দেশে দিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু দুটোই বেশ কমেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৪ হাজারের নিচে নেমে এসেছে, মৃতের সংখ্যাও নেমে এসেছে ১২০ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, শনিবার সকাল থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ২৪ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে দেশে ৩ হাজার ৯৯১ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
এ নিয়ে দেশে মোট ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ১৯৪ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হল।
গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১২০ জনকে নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ২৫ হাজার ১৪৩।
সরকারি হিসাবে এই সময়ে সেরে উঠেছেন ৭ হাজার ৬৬৬ জন। তাদের নিয়ে এই পর্যন্ত সুস্থের সংখ্যা দাঁড়াল ১৩ লাখ ৫৫ হাজার ৪২১।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এই মুহূর্তে সক্রিয় কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ৭৬ হাজার ৬৩০, যা এক সপ্তাহ আগেও এক লাখের বেশি ছিল।
করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে জুন মাস থেকে রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছিল। মহামারীর দেড় বছরে গত জুলাই হয়ে উঠেছিল সবচেয়ে বিপর্যস্ত মাস।
মাঝ অগাস্টে এসে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি দেখা যাচ্ছে।
কোভিড: শনাক্ত-মৃত্যুতে ভয়াবহতম জুলাই পার
৩ জুলাইয়ের পর শুক্রবার প্রথম দেড়শর নিচে নামে দৈনিক মৃত্যু; শনিবার তা আরও কমে ১২০ জনে নেমে এসেছে।
দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও ২২ জুলাইয়ের পর প্রথম ৬ হাজারের নিচে নেমেছিল শুক্রবার। শনিবার তা এক লাফে ৪ হাজারের নিচে চলে এল।
নমুনা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হারও শনিবার গড় হারের নিচে চলে এসেছে।
জুলাই মাসে যেখানে এই হার ৩০ শতাংশের আশেপাশে ছিল, সেখানে শনিবার ২৩ হাজার ৮৮২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৬ দশমিক ৭১ শতাংশ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
দেশে এই পর্যন্ত ৮৬ লাখ ১৭ হাজার ৮২১টি নমুনা পরীক্ষা করে এই পর্যন্ত শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৯১। আর শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৩।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। গত জুন থেকে রোগীর সংখ্যা হু হু করে বেড়ে ১৪ লাখ পেরিয়ে যায় গত ১৩ অগাস্ট। তার আগে ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। শুক্রবার তা ২৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৫ অগাস্ট ও ১০ অগাস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা।
বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪৪ লাখ ১৬ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ২১ কোটি ৯ লাখের বেশি রোগী।
দেশে গত এক দিনে শুধু ঢাকা বিভাগেই ২ হাজার ১৩৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা দিনের মোট আক্রান্তের অর্ধেকের বেশি। আগের দিনও এ বিভাগে ৩ হাজার ৪৪৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
গত এক দিনে ঢাকা জেলায় দেশের সর্বাধিক ১ হাজার ৫০০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিভাগের নারায়ণগঞ্জে ১০৫ জন এবং গাজীপুরে ২৮৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৩৩২ জন, কক্সবাজারে ১২১ জন, লক্ষ্মীপুরে ১২১ জন এবং চাঁদপুরে ১০০ জন আক্রান্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
অন্য বিভাগগুলোর বিভিন্ন জেলার মধ্যে সিলেটে ১১৩ জন, ১৩৬ জন, খুলনায় ৮৭ জন, এবং ময়মনসিংহে ৬৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
যে ১২০ জন গত এক দিনে মারা গেছে, তাদের ৪০ জনই ঢাকা বিভাগের। মৃতের ২৭ জন ছিল চট্টগ্রাম বিভাগের বাসিন্দা।
ঢাকা বিভাগে গত এক দিনে যে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ২১ জন, অর্থাৎ, অর্ধেকের বেশি ঢাকা জেলার।
চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ২৭ জনের মধ্যে ৪ জন চট্টগ্রাম জেলার, ৫ জন চাঁদপুর জেলার এবং ৭ জন কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা।
এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ৯ জন, বরিশাল বিভাগে ৩ জন, খুলনা বিভাগে ১৫ জন, রংপুর বিভাগে ৭ জন, সিলেট বিভাগে ১৩ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে গত এক দিনে।
মৃত ১২০ জনের মধ্যে ৭৭ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ২৪ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১৪ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৪ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ১০ বছরে কম ছিল।
গত এক দিনে যারা মারা গেছে, তাদের ৬৯ জন ছিল পুরুষ, ৫১ জন নারী। ৯৭ জন সরকারি হাসপাতালে, ২২ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ১ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।