কয়লায় পোড়ানো খাবারে ঝুঁকি

grilled-foods-reuters-250621-01

গ্রিল্ড মাংস, শিক কাবাব বা কয়লায় পোড়ানো খাবার থেকে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

এক কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, অনেক খাবারই আছে যা পুড়িয়ে খেতে ভালো লাগে। আর তা যদি হয় কয়লায় পোড়ানো তাহলে তো কথাই নেই।

তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে উচ্চ তাপমাত্রায় ও কয়লায় পুড়িয়ে রান্না করা খাবার স্বাস্থ্যকর নয়। তবে সেটা শুধু মাংসের ক্ষেত্রে। বিভিন্ন ধরনের সবজিও পুড়িয়ে খাওয়া হয়, যা ক্ষতিকর নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘দি ন্যাশনাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউট’য়ের তথ্যানুসারে কয়লা ক্যান্সারজনক নয়। তবে কয়লা দিয়ে যে খাবার রান্না করা হচ্ছে সেটা হতে পারে ক্ষতিকর।

কয়লা দিয়ে রান্না করার ফলে উচ্চ তাপমাত্রা তৈরি হয়, এটা হচ্ছে প্রথম ঝুঁকি। দ্বিতীয় ঝুঁকি হল কয়লা থেকে প্রচুর ধোঁয়া বের হয়। আর এই দুই কারণ হতে পারে ক্যান্সারজনক। তবে তা শুধু মাংসের ক্ষেত্রে।

যে কোনো মাংস যখন উচ্চ তাপমাত্রায় প্যান ফ্রাই কিংবা গ্রিল করা হয় তখন দুই ধরনের রাসায়নিক পদার্থ গঠিত হয়। একটি হল ‘হেটেরোসাইক্লিক অ্যামিনিস (এইচসিএএস) এবং অন্যটি হল ‘পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন্স (পিএএইচএস)।

গবেষণাগারে পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই রাসায়ানিক পদার্থগুলো পরিবর্তনশীল। অর্থাৎ এগুলো ডিএনএ’তে পরিবর্তন ঘটাতে পারে, যা ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

কয়লায় পোড়ানো বা গ্রিল্ড মাংসের ওপর পুড়ে যাওয়া কালচে অংশটির অর্থ হল সেখানে ‘এইচসিএএস’ তৈরি হয়েছে; যা উচ্চ তাপামাত্রার কারণে মাংসে থাকা ক্রিয়েটিনের সঙ্গে অ্যামিনো অ্যাসিডের বিক্রিয়ার ফলাফল।

মাংস ও সামুদ্রিক খাবারে প্রাকৃতিকভাবেই ক্রিয়েটিন থাকে। যে কারণে বলা হয়, গ্রিল্ড করা সবজি ও ফল খাওয়া নিরাপদ।

আবার মাংস পোড়ালে রস গড়িয়ে কয়লায় ও চুলার গরম ধাতব অংশে পড়ে। যা তৈরি করে আগুনের শিখা ও ধোঁয়া, ফলে তৈরি হয় ‘পিএএইচএস’। আর এই রাসায়নিক পদার্থ রান্না করা মাংসে লেগে থাকে।

মনে রাখতে হবে- যারা নিয়মিত ধূমপান করেন, বেশিরভাগ সময় গাড়ির ধোঁয়া ও কাঠ বা বিভিন্ন জিনিস পোড়ানোর ধোঁয়ার সংস্পর্শে আসেন তারা নিয়মিত ‘পিএএইচএস’য়ের সান্নিধ্য পাচ্ছেন।

‘দি ন্যাশনাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউট’ আরও জানায়- যারা অতি মাত্রায় ভাজা, পোড়া বা বার্বিকিউ করা মাংস খান তাদের কোলোরেক্টাল, প্যানক্রিয়েটিক এবং প্রোস্টেইট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

ঝুঁকি কমানোর উপায়

অতিরিক্ত খাওয়ার যেমন নিরাপদ নয়। তেমনি মাঝেমধ্যে খাওয়ার ক্ষেত্রে পোড়ানো মাংসের এই ঝুঁকি কামানোর উপায়ও রয়েছে।

বার বার উল্টানো

মাংস পোড়ানোর ক্ষেত্রে বার বার উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দিতে হবে আগুনের দিকে। তাহলে ‘এইচসিএএস’ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কমবে। পাশাপাশি গ্রিল করার সময় যতটা সম্ভব কম তাপ ব্যবহার করার চেষ্টা করতে হবে।

পোড়া কালো অংশ উঠিয়ে ফেলা

যদি মাংসে পোড়া কালচেভাব আসে তবে সেটা উঠিয়ে ফেলতে হবে। তাহলে ‘এইচসিএএস’-এর সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা কমবে। পাশাপাশি মাংসের রসালো অংশ যতটা সম্ভব পরিহার করার চেষ্টা করতে হবে যাতে ‘পিএএইচ’-এর হাত থেকে বাঁচা যায়।

মাংসের পরিবর্তে মাছ গ্রিল করা

‘রেড মিট’ ও প্রক্রিয়াজাত মাংস যেমন- সসেজ এগুলো এমনিতেই উচ্চমাত্রায় চর্বিযুক্ত। তাই পোড়ানোর ফলে এই ধরনের মাংস থেকে চর্বি গলে কয়লার ওপর পড়ে অতিরিক্ত ধোঁয়া তৈরি হয়, যার ফলাফল ‘পিএএইচ’। বলার অপেক্ষা রাখে না চর্বিযুক্ত মাংসের চাইতে চর্বিহীন মাংস যেমন- মুরগি বা মাছ পোড়াতে কম সময় লাগে। যেখানে সম্পূর্ণভাবে ‘এইচসিএএস’ এর মাত্রা দূর করা যাচ্ছে না সেখানে কমানোর চেষ্টা করাই মঙ্গল।

আর মাংসের পরিবর্তে গ্রিল্ড করা সবজি বা ফল খাওয়া যেতে পারে, যা থেকে এই দুই রাসায়নিক তৈরি হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।

Pin It