০ কোটির বেশি ফেইসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্যের অপব্যবহারের ঘটনা ফাঁস হয় গত বছর।
ওই খবর প্রকাশের পর যুক্তরাজ্যের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার কার্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাপক চাপের মুখে পড়েন ফেইসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে শুনানির মুখোমুখি হতে হয় তাকে।