কেনাকাটা কিংবা কোনো বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ডের জুড়ি নেই। আবার নগদ টাকার বিকল্প হিসাবেও ক্রেডিট কার্ডের সুবিধাও অনেক। তবে সুবিধার চেয়ে অসুবিধার দিক রয়েছে। ক্রেডিট কার্ডের সুদের কারণে অতিষ্ঠ ব্যবহারকারীরা। ব্যাংকগুলো ইচ্ছামতো সুদ কষে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনাও মানে না ব্যাংকগুলো।
এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে বারবার নির্দেশনা দিচ্ছে। এবার ক্রেডিট কার্ডের সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে ব্যাংকগুলো ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের কাছ থেকে ২০ শতাংশের বেশি সুদ নিতে পারবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ’ এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ৩ আগস্ট ক্রেডিট কার্ড বিষয়ে একটি নীতিমালা জারি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে বলা হয়েছিল, ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অন্যান্য ঋণের সর্বোচ্চ সুদহারের চেয়ে ৫ শতাংশের বেশি হবে না এবং এই সুদহার কেবল অপরিশোধিত বকেয়া স্থিতির ওপর প্রযোজ্য হবে।
ঐ নীতিমালার নির্দেশনা অনুযায়ী, ক্রেডিট কার্ডে নির্ধারিত সীমার সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ আগাম হিসেবে নগদ উত্তোলন করা যাবে এবং ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে গ্রাহককে কোনো আনসলিসিটেড ঋণ বা অন্য কোনো ঋণ দেওয়া যাবে না।
‘কিন্তু সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কোনো কোনো ব্যাংক উক্ত নির্দেশনা লঙ্ঘন করে ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন প্রকার নগদে উত্তোলনযোগ্য ঋণসুবিধা দিচ্ছে; যা ব্যাংকের ঋণঝুঁকি বৃদ্ধি করছে এবং এ ধরনের ঋণের ওপর ফ্ল্যাট রেটে অযৌক্তিকভাবে বেশি সুদ আরোপ/আদায় করছে; যা গ্রাহকের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করছে।’
এছাড়া কোনো কোনো ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডের পরিশোধ না করা বিলের ওপর লেনদেনের তারিখ থেকেই সুদ আরোপ এবং পরিশোধ না করা বিলের বিপরীতে ‘প্রগ্রেসিভ রেটে’ বিলম্ব ফি আদায় করছে বলেও অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংক ও ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুদের হারই ক্রেডিট কার্ডের একমাত্র ব্যয় নয়। সময়মতো মাসিক মূল্য পরিশোধ না করলে জরিমানা গুনতে হয়। এজন্য ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার বেশ বিপজ্জনক হয়ে ওঠে সময়জ্ঞান না থাকলে। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে নগদ টাকা তুললে গুনতে হয় বাড়তি ফি।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী জানিয়েছেন, ব্যাংকের মার্কেটিং প্রতিনিধিদের অনুরোধ ও তাদের মিষ্টভাষী প্রচারণায় ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক হবার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। ব্যাংকগুলোর মার্কেটিং পলিসির কাছে হেরে গিয়ে কার্ড নিয়েছেন অনেক গ্রাহক। ব্যাংক তাদের সঙ্গে ‘শর্ত প্রযোজ্য’ দিয়ে ভয়াবহ প্রতারণা করছে।
ব্যাংকগুলো কাগজে করলে অনেক কম সুদ নেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নেওয়ারও প্রমাণ পাওয়া গেছে। ব্যাংকের এ প্রতারণা সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যাংকার, জন প্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা— কেউই বাদ পড়েন না। এদের মধ্যে যারা একটু সচেতন, তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হচ্ছেন। বাকিরা এ ক্রেডিট কার্ডের ফাঁদে অর্থদণ্ড দিতে বাধ্য হচ্ছেন।