বিতরণের জটিল শর্তের কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ দিতে পারছে না দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।
ব্যাংকাররা উদ্যোক্তাদের চাহিদার কথাটি মাথায় রেখে শর্ত শিথিলের আহ্বান জানালেও প্রণোদনার অর্থ ছাড়ে ব্যাংকগুলোকে আরও আন্তরিক হওয়ার আহবান জানিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের কারণে চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া সাধারণ ছুটির কারণে থেমে গেছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের চাকা। পুঁজি ও টিকে থাকার সক্ষমতা কম থাকায় কোভিড-১৯ এর সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের ব্যবসায়।
তবে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য সরকার চলতি বছরের এপ্রিল মাসের তৃতীয় সপ্তাহে সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। কিন্তু তিন মাসে এ খাতের ব্যবসায়ীদের মাত্র ৫১৮ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। যার মধ্যে বিতরণ হয়েছে মাত্র ২০৬ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক নাজিম হাসান সাত্তার বলেন, সোনালী ব্যাংক মাত্র দুই লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। অগ্রণী ব্যাংক বিতরণ করেছে মাত্র ছয় লাখ টাকা। তার মানে সরকারি ব্যাংকগুলো সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। কেউ কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না। ঋণ বিতরণের ইচ্ছার বিষয়টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে শাখা পর্যায়ে পৌঁছে দিতে হবে। তা না হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা সহজে ঋণ পাবেন না। তবে ব্যাংকাররা বলছেন বিতরণের শর্তের কারণে অনেক ক্ষেত্রে চাইলেও ঋণ বিতরণ করা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের শর্ত অনুযায়ী মোট ঋণের অর্ধেক বা ৫০ শতাংশ দিতে হবে উৎপাদনশীল খাতে, ৩০ শতাংশ সেবাখাত এবং বাকি ২০ শতাংশ দিতে হবে ট্রেডিং ব্যবসায়। অথচ ট্রেডিং ব্যবসায়ীদের ঋণের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি।
এ বিষয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের হেড অব এসএমই সৈয়দ আব্দুল মোমেন বলেন, আমরা যদি শিল্পনীতিতে দেখি সুপারশপগুলোকে সেবাখাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু ছোট মুদি দোকান ও একই ধরনের সেবা দিচ্ছে তারাও কিন্তু রিটেইলার খুচরা বিক্রেতা। এদেরকে ট্রেডিং ব্যবসায় ঢোকানোর কারণে কটেজ, মাইক্রো ও এসএমই খাতের একটি বড় অংশ ব্যাংকের ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এটা আমাদের একটা বড় বাধা যে কারণে আমরা ঋণ বিতরণ করতে পারছিনা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শর্তে আরো বলা হয়েছে, প্রণোদনা ঋণ দেওয়া যাবে শুধুমাত্র চলতি মূলধন হিসেবে। অথচ বেশিরভাগ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মেয়াদি ঋণ নিতে বেশি আগ্রহী বলে দাবি করেছে ঋণ বিতরণকারী ব্যাংকগুলো।
এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের হেড অব এসএমই সঞ্জীব কুমার দে বলেন, পলিসিতে বলা আছে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় নেওয়া ঋণ সুদসহ এক বছরের মধ্যে ফেরত দিতে হবে। আমার কাছে মনে হয়েছে অধিকাংশ গ্রাহকই এক বছর পরে ঋণের টাকা ফেরত দিতে পারবেন না, ব্যর্থ হতে পারে। প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এক বছরের জন্য চলতি ঋণের কথা বলা হয়েছে, যদি মেয়াদী ঋণের কথা বলা হতো তাহলে ব্যাংক এবং গ্রাহক উভয়ই কিছু সুবিধা পেত।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবু ফারাহ মোহাম্মদ নাসের বলেন, চলতি মূলধনের একটা প্রকৃতি হল গ্রাহক যতবার ইচ্ছা তুলতে পারবেন এবং যতবার ইচ্ছা জমা দিতে পারবেন। তারমানে গ্রাহক একসঙ্গে উত্তোলন করে বারবার টাকা জমা দিতে পারছেন।
এছাড়াও আরও কিছু যুক্ত করলে যদি গ্রাহকের সুবিধা হয়, তাহলে আমরা আইনে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখব। তারপরও প্রণোদনার অর্থ ছাড়ে ব্যাংকগুলোকে আরো আন্তরিক হতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারী খাতে ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ১৯ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। একজন উদ্যোক্তা নিতে পারেন সর্বোচ্চ ৭৫ কোটি টাকার ঋণ।