ওমিক্রনের দাপট পেরিয়ে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসার মধ্যেই এক দিনে আরও ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে ৩৪ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করে ৪ হাজার ৭৪৬ জন জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
তাতে সংক্রমণের হার দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আগের দিন এই হার ১৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ ছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, টানা তৃতীয় দিনের মতো একদিনে পাঁচ হাজারের কম মানুষের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। আর নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৪ শতাংশের নিচে রয়েছে টানা দুই দিন ধরে।
নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মহামারীর মধ্যে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ১০২ জন। তাদের মধ্যে ২৮ হাজার ৮৭২ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস।
সরকারি হিসাবে গত এক দিনে সেরে উঠেছেন ১১ হাজার ৪১৭ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত ১৭ লাখ ৩ হাজার ৩০৯ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।
সে হিসাবে দেশে এখন সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৮৬ হাজার ৯২১ জন। অর্থাৎ এই সংখ্যক রোগী নিশ্চিতভাবে সংক্রমিত অবস্থায় রয়েছে। তবে উপসর্গবিহীন রোগীরা এই হিসাবে আসেনি।
বাংলাদেশে মহামারীর শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে। করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের দাপট পেরিয়ে এসে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুইশর ঘরে নেমে এসেছিল গত বছরের শেষ দিকে।
এরপর আসে আরেক নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন, নতুন বছরের শুরু থেকে দ্রুত বাড়তে থাকে সংক্রমণ। এক পর্যায়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৬ হাজার ছাড়িয়ে যায়। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ২৮ জানুয়ারি পৌঁছায় ৩৩ শতাংশের রেকর্ড উচ্চতায়।
এরপর সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে, ৪ ফেব্রুয়ারি শনাক্ত রোগীর সংখ্যা নেমে আসে ১০ হাজারের নিচে। গত রোববার তা পাঁচ হাজারের নিচে নামে।
এর আগে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫ হাজারের নিচে ছিল গত ১৫ জানুয়ারি। সেদিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ৩ হাজার ৪৪৭ জন রোগী শনাক্তের খবর জানিয়েছিল।
মহামারীর মধ্যে সার্বিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আর মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫০ শতাংশ।
গত এক দিনে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ৩ হাজার ৪৮৩ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা, যা মোট আক্রান্তের ৭৩ শতাংশের বেশি।
যে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ২১ জন পুরুষ এবং ১৩ নারী। তাদের মধ্যে ২১ জন ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা।
এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের দুইজন, রাজশাহী বিভাগের একজন, খুলনা বিভাগের দুইজন, বরিশাল বিভাগের চারজন, সিলেট বিভাগের দুইজন এবং দুইজন ছিলেন রংপুর বিভাগের বাসিন্দা।
তাদের ২৬ জনের বয়স ৬০ বছরের বেশি, চারজনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর, তিনজনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর এবং একজনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ২০২০ সালের ৮ মার্চ। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত বছরের ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ৫ অগাস্ট ও ১০ অগাস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা।
বিশ্বে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছে ৫৮ লাখের ২৭ হাজারেরও বেশি মানুষ। বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ৪১ কোটি ৩৭ লাখ।